ভূতের গল্প : নিষ্ঠুর হাসি

রাজশাহী জেলায় একটা আনসার ক্যাম্প আছে , যার পাশে একটা ঘন জঙ্গল অবস্থিত । লোকে বলে , ঐ জঙ্গলে নাকি একপাল শূকর ঘুরে বেড়ায় এবং কেউ যদি ঐ শূকরের পালের কোন একটাকে দেখে ফেলে , তবে ঐ লোক নাকি মারা যায় ! যা হোক , এই গুজবের কারণে পারতপক্ষে কেউ জঙ্গলের কাছে যেতে চাইতো না । আর রাতের বেলা তো নয়ই , কারণ রাতের বেলা শূকরের পাল খাবার খুঁজতে বের হয় ।

ক্যাম্পে একজন নতুন সদস্য এসেছিলো , যে ছিল খুব জেদী আর একরোখা । সে ঐ গুজবটা শুনে সিদ্ধান্ত নিলো , ও রাতের বেলা ঐ জঙ্গলে যাবে আর গুজবটাকে ভূয়া প্রমানিত করে সকালে ফিরে আসবে ।

সবার নিষেধ উপেক্ষা করে এক রাতে ঐ সদস্য জঙ্গলের ভিতর ঢুকলো । প্রচন্ড আত্নবিশ্বাস আর সাহসের সাথে জঙ্গলের গভীর থেকে আরো গভীরে যেতে থাকলো । হঠাত্‍ খসখস করে বুনো ঝোপের ভিতর শব্দ হলো ! সদস্য তার হাতের টর্চ দিয়ে ঝোপে আলো ফেললো । তাকে চমকে দিয়ে একটা মাঝারি সাইজের শূকর চোখের সামনে দিয়ে দৌড়ে পালালো । ব্যাপারটাতে ভয়ের কিছুই নেই । কিন্তু তখনি ঐ সদস্যের আত্নবিশ্বাস চুরমার হয়ে গেলো । তার সাহসের স্থানে চেপে বসলো ভয় ! পিছনে আবার খসখস শব্দ ! সদস্য আর দাড়িয়ে থাকতে পারলোনা ! সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড় লাগালো । ক্যাম্পের নিশানা ভূলে গেলো । তার পিছনে তাড়া করতে লাগলো ঐ খসখস শব্দ ! সদস্য দৌড়াতে দৌড়াতে একটা ছোট লেকের ধারে এসে পৌছালো ।

কিনারায় একটা নৌকা বাঁধা ছিলো । সদস্যের মনে হলো , এই নৌকাটাই তাকে বাঁচাতে পারবে । সে নৌকায় উঠে বসলো । নৌকা নিয়ে লেকের মাঝামাঝি চলে এলো । সে ঠিক করলো , ভোর না হওয়া পর্যন্ত একচুলও এখান থেকে নড়বেনা ।

কিছু সময় কেটে গেলো । হঠাত্‍ জঙ্গলে আবার খসখস শব্দ ! সদস্য ভীত চোখে তাকিয়ে থাকলো শব্দ যেখান থেকে আসছে , সেখানে । জঙ্গলের ভিতর থেকে সাদা ফ্রক পড়া একটা ১১/১২ বছরের মেয়ে বের হয়ে এলো ! মেয়েটার মুখে একটা নিষ্ঠুর হাসি ছিলো ! চোখে ছিলো অপলক মায়া ! সদস্যটা ধুমপান করতো । তার পকেটে ছিলো একটা পুরো সিগারেটের প্যাকেট আর ম্যাচ । সে শুনেছিলো যে , আগুন থাকলে নাকি এসব জিনিস কোন ক্ষতি করতে পারেনা , কাছেও আসতে পারেনা । তাই সে সিগারেট ধরালো । হঠাত্‍ মেয়েটা রক্তহিম করা একটা অট্টহাসি দিয়ে বললো ,
” কতক্ষণ সিগারেট খাবি ? আগুন তো নিভে যাবে । আলো তো একসময় শেষ হবে । তখন আর বাঁচবি না ! ”

সদস্য থরথর করে কাঁপতে লাগলো । চেইন স্মোকারের মত একটা সিগারেট শেষ না হতেই আরেকটা ধরাতে লাগলো । তার উদ্দেশ্য ছিলো , কিছুতেই যাতে আগুন না নিভে । কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ ? সিগারেট শেষ হয়ে গেলো ! এখন উপায় ?

ম্যাচে অনেক কাঠি ছিলো । সদস্য ঐগুলোই একটার পর একটা জ্বালাতে লাগলো । মেয়েটা লেকের তীরে ঠাঁয় দাড়িয়ে ছিলো । একজনের বাঁচার অপেক্ষা । আরেকজনের মারার !

পূব আকাশ ফর্সা হয়ে দিগন্তে আলো ছড়াতে লাগলো । বাতাসে ভেসে এলো ” আল্লাহ আকবার আল্লাহু আকবার ” ধ্বনি তে ফজরের আযান । লেকের পানি ভোরের তাজা স্নিগ্ধ বাতাসে ঢেউ খেলাতে লাগলো । জঙ্গলে একটা থমথমে ভাব বিরাজমান ! জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে একজন মানুষ । আরেকজন অশরীরী !!

মেয়েটা চলে যেতে প্রস্তুত হলো । জঙ্গলের দিকে ধীরে ধীরে এগুতে লাগলো । হঠাত্‍ থমকে দাড়ালো ! ধীরে ধীরে মুখটা লেকের দিকে ফেরালো । ঠোঁটে নিষ্ঠুর হাসি ফুটিয়ে বললো ,
” এইবারের মত বেঁচে গেলি । পরের বার আর বাঁচবি না ! ”

সদস্যের চোখের সামনে মেয়েটা অদৃশ্য হয়ে গেলো ! চোখে অপলক মায়া , কিন্তু গভীর এক দুঃখবোধ !

সদস্য সূর্য না উঠা পর্যন্ত লেকের পানিতে ছিলো । তারপর নৌকা নিয়ে জঙ্গলের দিক দিয়ে না এসে ঘুরপথে তীরে পৌছালো আর অনেক কষ্টে ক্যাম্প চিনতে পারলো । তার আত্নবিশ্বাস আর সাহসের কিছুই আর অবশিষ্ট ছিলোনা । পরে তার আর কোন ক্ষতি হয়নি । সে প্রাণে বেঁচে যায় !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page