শিক্ষণ কাকে বলে ? শিক্ষণের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য লিখুন

শিক্ষণ কাকে বলে ? শিক্ষণের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য লিখুন ।

উত্তর:–

শিক্ষণ : কোনো একটি সংজ্ঞা দ্বারা শিক্ষণকে সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না । শিক্ষণের কয়েকটি উন্নত সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল ।

Albert Einstein- এর মতে , জ্ঞান ও সৃষ্টিশীল প্রকাশের মধ্যে দিয়ে আনন্দ জাগ্রত করাই হল শিক্ষণ শিল্পের প্রধান লক্ষ্য ।

American Education Research Association অর্থাৎ শিক্ষণ হল এক ধরনের আন্তর্ব্যক্তি প্রভাব যার লক্ষ্য হল অন্য ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন ঘটানো ।

W R Ryburn- এর মতে , “ Teaching includes the training of emotions of the child . It is one of the means of given right feeling to the children . ” অর্থাৎ শিক্ষণের মাধ্যমে শিশু প্রাক্ষোভিক প্রশিক্ষণ লাভ করে । শিশুদের মধ্যে সঠিক অনুভূতি সঞ্চালনের অন্যতম উপায় হল শিক্ষণ ।

শিক্ষণের প্রকৃতি

( 1 ) শিক্ষণ হল তথ্য সঞ্চালন — শিক্ষণের মধ্য দিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিকট নতুন জ্ঞান পৌঁছে দেন । এইভাবে শিক্ষণ তথ্য সঞ্চালন বা সংযোগকারী হিসাবে কাজ করে ।

( 2 ) শিখন হল শিক্ষণের ফল — শিক্ষণ হল কার্য , শিখন হল তার ফল । অবশ্য শিক্ষণ হলেই যে শিখন ঘটবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায় না । তবে সাধারণভাবে শিক্ষণের ফলে শিখন ঘটবে এই লক্ষ্যেই শিক্ষণ প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হয় ।

( 3 ) শিক্ষণ হল পরিবেশের সঙ্গে সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া করতে শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা — এ প্রসঙ্গে FN Freeman বলেন প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া করতে সক্ষম হলে শিশুর শিক্ষা সার্থক হয়েছে একথা বলা যায় ।

( 4 ) শিক্ষণ শিশুকে পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনে সাহায্য করে — জন্মগতসূত্রে শিশু পরিবেশের সঙ্গে সংগতিবিধানের জন্য কিছু ক্ষমতা নিয়ে আসে । কিন্তু শিক্ষণ এই ক্ষমতা বিকাশে এবং অভিযোজনে সাহায্য করে । অভিযোজনের প্রেক্ষিত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে । যেমন — প্রাকৃতিক অভিযোজন , মানসিক অভিযোজন , সামাজিক অভিযোজন এবং প্রাক্ষোভিক অভিযোজন ।

( 5 ) শিক্ষণ হল উৎসাহ ও উদ্দীপনা সঞ্চারের প্রক্রিয়া — শিশুর ক্ষমতাগুলিকে সক্রিয় করে তুলতে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনার প্রয়োজন তা শিক্ষণ সঞ্চার করে ।

( 6 ) শিক্ষণ হল নির্দেশনা — শিক্ষণের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয় । সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে ব্যক্তির কী করা প্রয়োজন , কীভাবে সে অগ্রসর হবে এ সম্পর্কে পরামর্শ শিক্ষণের মাধ্যমে দেওয়া হয় ।

( 7 ) প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ — প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম উপায় হল শিক্ষণ । বাতি প্ৰক্ষোভ বিকাশে এবং অবাঞ্ছিত প্ৰক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে শিক্ষণ কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে ।

( 8 ) শিক্ষণ চেতন ও অবচেতন মনের প্রক্রিয়া — মনোসমীক্ষণে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে , শিক্ষণ শুধু চেতন মনের ক্রিয়া নয় , অবচেতন মনেও শিক্ষণের ভূমিকা আছে ।

( 9 ) শিক্ষণ হল প্রস্তুতির উপায়— গোষ্ঠী জীবনে সার্থকভাবে অংশগ্রহণের জন্য ব্যক্তিকে বিশেষ প্রথা , সংস্কার এবং সংস্কৃতিমনস্ক করে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষণের বিশেষ অবদান আছে ।

( 10 ) শিক্ষণ হল দক্ষতামূলক পেশা — শিক্ষা – মনোবিজ্ঞান শিক্ষণকে কতকগুলি প্রক্রিয়ার সমন্বয় বলে মনে করে । এই প্রক্রিয়াগুলিকে অনুশীলনের মাধ্যমে এবং প্রযুক্তির সাহায্যে উন্নত করা যায় । যার ফলে শিক্ষণ দক্ষতা বৃদ্ধি পায় । অতএব একথা বলা যায় যে , শিক্ষণ একটি দক্ষতামূলক পেশা ।

( 11) শিক্ষণ হল শিল্প ও বিজ্ঞান — শিক্ষণ যেমন বিজ্ঞানভিত্তিক তেমনি ব্যক্তির বিশেষ নৈপুণ্য এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে । এই অর্থে শিক্ষণ বিজ্ঞান ও শিল্প উভয়ই ।

( 12 ) শিক্ষণ হল সম্পর্ক স্থাপনের একটি প্রক্রিয়া —
শিক্ষণের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় । শিক্ষণের মাধ্যমে একদিকে যেমন জ্ঞান ও দক্ষতার সঞ্চালন ঘটে তেমনি ঘটে অনুভূতির সঞ্চালন । একদিকে শিক্ষক যেমন শিক্ষার্থীদের নিজের পুত্রকন্যার মতো স্নেহ করেন , ভালোবাসা দেন , অন্যদিকে তেমনি শিক্ষার্থীরাও শিক্ষককে পিতার দৃষ্টিতে দেখে । তাঁকে শ্রদ্ধা করে । তাঁর কথা মান্য করে । এইভাবেই উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে ।

শিক্ষণের বৈশিষ্ট্য

শিক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল–

( 1 ) শিক্ষণ সর্বদাই শিক্ষার্থীদের উদ্দীপিত করবে এবং প্রেষণার সঠিক মাত্রা বজায় রাখার চেষ্টা করবে

( 2 ) শিক্ষণ শ্রেণিকক্ষে গণতান্ত্রিক আবহাওয়া বজায় রাখে , যেখানে শিক্ষার্থীর বক্তব্যে

( 3 ) শিক্ষণ পরিকল্পনা মাফিক হবে । স্বাধীনতা থাকবে এবং শিক্ষক সকল ছাত্রকে নিরপেক্ষভাবে বিচার করবেন ।

( 4 ) শিক্ষণ শিক্ষার্থীদের মেধা , অভিজ্ঞতা প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞাত হতে সাহায্য করে ।

( 5 ) শিক্ষণ দুর্বলতা নির্ণয়ে ও তার প্রতিবিধানে সচেষ্ট হয় ।

( 6 ) শিক্ষণ যুক্তিনির্ভর । আবেগের ভূমিকা অবশ্যই থাকবে , তবে আবেগ যেন কখনোই প্রাধান্য না পায় ।

( 7 ) শিক্ষণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাঞ্ছিত আচরণের বিকাশ ঘটাবে । শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে ।

( 8 ) শিক্ষণ শ্রেণিকক্ষের সব শিক্ষার্থীকেই সক্রিয় করে তুলতে সক্ষম হবে ।

( 9 ) শিক্ষণ নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর মধ্যে শিক্ষককে বদ্ধ রাখে না । প্রয়োজনবোধে বিষয়ান্তরে গমনে স্বাধীনতা দেয় ।

( 10 ) শিক্ষণ শিক্ষা – প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ সঞ্চার করে ।

Related posts:

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবন কথা
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী : 2024
চন্দ্রযান-3 : চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ ভারত
GENERAL STUDIES : TEST-2
GENERAL STUDIES : 1
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: 8ই সেপ্টেম্বর
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
তপনের জীবনে তার ছোটো মাসির অবদান আলোচনা করো।
সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝ ?
আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায় ? এটি কয়প্রকার ও কী কী ?
একটি সাদা কাগজকে কীভাবে তুমি অস্বচ্ছ অথবা ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করবে ?
ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অস্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অপ্রভ বস্তুও কি আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে?
বিন্দু আলোক - উৎস কীভাবে পাওয়া যেতে পারে ?
বিন্দু আলোক - উৎস ও বিস্তৃত আলোক - উৎস কী ?
অপ্রভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বপ্নভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সবকিছু দেখতে পাই , কিন্তু রাত্রিবেলা আলোর অনুপস্থিতিতে কোনো জিনিসই দেখতে পা...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page