⏹ পরিবেশবিদ্যার আলােচনার পরিধি ও প্রয়ােজনীয়তা কী ?
🔰 পরিবেশবিদ্যার আলােচনার পরিধি পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ , জীবজ পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশকে এক সূত্রে বেঁধে রেখেছে । পরিবেশবিদ্যার আলােচনা থেকেই আমরা জানতে পারি পরিবেশের উদ্ভব ও বিবর্তন কীভাবে ঘটেছে , পরিবেশের বর্তমান সমস্যাগুলি কী , দুর্যোগ ও বিপর্যয় মানুষ ও পরিবেশকে কীভাবে বিপর্যস্ত করে ।
🔰 পরিবেশ সম্পর্কে জানার গুরুত্ব অপরিসীম । পরিবেশের জ্ঞান মানুষকে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্বন্ধে সঠিক ধারণা দেয় । বিজ্ঞানসম্মত ও সামাজিকভাবে মানুষকে সচেতন করে তােলে ।
🔰 পরিবেশ সম্পর্কে পাঠ নিলে মানুষ জানতে পারে পৃথিবী তার একার নয় । এই পাহাড় , নদী , সাগর , মাটি অর্থাৎ যা কিছু প্রকৃতির দান , তার সব কিছুতেই মানুষের যেমন অধিকার , তেমনি গাছপালা , পশু – পাখিরও সমান অধিকার । এই ধ্রুব সত্যকে আবার নতুন করে জানার ও উপলব্ধি করার জন্যই পরিবেশের পাঠ একান্ত জরুরি ।
🔰 পরিবেশ পাঠের প্রয়ােজনীয়তা হল :
( 1 ) পৃথিবীর পরিবেশ কীভাবে তৈরি হয়েছে , তার উপাদান কী , এবং ওই উপাদানগুলি কীভাবেই বা নিজেদের মধ্যে কাজ করে সে সম্বন্ধে ধারণা করা যায় ।
( 2 ) এ পৃথিবীকে কেন জীবজগতের একমাত্র বাসভূমি বলা হয় সে ব্যাপারে জানা যায় ।
( 3 ) পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে ধীরে ধীরে কীভাবে জীবজগতের উদ্ভব হয়েছে , সে ব্যাপারে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা তৈরি হয় ।
( 4 ) পরিবেশ পাঠের মধ্যে দিয়ে বাস্তুতন্ত্র সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক ধারণা জন্মায় । বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে পুষ্টির জোগান , শক্তির প্রবাহ এবং পুষ্টির জোগান অনুসারে প্রজাতির সংখ্যা সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা বুঝতে পারা যায় ।
( 5 ) সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ কীভাবে পরিবেশের উপাদানগুলিকে কাজে লাগিয়ে নিজের আর্থসামাজিক উন্নতি করেছে , সে সম্বন্ধেও অবগত হওয়া যায় ।
( 6 ) কৃষি , শিল্প , বাণিজ্য , পরিবহন ও যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষের জন্য খাদ্য , পুষ্টি , স্বাস্থ্য , বাসস্থান , সুরক্ষা প্রভৃতির ব্যাপারে অর্থাৎ সামাজিক পরিবেশের বিষয়ে জানা যায় ।
( 7 ) পরিবেশ সম্বন্ধে পাঠ নিলে পরিবেশের সঙ্গে মানুষের অর্থনৈতিক প্রগতির হার সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা সে সম্বন্ধেও ধারণা জন্মায় । ফলে সুস্থায়ী বা বহতা উন্নয়নের সপক্ষে জনচেতনার উন্মেষ হয়।
( 8 ) প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি কেন সৃষ্টি হয় , তাদের নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি কী এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের কত ক্ষতি করে , তা বুঝতে পারা যায় ।
( 9 ) মানুষ দূষণের মাধ্যমে পরিবেশের কতটা ক্ষতি করে , তার মাত্রা ও নিয়ন্ত্রণের উপায় জানার জন্যও পরিবেশ বিষয়ে পাঠ নেওয়া দরকার । বিভিন্ন রকমের দূষণ , যেমন— বায়ুদূষণ , জলদূষণ , শব্দদূষণ ইত্যাদি দুর্যোগগুলি সম্পর্কে পরিবেশ বিদ্যা থেকেই জানা যায় ।
( 10 ) পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য এবং যে মানুষ পরিবেশের ক্ষতি করে , সেই মানুষকে তার অপরাধের জন্য কী শাস্তি দেওয়া যায় , সেই আইনগত ব্যবস্থাগুলি জানার জন্য পরিবেশ আইন সম্পর্কে পাঠ নিতে হয় । পরিবেশ বিজ্ঞান একাজে সাহায্য করে ।
( 11 ) জনস্বাস্থ্যের মান কেমন , কোন কোন কারণের জন্য জনস্বাস্থ্যের মান হ্রাস পায় , ও জনস্বাস্থ্যের মান উন্নয়ন করার জন্য কী কী বিজ্ঞানসম্মত পন্থা অবলম্বন করা যায় , সেগুলি জানার জন্য পরিবেশ পাঠের প্রয়ােজন আছে ।
( 12 ) এই পৃথিবীকে মানুষের বাসযােগ্য কার জন্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিবেশকে সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে যে জনসচেতনতার প্রয়ােজন , সেই সার্বিক চেতনা তৈরি করার ব্যাপারে পরিবেশ পাঠের কোনাে বিকল্প নেই ।