ভুতের গল্প :ভয়ংকর রাত

তখন গরমকাল চলছে। মামাতো ভাই খুলনাতে থাকে। ভাবি প্রায় সময়ই ফোনে একেবারে কানটা ঝালাফালা করে দেয় খুলনাই আসার জন্য। পড়াশুনা চলাকালীন অনার্স একসাথেই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করি। মামাতো ভাই অন্য ডিপার্টমেন্ট এ থাকলেও আমার এই বান্ধবিটার সাথে চুটিয়ে প্রেম করেছে চার বছর। পরে ফলশ্রুতিতে বিয়ে। এখন চাকুরীর সুবাদে দুজনেই খুলনাতে। অবশ্য আমি এখনো বিয়ে করিনি। তবে অতি শীঘ্রই হয়তো ফাঁন্দে পড়তে হতে পারে।

মামাতো ভাই আর বান্ধবী ভাবীর প্যান প্যানানির জন্য অফিস থেকে কিছুদিনের ছুটি নিলাম। ফোনে ওদেরকে বললাম আমি আগামিকালই খুলনা আসছি। যাক প্লান মত সব ঠিকঠাক করে গুছিয়ে নিলাম। ভাবলাম রাতেই রওনা হবো। কারন একেতো গরম কাল তার উপর দিনের বেলাতে প্রখর রোদ। ড্রাইভারকে ঠিকঠাক ভাবে বলে দিলাম, আমি আজ রাতেই খুলনা রওনা হচ্ছি। সোন্ধাই খাবার খাওয়ার পর মা আমাকে যথারিতী সাবধানতার উপদেশ বানী দিতে লাগলো। সাথে একটা মাদুলীও দিল। আমিতো ওটা দেখে অবাক হয়ে গেছে। মা, তুমিনা সেই আগের মানুষই রয়ে গেলে। এসব তাবিজ কবুজকে কি কেও এখন বিশ্বাস করে। মায়ের সোজা জবাব কেও না বিশ্বাস করুক আমি করি। তুই এটা সাথে করে খুলনা নিয়ে যাবি। কি আর করা যথারিতী মায়ের হুকুম মেনে আমি আর আমার ড্রাইভার কাদের গাড়ীতে গিয়ে উঠলাম। ঘড়িতে রাত নয়টা মত বাঁজে। ঢাকা শহরের কোলাহল থেকে বেশ খানিকটা দুরে চলে এসেছি। এমনিতেই ভরা পূনির্মা রাত তার উপর এই লং ড্রাইভ, বেশ রোমান্টিক করে দিচ্ছে বটে। ড্রাইভারের পাশের সিটেই আমি বসে। পুরো গাড়ীতে আমি আর ড্রাইভার কাদের ছাড়া কেও নাই। মাঝে মাঝে কাদেরের সাথে কথা হচ্ছে আর একশো থেকে একশো বিশ বেগে ছুটে চলেছে গাড়ি। কাদের কিছুক্ষন পর একটি গানের সিডি বের করে বাজাতে লাগলো। এমনি সময় ফোনটা বেজে উঠলো। ছোট আপু ফোন করেছে। হ্যালো জুথি বল… ভাইয়া তোরা কতদূর এখন, একা যেতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা তো? আমার জবাব, আরে না। টেনশন নিসনা, পৌছে ফোন দেব। আর বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলিস। রাখি। ফোনটা রেখে দিলাম। ফোনটা রাখতে রাখতেই জীবন নিয়ে কেমন যেন বিচিত্র অনুভূতি হতে লাগলো। ছুটে চলা জীবনের গাড়ীর শো শো শব্দে নচিকেতার গানটার মত মনে হল- রাত বলে যায় যায়, ডাক দিয়ে যায়। চোঁখের পাতাই যেন কত কিছুই ভেসে উঠছে। শো শো করে ছুটে চলছে গাড়ী, আর জসনা ছড়াচ্ছে চাঁদ। রাত এগারোটা মত বাজতে বাজতেই কাদের বলে উঠলো- স্যার আমরা এখন ফেরী পার হবো। টাকা পয়সার হিসাব চুকিয়ে দিয়েই কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা ফেরীতে উঠলাম। কিছুসময় পরে ফেরীটা গাড়ীতে ভরলে আসতে আসতে টার্ন করলো। তারপর এক সময় মাঝ নদীতে। জসনা ভরা চাঁদনী রাতে এই নদীর পানি যেন অপরুপ রুপের শোভা ছড়াতে লাগলো। কাদের বলল স্যার দেখছেন কত সুন্দর লাগছে চাঁদ আর নদীর পানির ঢেও গুলোকে। আমরা ফেরী পার হয়ে গেছি। আবারো হায় ওয়েতে ছুটতে শুরু করেছে আমাদের গাড়ী। কিছু দুর পর পর একটি দুটি গাড়ীর হেডলাইট দেখা যাচ্ছে। আমার চোঁখটা কেমন অবশ অবশ লাগছে। গাড়ীর ছিটেই হেলান দিলাম চোখ বুঝে। কিছুদুর যেয়েই হঠাত্ করেই কাদের গাড়ীর ব্রেকটা এমন ভাবে ধরলো, যেন পুরো গাড়ীটাই উল্টে পড়ে যাবার মত অবস্থা। এই কি হৈছে কাদের, এত জরে কি গাড়ীর ব্রেক ধরে কেও। কাদেরের জবার স্যার আমার দোষনা, ওনার জন্যই সব কিছু। এবার আমি আস্তে আস্তে গাড়ীর সামনে তাকিয়ে দেখি একটি বিশ থেকে বাইশ বছরের মেয়ে একটা বাচ্চা কোলে করে দাড়িয়ে আছে। ঘড়িতে রাত একটা। মেয়েটি সাদা শাড়ী পরে আছে। তার আঁচলের এক অংশ মাটির সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চুলগুলো এলোমেলো আর কান্না ভেজা চোঁখ। আমি গাড়ির দরজাটা খুলে নিচে নেমে বললাম- কি ব্যাপার, আপনি হঠাত্ করে একটা বাচ্চা কোলে করে আমার গাড়ির সামনে আসলেন কেন? মেয়েটি কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো স্যার আমাকে বাঁচান। আমার স্বামী নয়তো আমাকে আর আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলবে। আমি কোন মতে বাড়ী থেকে পালিয়ে এসেছি। সামনেই আমার বাবার বাড়ী। আপনি দয়া করে আমাকে একটু আপনার গাড়ীতে নিয়ে চলুন। আমি বললাম, দেখুন আপনি পথ থেকে সরে দাড়ান। আমি আপনাকে গাড়ীতে নিতে পারবোনা। এই কথা বলার সাথে সাথে মেয়েটি তার এক হাতে বাচ্চাটিকে বুকে নিয়ে আর এক হাতে আমার পা জড়িয়ে ধরলো। কাদের ওপাশ থেকে বলল- স্যার আমাদের গাড়ির পিছনের ছিটতো খালি পড়ে আছে। আমরা না হয় এই বিপদ থেকে একটু ওকে সাহায্য করি। আর সামনেই তো ওর বাবার বাড়ী। আমরা ওখানেই ওকে নামিয়ে দেবো। কাদেরের এই কথা শুনে মেয়েটিকে গাড়িতে উঠতে বললাম। মেয়েটি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে পিছনের ছিটে উঠে বসলো। আমাদের গাড়ী কিছুক্ষন চলতেই থাকলো। এর মাঝে একবারো পিছন ফিরে তাকানো হয়নি। হঠাত্ করেই মনে হলো মেয়েটিতো কিছুদুর পরেই নামতে চেয়েছিল। আমি গাড়ির মিররের দিকে চেয়ে দেখার চেষ্টা করলাম মেয়েটির কি অবস্থা দেখার জন্য। কিন্তু আয়নার ভিতরেতো কোন কিছুই দেখা যায়না। আমি একটু ভালো ভাবে আয়নার দিকে চোখ দিলাম। দেখলাম দু টো লাল চোঁখ দেখা যায়। কিছুক্ষন পর দেখি মেয়েটি তার কোলের বাচ্চাটাকে মাথা নিচের দিকে দিয়ে ধরে আছে। আমি ঘামতে শুরু করেছি। এবার দেখি মেয়েটি বাচ্চাটির দু পা দুটি হাত দিয়ে ধরে টেনে ছিড়তে লাগলো। মেয়েটির লাল চোঁখ আর অদ্ভূত চাওনি কি যে ভয়ংকর, বলে বোঝানো যাবেনা। কাদের তার আপন মনে ড্রাইভ করে চলে যাচ্ছে। ও কি ভয়ংকর। বাচ্চাটির মাথার দিকটার মুখের মাংসগুলো খেতে শুরু করেছে মেয়েটি। মুখে রক্তের লালা ঝরছে। আমি যে আয়নাতে এটি দেখছি মেয়েটি এখনো সেটি খেয়াল করেনি। ভাবতে থাকলাম কাদের যদি এখন এই দৃশ্য দেখে তাহলে একটা অঘটন ঘটে যাবে। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। এবার আমি আয়নার দিকে তাকাই। হঠাত্ করেই আয়নাটির ভিতরে তার লাল চোঁখে চোখ পড়ে যায়। বিভস্য রক্তের লালা জড়ানো চেহারা নিয়ে সে আমার দিকে তাকায়। পুরুষ কন্ঠে উঠে পিছনে তাকাবি না।কিছুক্ষণ পর মেয়েটি বাতাসে মিলে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page