ভাষার বিকাশ

📚 ( iii ) Language development ( ভাষার বিকাশ ) : শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে আর – একটি গুরুতর সমস্যা হল অন্যের ভাষা বুঝতে না পারা । মানুষ সাধারণভাবে যে সমস্ত দক্ষতা অর্জন করে তার মধ্যে অন্যতম জটিল একটি হল ভাষাগত দক্ষতা । এই ভাষাগত দক্ষতার উপকরণের মধ্যে অন্যতম হল ধারণা গঠন ।
দৃশ্যমান যে – কোনাে বস্তু বা ক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা গঠন যত সহজ , বিমূর্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে তা ঠিক ততটাই কঠিন । বাক্যের বিশেষ্য , বিশেষণ , ক্রিয়াপদগুলি যত সহজে বােঝানাে যায় , অব্যয় ও সর্বনাম পদগুলি তত সহজে বােঝানাে যায় না । কারণ বিশেষ্য , বিশেষণ ও ক্রিয়াপদের দ্বারা দৃশ্যমান গুণের প্রকাশ হয় , আর অব্যয় পদের দ্বারা বিমূর্ত ভাব প্রকাশিত হয় ।

🧾 ভাষার বিকাশের ক্ষেত্রে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা প্রাথমিকভাবে পাঠ ( reading ) – এর উপর নির্ভরশীল । অর্থাৎ কোনাে একটি বিষয় পড়তে পড়তেই সেই ভাষা সম্পর্কে শিক্ষার্থীর ধারণা গঠন হয় । এইভাবে পাঠের অভিজ্ঞতা ও তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা — এই দুইয়ের সংমিশ্রণে এক জটিল প্রক্রিয়ায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুর ভাষার বিকাশ ঘটে ।
এ ছাড়া বহুশ্রুত কোনাে একটি বিষয়ের সঙ্গে তাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতার মিশ্রণ ঘটিয়ে ভাষার ব্যাকরণ সম্পর্কে তাদের ধারণা গঠিত হয় । এক্ষেত্রে একটি কার্যকারী নীতি হল সান্নিধ্যের নীতি ( Contiguity ) । এই নীতির মূল বক্তব্য হল যদি যে – কোনাে দুটো জিনিস সবসময় একসঙ্গে উপস্থাপন করা হয় তবে , প্রথমটির একক উপস্থাপন সবসময়ই দ্বিতীয়টির কথা মনে করিয়ে দেয় । বিশেষত একবচন ও বহুবচন , লিঙ্গ , সমধর্মী শব্দ , বিপরীত শব্দ ইত্যাদি বিষয় বােঝানাের ক্ষেত্রে এই নীতি বেশি কার্যকারী ।

🧾 ওষ্ঠপঠনের সাহায্যে এত সহজে এই পার্থক্যগুলি বােঝানাে যায় না । তাই বর্তমানে শ্ৰবন প্রতিবন্ধী শিশুদের ভাষার বিকাশ ঘটানাের জন্য যুক্তিগ্রাহা এবং দৃশ্যমান পদ্ধতির সামঞ্জস্য ঘটিয়ে অনেক নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে ।

🧾 এর মধ্যে অতি পরিচিত পদ্ধতি হল Fitzgerald Key পদ্ধতি । কোনােরকম যান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া সাধারণভাবে কিছু ভাষার শিক্ষার পর শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের আরও উন্নত ভাষা শেখানাের জন্যে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় । এখানে মূলত নির্দিষ্ট কিছু প্রতীক ও পূর্বগঠিত বাক্যের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের সামনে “ কে ” , “ কী ” , “ কত ” এবং “ কোথায় ? ” — এই চারটি প্রশ্নের ধারণা দেওয়া হয় । এই চারটি প্রশ্নই হল এই পদ্ধতির মূল বিষয় । এর সাহায্যে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে কোনাে বাক্যের ব্যাকরণ সমর্থিত ধারণা গঠন করতে শেখে এবং ধীরে ধীরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করতে পারে ।