ভূতের গল্প : সত্যি ঘটনার অবলম্বনে — তাসনিয়া

পুরো বাসা ঘুরে ঘুরে দেখলাম… বেশ বড়, একদম নতুন, আমাদের আগে এখানে কেউ ছিলো না। বাসা টা ছাদে। বলা যেতে পারে দরজা খুললেই বিশাল ছাদ। ঠিক বাড়ির সামনে যেমন বিশাল উঠোন থাকে ঠিক তেমন। পাশে এমন আরো তিন টা ইউনিট। আমরা সহ আরো চার টা ফ্যামিলি। আমি তাসনিয়া। আমি আম্মু আর ছোট ভাই আব্দুল্লাহ। আমাদের এই ছোটো পরিবার। আব্বু নেই। – তাসনিয়া…. -জ্বি আম্মু… -তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়। সকালে উঠে প্রাইভেটে যেতে হবে। এবার স্কুলে যেতে অনেক সুবিধা হবে.. একদম কাছা কাছি। আগে অনেক টা ঘুরে যেতে হতো। গিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়লাম। আলহামদুলিল্লাহ!! প্রথম কিছু দিন খুব ভালো সময় কাটালাম। প্রতিবেশী রা অনেক ভালো। পুরা বিল্ডিং এ সমবয়সী কেউ নাই। তবে ভালো ব্যাপার হচ্ছে আমিই সবার বড়। সবাই আপু আপু বলে ডাকে, শুনে গ্যাং এর লিডার বলে মনে হয়.. 😜 সেই বিল্ডিং এ আমরা থাকতাম ৪ তালায়, আর ৩ তালায় আম্মুর অফিস ছিলো। যাক… প্রথম বেশ কিছুদিন আম্মুর সাথে ছিলাম.. পরবর্তী তে সামনের রুমে থাকা শুরু করি একা… সামনের রুমের দরজা খুললেই সামনে ছাদ… আর বেশ বাতাস আসে.. আরেক টা ব্যাপার হলো পুরো টা বাসায় ঢালাই করা ছাদ… শুধুমাত্র আমাদের বাসার সামনের রুমটা উপরে টিন দেওয়া আর কাঠের বোর্ড… এবং বেশ সুন্দর… সেই রুম টা তে আমি থাকতাম, লেখাপড়া করতাম, ড্রইং করতাম, কারেন্ট চলে গেলে দরজা খুলে দরজার সামনে বাহিরে শীতল পাটি বিছিয়ে আমি আর আবদুল্লাহ বসে থাকতাম। কিছুদিন যাওয়ার পর থেকেই, আমার সাথে কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার ঘটা শুরু হয়ে গেলো যা আমার কল্পনার বাহিরে। আমি ছোটো বেলা থেকেই অনেক সাহসী। (সবাই বলে 😊) সেদিন রাত ঠিক কয়টা বাজে খেয়াল করি নি..

হঠাৎ ঘুম ভেংগে গেলো। কিন্তু আমি নড়তে পারছি না। কেমন যেনো শরীর একদম ভার হয়ে আছে, আশেপাশে মনে হচ্ছে একদম ব্যস্ত পরিবেশ। হয়ত সকাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে আশেপাশে অনেক মানুষ জন হাটা চলা করছে, আর কথা বলছে। কিন্তু কথা গুলো স্পষ্ট নয়। ভাবলাম আম্মু আব্দুল্লাহ উঠেছে, ওরা রেডি হচ্ছে। তারপরও কেমন অস্বাভাবিক লাগছে। আমি একদম জেগে, কিন্তু নড়তে পারছি না। সমস্ত শক্তি দিয়েও পারছি না। আচ্ছা আম্মু কি আমাকে একবার ও দেখছে না? খুব অবাক লাগলো। হঠাৎ কেমন যেনো একটা চিকন চাপা আওয়াজ আমার কানের বাজতে শুরু করছে। কষ্ট হচ্ছিলো অনেক, সহ্য হচ্ছিলো না। এইবার দোআ পড়া শুরু করলাম। শরীর কেমন যেন হালকা অনুভব করলাম একটু পর ই চোখ খুললাম, সাথে সাথে উঠে বসলাম। তাকিয়ে দেখি, ঢিম লাইট টা এখনো জ্বলছে, সব চেয়ে বেশি অবাক করা বিষয় হলো, রাত এখনো কাটে নি। উঠে দেখি আম্মু আব্দুল্লাহ এখনো ঘুমাচ্ছে, কিছুক্ষণ ভাবলাম, এইমাত্র কি হলো আমার সাথে? চারদিকে ভালো করে দেখলাম, দেখি আমার খাটের সাথে জানালাটা খোলা, জানালাটা বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লাম। ভাবলাম এটা স্বপ্ন হয়তো। নয়তো হ্যালোসিনেশন… নতুন জায়গা, তাই… মিথ্যা আশ্বাস দিলাম। তারপর ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে উঠতে দেড়ি হয়ে গেছে। বাসা থেকে বের হতেই দেখি মাহি আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, একসাথে যাবো স্কুলে। রাতের কথা আমার কিছুই মনে নেই তখন। স্কুল থেকে ফিরলাম..

গত রাতের কথা আমার মনে নেই… বাসায় এসে দেখি আমার রুমে উপরে কাঠের বোর্ডের উপর অনেক গুলো পাখি বাসা করেছে। পাখি ডাকছে… বাহ আমি তো মহা খুশি… খেয়ে দেয়ে বিকালে ঘুম। আমি সব সময়েই আমার লেখাপড়া, পেইন্টিং, লেখা লিখি, স্কুলের হোম ওয়ার্ক এই গুলো সব রাতে খেতে দেয়ে তারপর করতাম। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকতাম। তাই আম্মু আমাকে সব সময় নিশাচর প্রাণী বলে। রাতের বেলায় পরিবেশ নিরব নিস্তব্ধতা আমাকে লেখা পড়ায়, পেইন্টিং করতে গভীর মনোযোগী হতে সাহায্য করতো। বেশ কিছু দিন তেমন কিছু আর হয় নি। কিন্তু তারপরই আবারো সেই একই অবস্থা…. ঘুম ভেংগে গেলো। হাত পার অবশ, আর আশেপাশের ব্যস্ত পরিবেশ। কথা বলছে অস্পষ্ট ভাবে। কেউ একজন ডাকলো। সেটাও অস্পষ্ট। সূরাহ পড়া শুরু করলাম। তারপর আবারো ঠিক হয়ে গেলো। ঠিক আগের মতো। উঠে ঘরিতে তাকিয়ে দেখি এখনো চার টা বাজে না। এমন কেন হয় আমার সাথে? পরদিন আম্মুকে বলি… আম্মু বলে নামাজ পড়ো ঠিক মতোন, নামাজ না পড়লে এমন হয়। সিরিয়াসলি নেয় নি বুঝলাম। সবাই যার যার মতো প্রতিদিনের কাজে ব্যস্ত।। একদিন নানু আসে বাসায়। নানু কে জিজ্ঞাস করি, নানু বলে এটা নাকি বোবা জ্বীন। বোবা জ্বীন ধরলে নাকি বুকের উপর অনেল ভারী অনুভব হয়। কানে চিৎকারের আওয়াজ আসে। কিন্তু এর সাথে আমার কোনো কিছুই মিল নাই। আমি কোনো প্রকারের ব্যথা পাই না। ভারী কিছু অনুভব করি না। আমার ঘুম ভেংগে যায়, আর আমার আশেপাশে অনেক মানুষজনের অস্তিত্ব অনুভব করি। যাক,, আর কাউ কেই তারপর থেকে আর কিছুই বলি নি… বেশ কিছু দিন পর পর আমার সাথে এমন টা হতো। তখন উঠেই দেখতাম চার টা তখনো বাজে নি… একরাতে শুয়ে শুয়ে উপরে তাকিয়ে আছি…

উপরে সাইডের কাঠের বোর্ড গুলো কেমন যেনো আলাদা হয়ে আছে। মাঝখানের গুলো ঠিক আছে। কিন্তু সাইডের গুলো বোর্ডের ফাকে ফাকে দুই এক জায়গায় বাকা হয়ে ফাক হয়ে আছে। সেই ফাক দিয়ে আমি টিন গুলো দেখতে পারছিলাম। আম্মুকে ডেকে দেখালাম, আম্মু বললো কাঠের জিনিষ এমনি হয়। এটা এক সময় সংকুচিত হয়। কিন্তু মাঝখানের গুলো ঠিক আছে। সাইডের গুলোই কেনো এমন মনে প্রশ্ন টা রয়ে গেলো। কিন্তু আম্মুকে আর কিছুই জিজ্ঞাস করলাম না। আম্মু বুঝতে পারছে আমার কথায় অন্য ইংগিত, আমি যেন ভয় না পাই সে জন্য আমাকে ভুল প্রমাণ করার জন্য অনেক কথাই বলবে। তাই তারপর থেকে আম্মু কে আর কিছুই বলি নি। আমার বাসার উপরের ছাদে উঠার কোনো সিঁড়ি নেই। ছাদে একটা স্টোর রুম আছে, সেখান থেকে একটা মই নিয়ে আমরা কয়েকজন প্রায় ওই ছাদে উঠি। সেই ছাদে বিশেষ কিছুই নেই শুধু তিন মাঝারি সাইজের পানির ট্যাংক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page