ভূতের গল্প : হানাবাড়ি

হানাবাড়ির দোতলায় মাকড়সার জালে ঘেরা জানালার ভাঙা পাল্লার ফাঁক দিয়ে পরেশবাবু অনিমেষের আগমন লক্ষ্য করলেন । উত্তর রাধাপুর ইউনিয়ন ক্লাবের আরাে তিনজন সভ্য , অর্থাৎ স্বয়ং দারােগাবাবু , বড়বাবুর বড় শালা বটুকবাবু আর হেডমাস্টার ওর সঙ্গে এসেছিলেন । এই রকমই কথা হয়েছিল ; বাইরে তিনজন গণ্যমান্য ব্যক্তি সাক্ষী থাকবেন । তাঁরাই অনিমেষকে পৌঁছে দেবেন , সকাল সকাল খাওয়া – দাওয়ার পর রাত আটটায় । আবার ভাের পাঁচটায় তাঁরাই এসে তাকে নিয়ে যাবেন । তবে ভূতের বাড়ির ভেতরে কেউ পা দেবেন না সকালের আগে ।উত্তর রাধাপুর ইউনিয়ন ক্লাবের চৌকিদার নকুল – তাকে চৌকিদারও বলা যায় , ফরাসও বলা যায় , চাকরও বলা যায় , আবার পেয়ারের গুরুঠাকুরও বলা যায় ; ক্লাবের গােড়াপত্তন থেকে আছে বলে আজকাল তার বড়ই বাড় বেড়ে গেছে , বর্মা থেকে এসে অবধি পরেশবাবু এটা লক্ষ্য করেছেন । কিন্তু আর পাঁচজন গণ্যমান্য সভ্যরা যখন কিছু বলেন তাে না – ই , বরং তা বে – আদবি দখে বেশ মজাই পান , তখন নবাগত পরেশবাবুর কিছু বলা শােভা পায় না , এই ভেবে তিনিও কিছু বলেন না । অনিমেষ হল গিয়ে ঐ নকুলের ঘােড়া !অবিশ্যি অনিমেষ কিন্তু সত্যিকার ঘােড়া নয় , বরং অনেকের মতাে সে একজন সুস্থ স্বাস্থ্যবান সুশিক্ষিত সুদর্শন ‘ল’ পরীক্ষা পাস করা যুবক , সবে মুন্সেফ হয়েছে , এবং সবচেয়ে বড় কথা , সে হল গিয়ে নকুলের স্বৰ্গত পুরােনাে মনিবের একমাত্র ছেলে । নকুলের চোখে সে একটি ভগবান বিশেষ , তার কোন দোষ সে দেখতে পায় না । সে যাক গে , এ বিষয়ে বেশি বলতে গেলে লােকে ভাবতে পারে পরেশবাবু অনিমেষকে হিংসে করেন । মােট কথা , অনিমেষকে নিয়েই যখন বাজি , আর নকুল তখন তার সব চেয় বড় সার্পোটার , তখন তাকে নকুলের ঘােড়া বললে দোষ হয় না ।তাছাড়া পরেশবাবুর পঞ্চান্ন বছর বয়স , ব্যবসা করে বর্মায় বেশ নামডাক পয়সা-কড়ি করেছিলেন , এখন ভাগ্যের দোষে সে সবই প্রায় খুইয়েছেন , কিন্তু তাই বলে অনিমেষের মতাে একটা চ্যাংড়া ছােকরাকে তিনি হিংসে করতে যাবেন কোন্ দুঃখে ? আসল কথা হল , ঐ নকুল আর অনিমেষ দুইজনের একটু শিক্ষার দরকার হয়ে পড়েছে । ক্লাবের আর সকলেই যখন অনিমেষের রূপ – গুণ দেখে অজ্ঞান আর নকুলের ভাঁড়ামিতে আহ্লাদে আটখানা , তখন পরেশবাবুকেই সেই শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা করতে হবে । হাজার হােক , অনিমেষের বাবা অজানেশ তাে একদিক দিয়ে দেখতে গেলে পরেশবাবুর বন্ধু ছিলেন । এক সঙ্গে বর্মা গেলেন , ব্যবসা শুরু করলেন , পরেশবাবু ফেঁপে উঠলেন , আর অজানেশ দেউলে হলেন , শেযটা পরেশবাবুর জলের দরে তাঁর ব্যবসাটি কিনে নিলেন । এর জন্যে পরেশবাবুর নিন্দা না করে বরং তারিফই করতে হয় । অথচ নকুলটা এমন ভাব দেখায় যেন পরেশবাবুই অজানেশের ব্যবসাটি লাটে তুলে দিয়েছিলেন । আরে বাপু , ব্যবসা করতে গেলে সবাই অমন অল্প – বিস্তর চালাকি করে থাকে ; তাই করতে হয় , নইলে অজানেশের মতাে ব্যবসা তুলে দিতে হয় । সেই যে দেউলে হয়ে অজানেশ দেশে ফিরে গেল , আর পরেশবাবুর সঙ্গে দেখা হয় নি , মরলও অকালে ।একরকম বর্মীয় হয়ে গেছিলেন পরেশবাবু , তারপর অদৃষ্টের ফেরে প্রায় খালি হাতে দেশে ফিরেছেন । মজার কথা হল যে , হানাবাড়িটা আসলে অনিমেষদেরই পৈতৃক বাড়ি । পঁয়ত্রিশ বছর খালি পড়েছিল , নাকী ভূতের উপদ্রব ? কেউ বাস করতে তাে রাজি নয়ই , এমনকি সন্ধ্যের পর ঐদিকে যেতে চায় না কেউ ! অনিমেষ মামাবাড়িতে মানুষ , পৈতৃক বাড়ির ধার ধারে না , ইদানীং এখানে পােস্টেড হয়েছে , কোয়ার্টারে থাকে , ক্লাবে আডডা দেয় । অনিমেষের সেখানেই পরেশবাবুর সঙ্গে আলাপ । আগে বাবার কাছে তাঁর নাম শুনেছিল বটে , কিন্তু দেখে নি কখনাে । পরেশবাবু প্রায় ত্রিশ বছর পরে বর্মা থেকে মাসতুতাে ভাইয়ের বাড়িতে উঠেছেন । এইখানেই ছােটোখাটো ব্যবসা ফাঁদবেন , কিছু মূলধনের চেষ্টায় আছেন । এমন সময় এই সুযােগটি বলতে গেলে ভগবানই জুটিয়ে দিলেন । অনিমেষ বলে বসল , ‘সে ভূতে বিশ্বাস করে না , ও বাড়িতে ভূতের উপদ্রব আছে এ কথাও সে বিশ্বাস করে না । এমনকি কেউ যদি বাজি ধরে তাে ভূতের বাড়িতে একলা এক রাত কাটিয়ে সে এ কথা প্রমাণ করে দিতেও প্রস্তুত ।’ব্যস , ক্লাবে যেমন কথায় কথা বেড়ে থাকে , দেখতে দেখতে পরেশবাবুর সঙ্গে অনিমেষের পাঁচশাে টাকা বাজি ধরা হয়ে গেল । অনিমেষ ভূতে বিশ্বাস না করলেও দেখা গেল যে নকুল যথেষ্ট করে । সে হাঁউমাঁউ করে উঠল , “ ফট্‌ করে যে বাজি ধরছ অনিদাদা , আছে তােমার পাঁচশাে টাকা । ”ক্লাবের বাবুরা অমনি চেঁচিয়ে উঠলেন , “ আরে আমরাই না হয় দেব , তুই ভাবিস নে নকুল । ”অনিমেষ বলল , “ তুমিও যেমন নকুলদা , আগে বাজি হারি , তবে তাে টাকা দেবার কথা উঠবে । বিছানা বালিশ নিয়ে কেমন দিব্যি নিশ্চিন্তে রাত কাটিয়ে পরেশকাকার কাছ থেকে পাঁচশাে টাকা বাগাই , দেখাে ।”নকুল তবুও ক্যাঁও – ম্যাও করতে থাকে , “ আজ তােমার মা বেঁচে থাকলে ভূতের বাড়িতে রাত কাটাতে দিত তােমাকে ? শেষটা যদি সত্যিই ভূতে ধরে ? ”একগাল হেসে অনিমেষ বললে , “ মষেনিন্দু । নিন্দু ! কী যে বল ! ভূতটি নাকি আমার বাবার পিসি , তার বিয়ের রাতের লাল চেলি আর এক – গাঁ গয়না পরে দেখা দেয় । পরদিন ভাের থেকেই তাকে আর কেউ দেখে নি । নতুন বরটিও অমনি দানের জিনিস , পণের টাকা নিয়ে পাশের গাঁয়ে আবার বিয়ে করেছিল । সাক্ষাৎ বাপের পিসি , সেকি আমার কোনাে অনিষ্ট করতে পারে ? নাকী যে , তাকে দেখে ভয় পেয়ে বাড়ি ছেড়ে পাঁচশাে টাকা বাজি হারব ! তােমার কোনাে ভয় নেই , অন্য ভয় আমারই বরং একটু আছে । ও পরেশকাকা , আছে তাে আপনার পাঁচশাে টাকা ? শেষটা আপনি মাগনায় আজকের ভূতের বাড়িতে রাত্রিবাস করাবেন না তাে ? ” তাই শুনে ক্লাবের সকলের কী হাসি , যেন ভারি মজার কথা বলেছে । ঝপাং করে টেবিলের উপর মানিব্যাগ ফেলে দিয়েছিলেন পরেশবাবু । পাঁচশােই আছ তাঁর তা ছাড়া সামান্য কিছু জমানাে টাকা । বলেছিলেন , “ তােমার পাঁচশাে পেলেই আমার ব্যবসাটি শুরু করে দেব ! আপনাদের সবাইকে হালখাতার নেমন্তন্ন রইল , তুমিও যেয়াে অনিমেষ । ”পরেশবাবু ভূত – টুত মানেন না । তবু বাছাধনকে যে পৈতৃক বাড়িতে রাত কাটাতে হচ্ছে না , সে বিষয়ে তাঁর মনে কোনাে সন্দেহটুকু নেই । তার কারণ হল , অতি উত্তম ফরমায়েসি ভূতের ব্যবস্থা হয়েছে । বর্মার সেকালের গ্রেট বেঙ্গল থিয়েটারের বটকেষ্ট যেমন খাসা ভূত হতে পারে , সত্যিকারের ভূত বলে যদি কিছু থাকত তাে তারাও অত ভালাে হত না । এমন মেয়ের সাজ করতে পারে বটকেষ্ট যে , নিজের চোখকেও বিশ্বাস করা যায় না । আজ রাতে সে লাল চেলি পরবে , গা – ভরা গিলটি গয়না পরবে , গা থেকে অদ্ভুত আলাে বেরুবে , আবার দপ্‌ করে নিভে যাবে , অমনি ভুত অদৃশ্য হয়ে যাবে । হরেকরকম ভূতুড়ে আওয়াজও দেবে বটকেষ্ট ; তার কতক কতক শুনেও এসেছেন পরেশবাবু । বাবাঃ , দিন – দুপুরে কেষ্টনগরের এক হাট লােকের মাঝখানেও তাই শুনে পিলে চমকে গেছিল ! সে কথা মনে করে এখন আবছা অন্ধকারে নিশ্চিন্ত মনে অনিমেষকে হানাবাড়িতে ঢুকতে দেখে অনেক কষ্টে পরেশবাবু হাসি চাপলেন ।এ বাড়িতে ভূত – টুত নেই , সব যে গাঁয়ের দুষ্টু লােকের কল্পনা , সেটুকু জানতে পরেশবাবুর বাকি ছিল না , যেহেতু বর্মা থেকে ফিরেই প্রথম রাতটি কিছু না জেনে শুনে , এই বাড়িতেই নিশ্চিন্ত না হলেও একেবারে নির্বিঘ্নে ঘুমিয়ে কাটিয়ে ছিলেন তারপর সকালে মাসতুতাে ভাইটিকে খুঁজে বার করেছিলেন । অবিশ্যি ভূত না থাকলেও , বাড়িটা যে যথেষ্ট ভূতুড়ে সে কথা মানতে হবে । ছাদ থেকে লম্বা লম্বা ঝুল ঝােলে ; আচমকা যখন নরম একটি ছোঁয়া লেগে যায় কপালে , আঁতকে উঠতে হয় । দরজা – জানালার কব্জা ভাঙা, সে যে কতরকম ক্যাঁচকোঁচ শব্দ হয় ভাবা যায় না । তার ওপর ঘুলঘুলির মধ্যে দিয়ে খালি বাড়িতে হাওয়া ঢুকে কী রকম একটা হু হু শব্দ করে যে শুনলে হাত – পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় । সত্যি কথা বলতে কী ভূতে অবিশ্বাস এবং ফুঙ্গির দেওয়া ভূতের মাদুলি না থাকলে , ভূতের কথা না জেনেও পরেশবাবু ও বাড়িতে রাত কাটাতে পারতেন কিনা সন্দেহ ।আজ এ সবের উপরে বটকেষ্ট ভূত তাে আছেই । তাকে পইপই করে বলে দেওয়া হয়েছে যেন লােমশ হাত দুটোকে চেলি দিয়ে ঢেকে রাখে । মুখে সে এমনি মেক্‌-আপ দেবে যে কারাে বাবার সাধ্যি নেই যে নকল ভূত বলে টের পায় ।অনিমেষ সঙ্গে করে বিছানা এনেছে , তা ছাড়া একটা গামছা না কী যেন এনেছে , মাটিতে বিছানা পাততে হবে , বাবু তাই মেঝেটাকে বােধ করি ঝেড়ে ঝুড়ে নেবেন । একটা টর্চও এনেছে নিশ্চয় ; মােমবাতি , দেশলাইও এনেছে হয়তাে । সেটি জ্বেলে শুয়ে অদ্ভুত সব শব্দ শুনবে ব্যাটাচ্ছেলে , আর গায়ের রক্ত হিম হয়ে উঠতে থাকবে । তারপর আড়ালে দাঁড়িয়ে বটকেষ্ট একটা বেলুন থেকে একটা গ্যাস্‌ ছাড়বে । অমনি নাকি মােমবাতির আলাে বেড়ে এক হাত উঁচু হয়ে উঠবে । চমকে ব্যাটা উঠে বসবে , আর সেইরকম হু – হু শব্দ করতে করতে পিসির ভূত দেখা দেবে । তারপর মােমবাতিটা যেই কমতে কমতে একেবারে নিভে যাবে , পিসির ভূতও অদৃশ্য হবে , আর অনিমেষ বীরও চোঁ – চোঁ দৌড় লাগাবে ! উঃ , ভেবেও কি সুখ । এই সুখে আজ লুকিয়ে বসে আছেন পরেশবাবু ।সিঁড়িতে একটা খস্ খস্ শব্দ শুনে চমকে ফিরে আঁতকে উঠলেন পরেশবাবু । কী চমৎকার ভূত সেজেছে বটকেষ্ট । আরেকটু হলে তিনি নিজেই নিজের ভাড়া করা ভূত দেখে , মাদুলি থাকা সত্ত্বেও তিনি মূর্চ্ছা যেতেন । সড়সড় করে নিঃশব্দে লাল চেলিপরা মুর্তিটা সিঁড়ি দিয়ে নেমে গিয়ে নীচের হলঘরে ঢুকল । সেইখানে অনিমেষ শুয়ে আছে । উত্তেজনায় পরেশবাবুর দম বন্ধ হয়ে আসবার জোগাড় । বাবা কি ওস্তাদ বটকেষ্টটা । এমনি নিঃশব্দে কাজ করে যে , কখন সে এসে পৌছল এতটুকু টের পাননি পরেশবাবু । এমনকি , মনে মনে একটা ভয়ই হচ্ছিল , যদি কেষ্টনগর থেকে এতটা পথ আসতে গিয়ে কোনাে দুঘর্টনা হয়ে থাকে । যাক , এবার সব ভাবা ঘুচল , কাল হাতে – নাতে পাঁচশােটি টাকা পাওয়া যাবে ।নৈঃশব্দ ভেদ করে বিশ্রী একটা হু হু শব্দ কানে এল ; গায়ের রক্ত জল হয়ে গেল পরেশবাবুর । উঃ কি বাড়াবাড়িটাই করতে পারে বটকেষ্ট পঁচিশ টাকার জন্যে । অনিমেষের কোনাে সাড়াশব্দ নেই কেন ? যদি . . . যদি ভয়ে হার্ট ফেল করে তবে ! এমন তাে শােনা গেছে কত সময় । পরেশবাবুর বুকটা এখন টিপটিপ করতে লাগল । তা হলে তাে এত কষ্ট , এত খরচ সব পণ্ড হয়ে যাবে । টাকা দেবে কে ?হঠাৎ চেয়ে দেখেন , দোরগােড়ায় বটকেষ্ট , অর্থাৎ লাল চেলি পড়া মূর্তিটি । তার গা থেকে কেমন একটা সাদা আলাে বেরুচ্ছে ফস্‌ফরাস না কী যেন । এই রকমই কথা ছিল , অনিমেষকে ভাগিয়ে বটকেষ্ট উপরে এসে পরেশবাবুকে ডেকে নিয়ে যাবে , যাতে অনিমেষের পলায়নের আরেকজন বাইরের সাক্ষীও থাকে । কিন্তু বটকেষ্ট অমন চুপ করে দাঁড়িয়ে কেন ? গলা খাঁকরে পরেশবাবু বললেন , “ কি বটকেষ্ট ? কথা বলছ না কেন ? ”মূর্তিটি হেসে উঠল ; খিল্ খিল মেয়েলি সুরে । তারপর দু হাত বাড়িয়ে নিঃশব্দে পরেশবাবুর দিকে এগিয়ে আসতে লাগল । পরেশবাবুর সর্বাঙ্গ বেয়ে বরফের মতাে ঠাণ্ডা ঘাম পড়তে লাগল । সেই সাদা আলােতে স্পষ্ট দেখতে পেলেন তিনি , এ তাে বটকেষ্ট নয় , এর হাতে ঘন কালাে লােম নেই , যেন মাখনের তৈরী ফরসা সুন্দর দুখানি হাত।অজ্ঞান হয়ে পড়তে পড়তে সামলিয়ে নিলেন পরেশবাবু । গলা দিয়ে স্বর বেরুল না , হঠাৎ ফিরে দুড়দাড় করে পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে , বন – বাদাড় ভেঙে দূরে যেখানে গাঁয়ের বাড়িঘর দেখা যাচ্ছে সেদিকে ছুটলেন । পরদিনটি রবিবার । সকালে গাঁসুদ্ধ লােকের মুখে শােনা গেল পরেশবাবু বাজি হেরে কোথায় সরে পড়েছেন । তার মাসতুতাে ভাই কেদার মিত্তির নাকী চারিদিকে তার খোঁজ করছে শুনে ক্লাবে মহা হৈ – চৈ । এদিকের ফিষ্টির ফর্দ তৈরি । এগারােটায় সকলের জমায়েত হবার কথা , নকুলের সে কী রাগ ! “ একী রকম ভদ্রলােক । বাজি হেরে ফাঁকি দিয়ে পালালাে । না , ওনাকে ছাড়া হবে না , যেখান থেকে হােক , চ্যাংদোলা করে ধরে আনা হবে । কি অনিদাদা , তুমি কেন চুপ , লোন তাে তােমারই । ” অনিমেষ একটু হেসে বলল , “ না , নকুলদা সত্যিই কি আর ওঁর টাকা নিতাম আমি , এটুকুই ওর সম্বল । শুধু একটু জব্দ করার ইচ্ছে ছিল । তা উনি করেছিলেন গ্রেট বেঙ্গল থিয়েটারের বটকেষ্ট কাকাকে ভূত সাজিয়ে আমাকে ভয় দেখাবার জন্যে টাকা দিয়ে এসেছিলেন । বটকেষ্ট কাকা বাবাকে বড় ভালােবাসতেন । সে উঠিপড়ি করে কেষ্টনগর থেকে ছুটতে ছুটতে আমাকে খবরটা দিয়ে গেলেন । তা ছাড়া এও বলে গেলেন যে , রাত – দুপুরে ভূতের বাড়িতে একা যাবার ওঁর সাহস নেই , যদিও পরেশকাকা সেখানে থাকবেন , তবু বটকেষ্টকাকা সাদুকাকিকেও সঙ্গে নেবেন । টাকা নিয়েছেন , কাজেই উনি আমাকে নিশ্চয়ই ভয় দেখাবেন ; সাদুকাকি সেই সময়টি নষ্ট না করে ঠিক একই রকম সাজ করে পরেশকাকাকে ভয় দেখাবেন । বিনি পয়সায় , যাতে কেউ না বলতে পারে আমিও ভূত ভাড়া করে চালাকি করেছি । দারুণ ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছেন নাকী পরেশকাকা , সাদুকাকির কাছে শুনলাম । কিন্তু এখন ভয় হচ্ছে কোনাে বিপদে পড়েন নি তাে পরেশকাকা ? নিখোঁজ কেন ? ”কেদার মিত্তির কাষ্ট হাসি হেসে বললে , “ বিপদে পড়লে তার সুটকেশ আর আমার নতুন আলােয়ান নিয়ে অদৃশ্য হতেন না । তুমি নিশ্চিন্ত হও । সে কল্লকাতায় । ভুতের হাত থেকে ও বেঁচেছে । এখন ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমাকে কি খাওয়াবে খাওয়াও । ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page