শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার তাৎপর্য ( Feature of Child Centric Education )

“💠 শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার তাৎপর্য ( Feature of Child Centric Education ) : জ্ঞান – বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলি দর্শনশাস্ত্র থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছে । তাই দর্শনশাস্ত্র থেকেই শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যায় । শিক্ষাবিজ্ঞান দর্শনশাস্ত্রের বিভিন্ন দিকগুলি একত্রিত করে । তাই আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানে দার্শনিক , সামাজিক , মানসিক , নৈতিক প্রভৃতি বিভিন্ন দিক থেকে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

🔷 ভারতীয় দার্শনিকগণ শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার স্বাধীনতার ধারণাটি সমর্থন করে বলেন যে , শিশু স্বতঃপবিত্র , অবাধ স্বাধীনতার ভিতর দিয়েই তার ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশসাধন সম্ভব ।

🔷 প্রকৃতিবাদীরা মনে করেন শিশুর বিকাশ শিশুর প্রকৃতিকে ভিত্তি করেই রূপ পায় যা শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য । প্রয়ােগবাদী দার্শনিকগণ শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা , সক্রিয়তা , যৌথ কর্ম , খেলাধুলা , সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিকে পূর্ণ সমর্থন জানান ।

🔷 মনােবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার ধারণাকে শক্তিশালী করেছে । শিশুর বিকাশে সমাজের গুরুত্ব স্বীকার করলেও মনােবিজ্ঞান , ব্যক্তি – শিশুকেই আগে স্মরণ করে । শিশুশিক্ষার একই কথা বলে । এছাড়া মনােবিজ্ঞান শিশুর বিভিন্ন দিকের বিকাশ , স্মৃতি , বুদ্ধি , মনােযােগ , শিখন সম্পর্কে মূল্যবান তত্ত্ব , তথ্য সরবরাহ
করে । মনােবিজ্ঞান শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষাকে আরও উন্নত করে তুলতে সাহায্য করেছে ।

🔷 জীববিদ্যা শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় নানা প্রকার খেলা , বালি মাটি দিয়ে বাড়ি তৈরি করা , অঙ্কন , শিল্পকর্ম ইত্যাদিকে পূর্ণ সমর্থন করে । এইসব খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শিশুরা আমাদের পূর্বপুরুষদের আচরণ পুরাবৃত্তি করে । তাদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটে ।

🔷 সমাজবিদ্যাও শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় । সমাজতান্ত্রিকদের মতে , শিক্ষা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া । শিক্ষারূপ সমাজ প্রক্রিয়ায় এমন সব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযােগ থাকবে যার ফলে শিক্ষার্থী সমাজ – সংস্কৃতি – কৃষ্টির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে । পাশাপাশি পরিবার , বিদ্যালয় ও কমিউনিটির মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে , পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সম্পর্কে সচেতন হয় এবং নিজ – নিজ দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনে সক্রিয় হয় । শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় এই বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করে ।

🔷 উপরিউক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে আমরা শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার গুরুত্ব এবং তাৎপর্য সহজেই অনুমান করতে পারি । অবশ্য নানা কারণে আজও আমাদের দেশে শিক্ষা এখনও শিশুর জীবনের সঙ্গে সমার্থক হয়ে ওঠেনি । শিক্ষার্থীর মানসিক গঠন অনুযায়ী পাঠক্রমকে নির্ণয় করতে পারিনি । শিখন পদ্ধতিতে বােধগম্যতার চেয়ে মুখশ্ববিদ্যার আধিক্য বেশি । শৃঙ্খল এখানে কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় । শিক্ষার উপকরণের অভাবে শিক্ষা প্রক্রিয়া অবৈজ্ঞানিক , অবাস্তব ও অনুন্নত ব্যবস্থাপনা দ্বারা পরিচালিত হয় । দূষণ , হতাশা , অপরাধপ্রবণতা ক্রমে ক্রমে শিক্ষার্থীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলে । তথাপি আমরা সেই দিনের পদধ্বনির আশায় অপেক্ষা করে আছি যেদিন শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে ।

“