ভূতের গল্প : ভূতের রেডিও প্রোগ্রাম

বয়স তখন সবে পাঁচ। বাড়িতে চারকোনা একটা বাক্সের সামনে বসে বাবার সঙ্গে গল্প করছি। হঠাৎ বাবা বললেন – তোর অনিমাদি কে চিনিস তো ?

আমি বললাম – কেন কি হয়েছে অনিমাদির ? অনিমাদি তো আমার বড় মাসির মেয়ে তাকে না চিনবার কি হল ?

বাবা বললেন – হ্যাঁ তোর সেই দিদি কাল রাত্রের বেলা থেকে এই বাক্স টার ভেতর ঢুকে বসে আছে।

আমি বললাম – কেন কি হয়েছে অনিমাদির ?

বাবা বললেন – তোর অনুমাদি তো ভালো গান করেন। আজ সকালবেলা সবাইকে চমকে দেওয়ার জন্য এই বাক্সের ভেতর থেকে ঠিক ন’টায় গান করবেন।

শুনে তো আমার চক্ষু স্থির। অনিমাদির বয়স কম করেও সাতাশ। আমি বাবাকে প্রশ্ন করলাম, এ কি করে সম্ভব বাবা ?

বাবা হাসি চেপে বললেন, বেশ তাহলে আর একটু অপেক্ষা কর।

ন’টা বাজতেই বাবা ঐ বাক্সের সামনে থাকা একটি নব ঘুরিয়ে দিতেই শুনতে পেলাম একজন ঘোষিকার কণ্ঠস্বর।

দারুণ আনন্দিত হচ্ছিলাম আমি। দৌড়ে বাড়ির ভেতর থেকে মাকেও ডেকে আনলাম অনিমাদির গান শোনার জন্য। পর পর দুখানা গান শুনলাম। গানের মানে না বুঝলেও অনিমাদির মুখখানা চিন্তা করে খুব খুশি হলাম। ভাবলাম নিশ্চয়ই অনিমাদি ম্যাজিক জানেন। না হলে নিজেকে অত ছোট করে ওই চৌকোনা বাক্সের মধ্যে লুকিয়ে রেখে গান গাইতে পারতেন না।

বাবার সত্যিকারের ব্যাপারটা আমাকে একটু খোলসা বলো।

বাবা বললেন, বোকা মেয়ে – ওই চৌকোনা বাক্সটাকে তুই বাক্স ভেবেই ভুল করেছিস । ওটা হলো রেডিও। এ রকম রেডিও সারা দেশ জুড়ে অনেকের বাড়িতেই আছে। এবং একই সঙ্গে অনেকের বাড়িতেই এ গান বেজেছে। শুনে তো আমি আরো অবাক !

বাবা আরও বললেন, হ্যাঁ, সে কথাটাই বলছি শোন ।কোম্পানি আমলের এক বাড়ি 1 নং গারস্টিন প্লেস ।সেখানে আছে নানান যন্ত্রপাতি। এই যন্ত্রপাতি পরিচালিত হয় একটি তালের মত মাইক্রোফোনের সাহায্যে । ওই মাইক্রোফোনের সামনে শিল্পীরা বসে কথা কিংবা গান করলে সেই কথা গান বাতাসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যেকের বাড়িতে রাখা ওই চৌকোনা বাক্সতে রাখা আছে গ্রাহকযন্ত্র। ঐ যন্ত্রে ধরা পড়ে শিল্পীর কণ্ঠস্বর।

বাবা, আমার ভীষন ইচ্ছা করছে ঐভাবে কিছু বলার।

বাঃ বেশ তো। তুই আরেকটু বড় হ।

আজ যেখানে আকাশবাণী ভবন, রেডিওর শুরুতেই অবশ্য সেখানে অফিস ছিল না। পূর্বেই বলেছি রেডিওর কাজকর্ম শুরু হয় হয়েছিল এক নম্বর গারস্টিন প্লেসে। ওই বাড়িটি ভূতের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। 1947 সালের আগে থেকে যারা রেডিওর সঙ্গে যুক্ত তারা ওই বাড়িটির সম্বন্ধে অনেকেই জানেন । ওই বাড়ির পেছন দিকে একটা সিঁড়ি ছিল সেটা বাড়িতে ঢোকার জন্য সেই সিঁড়ি ভূতেরাও ব্যবহার করত । অনেক সময় ভুতেরা নাকি সুরে রেডিওতে প্রোগ্রামে অংশ নিত। তাছাড়া তখনকার কেন্দ্র অধিকর্তা সাহেবীয়ানায় চলতেন বলে অনেকের কাছে তার আচরণ সাহেব ভূত বলে মনে হত। এক এক সময় দেখা গেছে অফিসের টেলিফোন, কাগজপত্র সব কিছু রাতের বেলায় তছনছ করে দিয়ে গেছে ভূতেরা ।এবং কাউকে আশ্রয় করে তাকে নানা বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে।

একবারের ঘটনা। শিশুমহলে আবৃত্তি করবার জন্য একটি শিশু এসেছে। বয়স 10 থেকে 11 । তখন লাইভ ব্রডকাস্টিং এর নিয়ম ছিল। ছেলেটি বারে বারে মহড়া দিয়েও ভালোভাবে কবিতাটি আয়ত্ত করতে পারেনি ।তারপর তার মাথায় হাত বুলিয়ে আমি বললাম , ভয় কি ? মনে করো তুমি বাড়িতে আবৃতি কর। কিছু করে সে তৈরি করে নিল নিজেকে। তাকে মাইক্রোফোনের সামনে বসালাম। হঠাৎ কিছু পরে যখন তার নাম ঘোষণার পর আবৃত্তি করতে বললাম, সে আরম্ভ করল।

আবৃত্তি শেষ হতে আর মাত্র কিছুটা সময় বাকি। হঠাৎ হাত পা ছড়িয়ে গোঁ-গোঁ করতে করতে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ল । আমি তাড়াতাড়ি আবৃত্তির বাকি অংশটুকু করে দিলাম । তাকে ইতিমধ্যেই বাইরে এনে জল ও বাতাসের সাহায্যে জ্ঞান ফিরে আনা হয়েছে । খুব অবাক লাগল যখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার কি হয়েছিল ? সে বললে, একটি কালো কঙ্কাল যেন তার গলা ধরে টিপতে শুরু করেছিল। তার বক্তব্যের সত্যাসত্য যাচাই করতে পারিনি । শুধু ভেবেছি ভুতের সাহস কি প্রচন্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page