সামাজিক পরিবর্তনে শিক্ষকের ভূমিকা লিখুন

সামাজিক পরিবর্তনে শিক্ষকের ভূমিকা লিখুন ।

উত্তর :– লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর WO Leste Smith- এর অভিমত অনুসরণ করে বলা যায় যে , আমাদের নবপ্রজন্ম যে অনিশ্চিত সময়ের মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করতে চলেছে তাদের প্রশিক্ষকদের অবশ্যই বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে , তাঁদের কার্যাবলির মধ্যে সামাজিক সমস্যাগুলি সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন । অন্য একটি চিন্তাধারাকে অনুসরণ করে বলা যায় , বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ যাঁরা বিভিন্ন প্রাচীনপন্থী সংগঠনের মধ্যে শিক্ষকদের পেশাগত সংগঠনকে পছন্দ করেন , সেক্ষেত্রে সমাজে বিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে । আবার এই সংগঠন এই বিষয়ে জনমত গঠন করতে পারে এবং সরকারের নিকট এ বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারে । আমেরিকান বৈজ্ঞানিক EW Gordon- এর মন্তব্য অনুসরণ করে বলা যায় , শিক্ষার কাজ হল শিক্ষা দেওয়া— পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা দেওয়া পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া — পরিকল্পিত সমাজবিপ্লবের জন্য শিক্ষা দেওয়া এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষাদান করা । একজন শিক্ষক নিম্নলিখিত পন্থায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান , পরস্পর প্রীতির মনোভাব এবং দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারেন—

( i ) সরাসরি / প্রত্যক্ষ শিক্ষণের মধ্যে দিয়ে ।

( ii ) শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্র , ধর্মনির্দেশনা ও সমাজবাদের শিক্ষা বা মূল্যবোধ নির্মাণের সুযোগের মাধ্যমে ।

( iii ) এই ধরনের মূল্যবোধ নির্মাণে নিজেকে একটি আদর্শ প্রতিরূপ হিসাবে গড়ে তোলার মাধ্যমে ।

সামাজিক কল্যাণে শিক্ষকের ভূমিকা : একজন শিক্ষক নিম্নলিখিত উপায়ে সমাজকল্যাণের ভূমিকা পালন করেন—

( i ) পাঠক্রমকে সামাজিক চাহিদার সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন ।

( ii ) বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ক্লাব বা লিগ সংগঠিত করতে পারেন , যাদের সাহচর্য নিয়ে সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কার্য সম্পন্ন করা শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব ।

( iii ) বয়স্ক শিক্ষার কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে পারেন ।

( iv ) জাতীয় দিবস ও উৎসবগুলি পালন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলতে পারেন ।

( v ) বয়স্কদের পঠনপাঠনের জন্য বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে একটি পৃথক বিভাগ খোলার ব্যবস্থা করতে পারেন ।

( vi ) শিক্ষক – অভিভাবক সংস্থা নির্মাণ করতে পারেন ।

( vii ) সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে প্রচার করতে পারেন ।

( viii ) অর্থবহভাবে অবসর সময় কাটানোর উপযুক্ত সংস্থা হিসাবে বিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে পারেন ।

সামাজিক দ্বন্দ্ব ও সমস্যাগুলি দূরীকরণে শিক্ষকের ভূমিকা : —

বর্তমান সমাজে বিভিন্ন প্রকৃতির অভাবনীয় সামাজিক দ্বন্দ্ব ও সমস্যা ক্রমাগত তীব্র আকার নিচ্ছে । এই ধরনের দ্বন্দ্ব ও সমস্যাগুলি নিরসনে শিক্ষক বিভিন্নভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেন । বর্তমান সমাজে পরিবেশদূষণ , নিরক্ষরতা , বেকারসমস্যা , জনবিস্ফোরণ , পণপ্রথা , নারী নির্যাতন , বাল্য বিবাহ , সামাজিক অনৈক্য , গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব , ক্ষুদ্র আঞ্চলিক স্বার্থ তথা আঞ্চলিকতাবাদ , অনুন্নত বা পিছিয়ে পড়া শ্রেণির সমস্যা এক একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে । এই সমস্যাগুলিকে দূর করতে হলে সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশ ঘটাতে হবে ।

শিক্ষকের মর্যাদার বিশ্লেষণাত্মক মূল্যায়ন :–
শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলির উপর নজর দেওয়া প্রয়োজন ।

( 1 ) শিক্ষকদের বেতন ও চাকুরির শর্তাবলি ঃ শিক্ষকদের বেতন এবং চাকরির শর্তাবলি তাদের সামাজিক এবং পেশাগত দায়িত্বের সঙ্গে সংগতি রেখেই নির্ধারণ করা হবে ।

( 2 ) শিক্ষকের পেশাগত নৈতিকতা : শিক্ষা কর্মসূচি সংগঠনে এবং রূপায়ণে শিক্ষকের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ । শিক্ষকদের জন্য খোলাখুলি অংশগ্রহণমূলক ও তথ্যভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং যুক্তি সংগ্রহ সুযোগের সাহায্যে প্রমোশনের মাধ্যমে শিক্ষকদের কৃতিত্বের পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে ।

( 3 ) সারা দেশে শিক্ষকদের একই বেতন : সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শিক্ষকদের জন্য শিক্ষক – সংঘ National Code of Professional Ethics বা পেশাগত নৈতিকতার জাতীয় নিয়মাবলি তৈরি করা হবে । সর্বভারতীয় শিক্ষা সার্ভিস স্থাপন করা হবে । সারা দেশে শিক্ষকদের একই রকম বেতন হার । চাকুরির শর্ত ও চাহিদা মেটাবার ব্যবস্থা রাখা হবে ।

বেতন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সুযোগ – সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও সমাজের নিকট থেকে সেই মর্যাদার অবনমন শুরু হয়েছে । আর এর জন্য শিক্ষকগণের একটা বড়ো অংশের অশিক্ষকসুলভ আচরণই দায়ী । এই আচরণগুলির মধ্যে অন্যতম হল ,

( ক ) অর্থলিপ্সা ঃ- শিক্ষকগণের যথেষ্ট বেতন বৃদ্ধি সত্ত্বেও কর্মক্ষেত্রকে অবহেলা করে টিউশন ইত্যাদিতে প্রবল আগ্রহ ।

( খ ) কর্মক্ষেত্রে দলীয় রাজনৈতিক দূষণ : মতাদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্বায়ন শিক্ষকগণের অবশ্যই থাকতে পারে কিন্তু কর্মক্ষেত্রে সেই রাজনৈতিক বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শিক্ষক – শিক্ষক সম্পর্ক , শিক্ষক – প্রধানশিক্ষক সম্পর্ক বা শিক্ষক – শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং শিক্ষক – অভিভাবক সম্পর্ক স্থির করা শিক্ষাব্যবস্থা এবং সমাজের পক্ষে কখনোই মঙ্গল হয় না । এই দলীয় রাজনৈতিক দুষণ সমাজ ভালো চোখে দেখে না ।

Related posts:

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবন কথা
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী : 2024
চন্দ্রযান-3 : চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ ভারত
GENERAL STUDIES : TEST-2
GENERAL STUDIES : 1
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: 8ই সেপ্টেম্বর
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
তপনের জীবনে তার ছোটো মাসির অবদান আলোচনা করো।
সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝ ?
আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায় ? এটি কয়প্রকার ও কী কী ?
একটি সাদা কাগজকে কীভাবে তুমি অস্বচ্ছ অথবা ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করবে ?
ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অস্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অপ্রভ বস্তুও কি আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে?
বিন্দু আলোক - উৎস কীভাবে পাওয়া যেতে পারে ?
বিন্দু আলোক - উৎস ও বিস্তৃত আলোক - উৎস কী ?
অপ্রভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বপ্নভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সবকিছু দেখতে পাই , কিন্তু রাত্রিবেলা আলোর অনুপস্থিতিতে কোনো জিনিসই দেখতে পা...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page