মনোযোগের প্রকৃতি

📚 মনোযোগের প্রকৃতি ( Nature Features of Attention ) :

( 1 ) মনােযােগ হল একটি কেন্দ্রানুগ প্রক্রিয়া : টিচেনারের মতে , চেতনার দুটি স্তর কেন্দ্রীয় চেতনার স্তর ও প্রান্তীয় চেতনার স্তর । বস্তু যখন কেন্দ্রীয় চেতনার স্তরে অবস্থান করে তখন বস্তু সম্পর্কে আমরা সচেতন হই অর্থাৎ মনােযােগী হই । বস্তু যখন প্রান্তীয় চেতনার স্তরে থাকে তখন বস্তুকে আমরা প্রত্যক্ষ করি না । কিন্তু বস্তু সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকি না । চেষ্টা করলে এই স্তরের বস্তুকে আমরা চেতন স্তরে নিয়ে এসে প্রত্যক্ষ করতে পারি অর্থাৎ মনােযােগী হতে পারি ।

( 2 ) মনােযােগ একটি নির্বাচনধর্মী প্রক্রিয়া : উডওয়ার্থ , ফেল্টা প্রমুখ ব্যবহারবাদীরা মনােযােগের এই বৈশিষ্ট্যের ওপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন । আমাদের দৃষ্টির সম্মুখে অসংখ্য বস্তু ছড়িয়ে আছে । কিন্তু কোনাে বস্তুকে চেতন স্তরে নিয়ে আসার পূর্বে বস্তুগুলির মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট বস্তু বেছে নিতে হয় ।

( 3 ) পরিবর্তনশীল মনােযােগর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য : একটি নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি ইচ্ছা সত্ত্বেও প্রাকৃতিক নিয়মে অধিকক্ষণ মনােযােগ দেওয়া যায় না । মনােযােগ পার্শ্ববর্তী অন্য বস্তুতে চলে যায় । পরীক্ষায় দেখা গেছে , প্রতি দুই সেকেন্ড অন্তর এটা ঘটে । মনােযােগের এই পরিবর্তনশীলতার জন্য অবশ্য বাস্তবক্ষেত্রে কোনাে ক্ষতি হয় না । কারণ এই সময়টি এত অল্প যে , সামগ্রিকভাবে মনােনিবেশের কোনাে অসুবিধা হয় না । এই পরিবর্তনশীলতার কারণ এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি । অনুমান করা হয় ইন্দ্রিয়গুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতেই এটি রক্ষাকবচের কাজ করে ।

( 4 ) মনোেযােগের চঞ্চলতা মনােযােগের আর – একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য : কোনাে বস্তুর প্রতি গভীর মনােযােগ দেবার সময় দেখা যায় কিছু সময় অন্তর মনােযােগ অন্তর্হিত হয় । আবার ফিরে আসে । মনােযােগের এই বৈশিষ্ট্যকে মনােযােগের চঞ্চলতা বলা হয় । এই বৈশিষ্ট্যকে পরিমাপ করার জন্য ‘ Mason disc ‘ নামে একটি যন্ত্র ব্যবহার করা হয় । পরীক্ষায় দেখা গেছে ব্যক্তিভেদে এই চলতা 8–12 সেকেন্ড অন্তর ঘটে ।

( 5 ) একই সঙ্গে কতকগুলি বস্তুর প্রতি আমরা মনোেযােগ দিতে : পারি তার ওপর বহু পরীক্ষা হয়েছে । মুহূর্তমাত্র দেখে বা শুনে ( ¹/ joo সেকেন্ড থেকে l ¹/ s সেকেন্ড ) ব্যক্তি যতগুলি বস্তুর প্রতি মনােযােগ দিতে পারে তাকেই মনােযােগের পরিসর বলা হয়।

Tachistoscope নামক যন্ত্রের সাহায্যে মনােযােগ পরিসর পরিমাপ করা যায় । দেখা গেছে মনােযােগের পরিসর 4 থেকে 6 টি শব্দ বা সংখ্যা । আরও দেখা গেছে । এককভাবে বস্তুর প্রতি মনােযােগের পরিবর্তে যদি কতকগুলি বস্তুকে দল হিসাবে দেখা হয় তাহলে 4 থেকে 5 টি দলের প্রতি মনােযােগ দেওয়া সম্ভব । একে গ্রুপিং ( Group ing ) বা চাংকিং ‘ বলে ।