ভাইগটস্কির তত্ত্বে তিনটি ধারণা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ—

“ ভাইগটস্কির তত্ত্বে তিনটি ধারণা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ—

( ক ) অর্থের ( Meaning ) বিশ্লেষণ এবং মানুষের মানসিক মিথস্ক্রিয়ার বিকাশ এর
প্রভাব । অর্থ বলতে এখানে নিছক শব্দ বা চিন্তার ব্যাখ্যা বােঝায় না । এটা হল মানুষের সাংকেতিক অভ্যন্তরীণ গঠন । তিনি শিশুদের অর্থ-তৈরির উপর বিশ্লেষণ ভিত্তিক অধ্যয়ন করেছেন । শিশুদের মধ্যে প্রথম বৎসরের শেষের দিকে স্বতঃস্ফূর্ত Speech তৈরি হয় । তিনি মনে করেন স্বতঃস্ফূর্ত speech- এর সংগঠন Speech এবং চিন্তনের মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে যা অন্যান্য পরিবর্তনকে বুঝতে সাহায্য করে ।

( খ ) ভাইগটস্কি তত্ত্বের প্রধান বিষয় হল ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া এবং শিখনের সামাজিক , প্রক্রিয়ার মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা । শিশুর সামাজিক বিকাশ তার প্রত্যক্ষণ , অভিজ্ঞতা , বােধগম্যতা এবং পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার স্মৃতির উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে । নির্দিষ্ট বয়স অনুযায়ী ব্যক্তি শিশু এবং সমাজের সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একেই তিনি নির্দিষ্ট বয়সে বিকাশের সামাজিক পরিস্থিতি ( Social situaion of development ) হিসেবে উল্লেখ করেছেন ।

ভাইগটস্কি মনে করেন , শিশু সামাজিক পরিস্থিতির একটি অংশ এবং শিশুর সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক ও পরিবেশের সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক নির্ভর করে শিশুর অভিজ্ঞতা ও তার কার্যাবলির উপর । পরিবেশের শক্তিসমূহ শিশুকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং এ সম্পর্কে শিশু সচেতন । শিশু সর্বদা তার বয়স অনুযায়ী সচেতনভাবে ব্যক্তিত্বকে পুনর্গঠন করে ।

এই পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শিশুর বিবেক এবং তার সামাজিক অস্তিত্বের মধ্যে এক নতুন সম্পর্ক গড়ে তােলে যার ফলে তার ব্যক্তিত্ব নতুনভাবে সংগঠিত হয় । এর অর্থ হল শিশু যখন সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে তখন তার অর্থ তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায় । ভইগটস্কি বিশ্বাস করেন যে , শিশুর জন্ম সময় থেকে সব অভিজ্ঞতা সমাজ দ্বারা প্রভাবিত হয় ।

এই সামাজিক প্রভাব শিশুর প্রত্যক্ষণ , স্মৃতি , প্রাক্ষোভিক প্রক্রিয়া এবং অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে ।

( গ ) শিশুর জ্ঞানমূলক বিকাশের ক্ষেত্রে ভাইগটস্কির তত্ত্বের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল “ Zone of proximal development’- এর ধারণা ।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে শিশু যখন সংকটপূর্ণ সময়ের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করে তখন সে সচেতনভাবে সামাজিক পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যক্তিত্বকে পুনর্গঠিত করে । প্রতিটি সংকটপূর্ণ সময় শিশুর মধ্যে নতুন মানসিক সংগঠন তৈরি করে এবং তার অর্থ প্রক্রিয়াকরণ প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয় । ভাইগটস্কি মনে করেন , শিশু তার বয়স অনুযায়ী নিজেই সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা রাখে । ক্ষমতার এই স্তরকেই তিনি
‘ Zone of actual development ’ বলেছেন ।

শিশুকে যদি শেখার স্বাধীনতা এবং সুযােগ দেওয়া হয় তাহলে যে স্তরের সমস্যাসমাধানে সক্ষম হয় তাকে ‘ Zone of proximal development ‘ বলে ।

শৈশব অবস্থায় শিশুর শিখনে সহায়তা তার জ্ঞানমূলক বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ । বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন শিখনের ক্ষেত্রে সহযােগিতার পরিমাণ অল্প হলেই চলে ।

“