পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা টাউন থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে নিমতাকুঁড়ি গ্রাম। গ্রীষ্মের এক পড়ন্ত দুপুরে পাড়ার কুঁচো একদল ছেলে পিলে মাঠে পিটটু খেলছিলো। ওদের মধ্যে একজন দিলু। দিলু বল কুড়োতে গিয়ে দেখতে পায় অর্জুন গাছের ডাল থেকে নিচের দিকে মাথা করে ঝুলে আছে একটা লোক মুখটা সামনের পুকুরের দিকে তাই দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু পেছন থেকে জামা প্যান্ট পরা একটা আস্ত দেহ পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। ভিরমি খেয়ে প্রায় দাঁত কপাটি লেগে যাবার জোগাড় দিলুর। সেদিনের মতো খেলা বন্ধ।
কিছু পরে দিলুর মুখে সব শুনে পাড়ার মোড়লরা পুকুর ধারের অর্জুন গাছের কাছে এসে জড়ো হয় কিন্তু কোথায় কি! কিচ্ছু নেই! সুন্দর ফুরফুরে হাওয়া! বেজায় ধমক খেয়ে গাছটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে দিলু। হঠাৎ পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখে পচাদা, বুক টা ছ্যাঁৎ করে ওঠে দিলুর,একটা বিড়ি ধরিয়ে পচা দা জিগ্গেস করে কিরে কেমন দিলাম? দিলু হাঁ করে চেয়ে থাকে। পচা দা বলে আমার সাথে জয়েন কর, দুজনে মিলে গ্রামের লোককে ভয় দেখাবো। রাজি? দিলু বলে রাজি, হেব্বি মজা হবে কিন্তু!
পচা দা গ্রাজুয়েশন করছে। পড়াশোনায় বেশ ভালো। গ্রামের লোক পচাদা কে ভালোবাসে। কারোর বিপদ আপদে এক ডাকে উপস্থিত হয় পচা। ছোটো বেলায় বাপ মাকে হারিয়েছে। বাড়িতে ও আর ঠাকুমা। দাদু রেলে চাকরি করতো ঠাকুমা পেনশন পায় ওই চলে যায় দুজনের। সারাদিন যত বদবুদ্ধি মাথায় ঘোরে ওর আর সারা গ্রামের লোককে অতিষ্ঠ করে বেড়ায় তার উটকো কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে।
আর এবারে তার সঙ্গী দিলু, বিষয় গ্রামের লোককে ভয় দেখানো। ভূতের ভয়!!!!!!
মঙ্গলবার রাত্রিবেলা মিনতি কাকিমা স্নানের ঘাটে গা ধুতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। রায় বাড়িতে হইচই পড়ে যায় জ্ঞান ফিরলে কাকিমা জানায় পুকুরের ওপার থেকে একটা কালো আর বড় ছায়ামূর্তি বিশাল লম্বা হাত বাড়িয়ে তার মাথায় নাকি বার দুয়েক চাঁটি মারে। বৃহস্পতিবার রাতে ক্লাব থেকে তাস খেলে ফেরার সময় সত্যেন খুড়ো ভয়ে ধুতিতে পেচ্ছাপ করে ফেলেন, জিগ্গেস করলে জানা যায় অন্ধকারে দুপাসারি গাছের মাঝে ইঁট পাতা রাস্তা দিয়ে আসার সময় তিনি নাকি হঠাৎ আটকে যান, হাজার চেষ্টা করেও পা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে আর যেতে পারছিলেন না, পেছনে কেউ হুক দিয়ে যেনো ধুতি টা ধরে রেখেছিলো এমন সময় একটা বাচ্চা ভূত তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
আর মনে নেই। রবিবার রাত্রে গ্রামের পুরুত নিমাইচরণ মুখ থুবড়ে সাইকেল নিয়ে নারায়ন সমেত উল্টে পড়েন ডোবায়। তার অভিজ্ঞতা আরো ভয়ংকর। সাইকেল চালিয়ে আসার সময় গাছের ডাল বেয়ে একটা বেঁটে ভূত নেমে এসে বায়না করে তাকে সাইকেলে চাপিয়ে ঘোরাতে নিয়ে যেতে হবে, এমন সময় সাদা শাড়ি পরে ঘোমটা দেওয়া এক কিম্ভুত নেমে আসে গাছ থেকে, খণা গলায় বকাবকি করে তাকে নিয়ে গাছে উঠে যায় তরতর করে! এতদিন এভাবেই চলছিলো কিন্তু অঘটন টা ঘটল একটা অমাবস্যার রাতে, পচা জানত না ওর বাবার বন্ধু পিতৃসম বঙ্কিমজ্যেঠু সেদিন বুকের ব্যথা নিয়ে জ্যেঠিমার সাথে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন, রাস্তার দুপাশের দুটো পুকুর থেকে আচমকা ঝপাং করে উঠে ভয় দেখাতে ওখানেই আঁৎকে উঠে মাটিতে পড়ে যান বঙ্কিম জ্যেঠু। ঘটনাস্থলেই মারা যাবার উপক্রম হয়। পরদিন সারা গ্রামে হইচই পড়ে যায়। বিবেকের দংশনে কাতর হয়ে পচা আর দিলু বন্ধ করে ভূত সাজা!! কিন্তু কাউকে সাহস করে নিজেদের ফাজলামির বলতে পারেনি ওরা কোনোদিন!
কদিন পর গ্রাম পঞ্চায়েত সভা করে। সিদ্ধান্ত নেয় তান্ত্রিক ডেকে গোটা গ্রামের শুদ্ধিকরণের আয়োজন করা হবে। করাও হয়। এরপর আর কোনোদিন নিমতাকুঁড়ি গ্রামে ভূতের উপদ্রবের কথা শোনা যায়নি!
এখন পচাদা নিউ গড়িয়ায় ফ্ল্যাট কিনেছে।কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের বড় অফিসার। দিলু সাউথ সিটি কলেজের ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। ইন্ডিয়ার খেলা থাকলে দিলু আসে পচা দার ফ্ল্যাটে। সেদিন সিঙ্গারায় কামড় দিয়ে কথায় কথায় একবার দিলু জিগ্গেস করে ফেলেছিল উফ্ফ পচাদা সেই নিমাই পুরুতের ডোবায় পড়ে যাবার কথা মনে পড়ে? পচা উত্তর দেয় চুউউউপ!!!! বৌদি আছে!!!