ভূতের গল্প : আসামী

আজই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে তথাগত। খুনের দায়ে অভিযুক্ত আসামী সে। সাত বছর আগে বিষ খাইয়ে নিজের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে খুন করার অপরাধে জেল হয় ডাক্তার তথাগত ব্যানার্জির!!

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এম বি বি এস করার সময় তথাগতর অ্যাফেয়র হয় ইন্দিরার সাথে। স্টেডি অ্যাফেয়র চলে এম ডি করার সময় পর্যন্ত, তখন মুম্বাই তে ওরা লিভ ইনে কাটায় দু বছর। এরপর তথাগত চাকরি পায় শিয়ালদায় রেলের বি আর সিং হসপিটালে আর ইন্দিরা বর্ধমান মেডিকাল কলেজ হসপিটালে। সব ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু বাধ সাধেন তথাগতর বাবা ডাক্তার অপরেশ ব্যানার্জি।

কিছুতেই তথাগতর বিয়ে ইন্দিরার সাথে দিতে রাজি হন না, কারণ নিজের বন্ধু ডাক্তার অসীম মুখার্জিকে তিনি অনেক আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছিলেন তার মেয়ে সুপর্ণার সাথেই তথাগতর বিয়ে দেবেন এম ডি শেষ করার পর। মেরুদণ্ডহীন তথাগত বাবার ভয়ে নিজের পুরনো প্রেম ভুলে গিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ভালো ছেলেটি সেজে।

কিন্তু বিয়ের দিনই সেখানে উপস্থিত হয় ডাক্তার ইন্দিরা দাশ। কোনো সিন ক্রিয়েট না করে সে তথাগতকে জানতে চায় তার অন্যায় টা কি ছিলো! তথাগত জানায় বাবার মুখের ওপর কথা বলার সাহস তার নেই তাই দুজনেরই এর পর নিজের নিজের জীবনে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। ইন্দিরা কাঁদতে কাঁদতে তথাগতকে বলে যায় ওর ভালোবাসা মিথ্যে নয় তাই তথাগত ওর ছাড়া কারোর হতে পারেনা, এর শাস্তি তথাগতকে পেতেই হবে ও কোনোদিন অন্য কারোর হতে পারবে না।

হতে দেবেনা ইন্দিরা!! এরপর বেশ কিছুদিন তথাগত আর কোনো যোগযোগ করেনা ইন্দিরার সাথে, প্রায় এক মাস পর কলেজের বন্ধুর মাধ্যমে তথা জানতে পারে দীর্ঘ অবসাদে ভুগে ইন্দিরা সুইসাইড করেছে ঘুমের ওষুধের ওভারডোজ নিয়ে। কান্নায় ভেঙে পড়ে তথাগত, পুরনো কথা মনে পড়ে সব, অনুভব করে ইন্দিরার প্রতি তার নিবিড় প্রেম কিন্তু সত্যি সে অসহায়, আজ আর হাজার চাইলেও ইন্দিরাকে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা তার নেই!

প্রথম প্রথম সুপর্ণাকে নিজের করে না নিতে পারলেও পরবর্তী কালে সময়ের ব্যবধানে ওর সাথে সহজ হয় তথাগত। সুপর্ণা ভালো মেয়ে। সরল। সাধাসিধে। কয়েকদিন পর সুপর্ণার জন্মদিনে হসপিটাল থেকে ফেরার সময় ফুলের বুকে আর গিফ্ট নিয়ে নামী হোটেল থেকে খাবার কিনে বাড়ি ফেরে তথাগত। রাতে একসাথে ডিনার করে দুজনে, হীরের লকেট উপহার দেয় সুপর্ণাকে।

খুশী মনে শুতে যায় দুজনে ওরা। সেদিন মাঝ রাতে তথাগত স্বপ্ন দেখে ইন্দিরা দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে হাসি মুখে, আর হাত বাড়িয়ে একটা শিশি এগিয়ে দিচ্ছে তার দিকে, শিশিটা হাতে নিয়ে চিৎকার করে ওঠে তথাগত দেখতে পায় ইন্দিরার পায়ের কাছে পড়ে আছে সুপর্ণার নিথর দেহ। ঘুম ভেঙ্গে যায় তথাগতর। পাশে সুপর্ণাকে ছুঁয়ে দেখে শরীরটা ওর ভয়ানক ঠান্ডা।

বেডসুইচ অন করে আঁতকে ওঠে মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে সুপর্ণার! পরদিন পুলিশ আসে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে সুপর্ণাকে হত্যা করার অভিযোগে পুলিশ কার্স্টেডিতে নেয় তথাগতকে। কিন্তু তথাগত বারবার বলতে থাকে সে নির্দোষ কারন ওই এক ই খাবার তারা দুজনেই খেয়েছে!!

কেস কোর্টে ওঠে। পুলিশ চার্জশিট পেশ করে। ফরেন্সিক টীম ওই খাবারে বিষ পেয়েছে এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উল্ল্যেখ থাকে সুপর্ণার বিষক্রিয়াতেই মৃত্যু হয়েছে। নিজের স্ত্রীকে খুনের দায়ে জেল হয় তথাগতর!!

একজন ডাক্তার হয়েও লাস্ট সাত বছর নিজের স্ত্রীর মৃত্যু রহস্যের আসল কারণ জানতে অক্ষম হয় তথাগত। একটিও খুন না করে দুটো মৃত্যুর দায়ে নিজের বিবেকের কাছে চিরতরে আসামী হয়ে যায় ডাক্তার তথাগত ব্যানার্জি!!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page