প্রশ্ন : লিঙ্গ বৈষম্যের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহপাঠীদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার কী ভূমিকা লিখুন ।
উত্তর : উন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশে সহপাঠীদের অবস্থান সমাজবিজ্ঞানী , শিক্ষাবিদ নীতি প্রণয়ন নিকট বর্তমানে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে । সহপাঠীদের অবস্থান দলের প্রতিটি সদস্যদের পারদর্শিতার উপর যে প্রভাব বিস্তার করে সে সম্পর্কে বহু সমীক্ষা ইতিমধ্যে করা হয়েছে । সহপাঠীদের জেন্ডার (লিঙ্গ) শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে প্রাসঙ্গিক হয়ে দেখা দিয়েছে । যদি শ্রেণিকক্ষে বালকেরা বালিকাদের থেকে অধিক বিশৃঙ্খল হয় সেক্ষেত্রে বালিকাদের সংখ্যা শ্রেণিকক্ষে যদি অধিক হয় তাহলে শ্রেণিকক্ষের আচরণ এবং আবহাওয়া অনুকূল হওয়ার সম্ভাবনা অধিক । এ ব্যতীত বালকদের আক্রমণাত্মক আচরণ শ্রেণিকক্ষের আচরণ এবং আবহাওয়ার মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় । বস্তুতপক্ষে Chile (চিলি)-র একটি সমীক্ষার তথ্যে দেখা গেছে যে বালকেরা বালিকাদের তুলনায় অধিক আক্রমণাত্মক আচরণ করেছে । এ ব্যতীত বালকদের উপস্থিতি বালিকাদের আত্মবিশ্বাসের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং বিশেষ বিশেষ বিষয়ের (যেমন গণিত এবং বিজ্ঞান) উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং ছাত্রীদের নিজ সম্পর্কে প্রত্যাশার ( Self Expectation ) উপর প্রভাব বিস্তার করে । অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে জ্ঞানমূলক শিখনের স্টাইলের ক্ষেত্রে জেন্ডার (লিঙ্গ) পার্থক্য প্রভাব বিস্তার করে ।
বিভিন্ন শিক্ষাবিদ (যেমন—Monaski , 2000 ; Hoxby , 2000 ; McEwan , 2001 : Vigdor and Nechyba , 2004) তাদের সমীক্ষায় লিঙ্গ পার্থক্যের কারণে (সংখ্যায় বেশি বা কম) সহপাঠীদের মিথস্ক্রিয়ায় যেসব প্রভাব দেখা গেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—
• মিথস্ক্রিয়ার উপর নেতিবাচক প্রভাব ।
• শ্রেণিকক্ষের আচরণ এবং আবহাওয়া ব্যাহত হয় ।
• বালকদের আক্রমণাত্মক আচরণ , বালিকাদের আত্মপ্রকাশ এবং আত্মবিশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হয় ।
• বিশেষ বিশেষ শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে (গণিত , বিজ্ঞান) বালিকাদের খারাপ ফল ।
• বিদ্যালয় লিঙ্গভিত্তিক হবে না কো – এডুকেশন হবে এসম্পর্কে সরকারি নীতিগ্রহণে বিতর্ক দেখা যায় ।
• যেসব বিদ্যালয়ে বালিকাদের সংখ্যা অধিক সেইসব বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা কম এবং পারদর্শিতার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিকট শিক্ষকদের প্রত্যাশা বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষাবর্ষে পাঠক্রম সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয় ।
• অনেকক্ষেত্রে দেখা গেছে জ্ঞানমূলক শিখনের স্টাইলের ক্ষেত্রে লিঙ্গ পার্থক্যের কারণে প্রভাব বিস্তার করে ।
এ সব ব্যতীত উপরোক্ত সমীক্ষাগুলিতে আরও যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাহল—
(ক) শিক্ষার্থীরা কেবলমাত্র তাদের শিক্ষকদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করে না । সহপাঠীরাও জ্ঞানার্জনে সাহায্য করে । শিক্ষণের বক্তব্য সহপাঠীরা তাদের মধ্যে আলোচনা করে এবং অনেক কিছু শেখে । এ ছাড়া সহপাঠীরা নিজেদের মধ্যে তাদের অর্জিত জ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করে এবং জ্ঞান বিনিময় করে ।
(খ) সহপাঠীরা শ্রেণিকক্ষ আবহাওয়া এবং শ্রেণিতে বিশৃঙ্খলা শিখন প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে (Lavy and Schlosser , 2007) |
(গ) সহপাঠীদের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং শিক্ষকদের শ্রেণি প্রত্যাশার পরিবর্তন ঘটে (Cunningham & Andrews , 1986) ।
উপরোক্ত আলোচনা এবং সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ফলের ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীদের লিঙ্গ পার্থক্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে করণীয়গুলি হল—
(1) শ্রেণিতে ছাত্রী এবং ছাত্রসংখ্যা সমান বা ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি হওয়া প্রয়োজন ।
(2) শিক্ষক ছাত্র ও ছাত্রীর প্রতি একই আচরণ করবেন । কোনোরকম পক্ষপাতিত্ব করা সঠিক নয় যা আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোখে পড়ে ।
(3) বিভিন্ন পাঠক্রমিক এবং সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে ছাত্র এবং ছাত্রীদের সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে । জেন্ডার স্টিরিয়োটাইপ দূর করা প্রয়োজন ।
(4) শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে প্রত্যাশার ক্ষেত্রে শিক্ষক কোনোভাবে তাদের জেন্ডার দ্বারা প্রভাবিত হবেন না ।