“⭐ মৌলিক শব্দ : তদ্ভব শব্দ ⭐
■ যে সকল সংস্কৃত শব্দ প্রাকৃত অপভ্রংশের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে , তাদের বলা হয় তদ্ভব শব্দ ।
● হস্ত ( সংস্কৃত ) > হথ্থ ( প্রাকৃত ) > হাত ( বাংলায় ) ।
● লক্ষণীয় যে , সংস্কৃত ‘ হস্ত ’ শব্দ প্রাকৃতে পরিবর্তিত হয়ে ‘ হথ্থ ’ , পরে বাংলায় হয়েছে ‘ হাত ’ ।
● তৎ ’অর্থাৎ , সেই , বা সংস্কৃত , ‘ ভব’ শব্দের অর্থ জাত বা উদ্ভূত ।
সুতরাং ‘তদ্ভব’ শব্দের অর্থ হল সংস্কৃত থেকে জাত বা উদ্ভূত শব্দ ।
● প্রাকৃত পর্যায়ে পরিবর্তিত হয়েছে বলে ওদের প্রাকৃতজ শব্দও বলা হয় । এরকম দৃষ্টান্ত —
১. কৃষ্ণ (সংস্কৃত) > কন্হ (প্রাকৃত) > [ কান > কানাই (বাংলা) ]
২. ভক্ত (সংস্কৃত) > ভত্ত (প্রাকৃত) > ভাত (বাংলা)
৩. কার্য (সংস্কৃত) > কাজ্জ (প্রাকৃত) > কাজ (বাংলা)
৪. কাষ্ঠ (সংস্কৃত) > কাট্ঠ (প্রাকৃত) > কাঠ (বাংলা)
৫. ষোড়শ (সংস্কৃত) > ষোলহ (প্রাকৃত) > ষোলো (বাংলা)
৬. চন্দ্র (সংস্কৃত) > চন্দর (প্রাকৃত) > চাঁদ (বাংলা)
■ আরো কিছু দৃষ্টান্ত —
ব্যাঘ্র > বাঘ ,
ভাণ্ড > ভাড় ,
মিষ্ট > মিঠা ,
দীপশলাকা > দিয়াশলাই ,
বৎস > বাছা ,
একাদশ > এগারাে ,
শঙ্খ > শাঁখ ,
মণ্ডল > মােড়ল ,
লৌহ > লােহা ,
দন্ত > দাঁত ,
ব্রাম্মণ > বামুন ,
কুম্ভকার > কুমার ,
বধু > বউ ,
সখী > সই ,
গােস্বামী > গোঁসাই ,
দুগ্ধ > দুধ ,
কর্মকার > কামার ,
কঙ্কালিকা > কাঁকাল ,
কঙ্কর > কাঁকর ,
কঙ্কণ > কাঁকন ,
নক্তক > নেকড়া , ন্যাকড়া ,
নকুল > নেউল ,
দদ্রু > দাদ ,
দণ্ড > দাঁড় ,
দক্ষিণ > দখিন ,
প্রতিষ্ঠা > পৈঠা ,
ত্রিংশৎ > তিরিশ ,
চক্র > চাকা ,
ক্ষুদ্র > খুদ ,
খটিকা > খড়ি ,
বাতুল > বাউল ,
বল্কল > বাকল ,
বহিত্রা > বৈঠা ,
সামন্তপাল > সাঁওতাল ,
তাম্র > তামা ,
ইক্ষু > আখ ,
চন্দ্র > চাঁদ ,
ষণ্ড > ষাড় ,
দেবর > দেওর ,
মস্তক > মাথা ,
অর্ধ > আধ ,
হরিদ্রা > হলদে ,
ভদ্রক > ভালাে ,
পদ > পা ,
হংস > হাঁস ,
মৃত্তিকা > মাটি , ছদি > ছই ,
সর্প > সাপ ,
বংশ > বাঁশ ,
গাত্র > গা ,
পক্ষী > পাখি ,
মক্ষিকা > মাছি ,
গৃহ > ঘর ,
গুম্ফ > গোঁফ ,
মধ্য > মাঝ ,
স্বর্ণ > সােনা ,
উষ্ণানন > উনান ,
ধর্ম > ধাম ,
পিত্তল > পিতল ,
পাত্র > পাতা ,
বন্ধ্যা > বাঁজা ইত্যাদি ।
● প্রত্যেক ভাষাভাষী লােকের আত্তীকরণের ক্ষমতা আছে — কারও বেশি কারও বা কম । প্রাচীন আর্য ভাষাতেও এই আত্তীকরণ ঘটেছিল অর্থাৎ , ভারতীয় বা অভারতীয় জাতির কিছু কিছু শব্দ সংস্কৃত ভাষায় গৃহীত হয়েছিল । পরবর্তীকালে ওই জাতীয় শব্দও তদ্ভব শব্দের মতাে প্রাকৃত ও অপভ্রংশের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে । একেই রূপান্তরিত তদ্ভব বলা হয় ।
● যেমন —
দ্রম্ম ( Drakhme : গ্রিক ) > দ্রম্য ( সং ) > দন্ম ( প্রা ) > দাম ( বাং ) ,
পিল্লৈ ( তামিল ) > পিল্লিক ( সং ) > পিলুঅ ( প্রা ) > পিলা , পিলে ( বাং ) ,
কুদ্দাল ( অস্ট্রিক ) > কোদাল ,
মুদ্রায় ( পারসিক ) > মুদ্র ( সং ) > মুদ্দ ( প্রা ) > মুদ্রা ইত্যাদি ।
● এই প্রসঙ্গে অস্ট্রিক , দ্রাবিড় ও মােঙ্গল গােষ্ঠী থেকে বাংলা ভাষায় আগত তদ্ভব শব্দ উল্লেখ্য :
অস্ট্রিক : তাম্বলিক > তামলী , ঢক্ক > ঢাক , ঢুক্কুই > ঢােকে ।
দ্রাবিড় : উলুঅ > উলু ।
মােঙ্গল : ঠক্কুর > ঠাকুর ।