নেতৃত্ব কাকে বলে ? নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য লিখুন । নেতৃত্বের প্রকারভেদ করে তার বিবরণ দিন ।
উত্তর :-নেতৃত্ব হল কোনো একটি দলকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা । ওই ক্ষমতার প্রভাবে দলের অধীনস্থ ব্যক্তিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ক্ষমতা ও আগ্রহ অনুযায়ী বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ করে এবং প্রতিষ্ঠানকে তার লক্ষ্যে পৌঁছোতে সাহায্য করে ।
নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্যাবলি : নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক বিচারবিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায়—
( ক ) নেতৃত্ব হল অনুগামীদের প্রভাবিত করার প্রক্রিয়া ।
( খ ) নেতৃত্ব পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ।
( গ ) নেতৃত্ব অনুসরণকারীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা সঞ্চার করে ।
( ঘ ) নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পথপ্রদর্শন করে ।
( ঙ ) নেতৃত্ব অনুসরণকারীদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক কাজে লিপ্ত থাকে ।
( চ ) নেতৃত্ব অনুসরণকারীদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রেখে চলে ।
নেতৃত্বের প্রকারভেদ : আমরা আগেই আলোচনা করেছি যে , পরিস্থিতির উপর নেতৃত্বের ধরন নির্ভর করে । তবে ব্যবস্থাপনার গ্রন্থপঞ্জিতে 4 ধরনের নেতৃত্বের সন্ধান পাওয়া যায় ।
( ক ) কর্তৃত্বসুলভ নেতৃত্ব ( Authoritarian Leadership ) ।
( খ ) গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব ( Democratic Leadership ) |
( গ ) উদাসীন নেতৃত্ব ( Laissez – faire Leadership ) |
( ঘ ) পিতৃসুলভ নেতৃত্ব ( Paternalistic Leadership ) । আমরা এখন ওই সমস্ত নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব ।
( ক ) কর্তৃত্বসুলভ নেতৃত্বঃ- এই ধরনের নেতৃত্ব তার অনুসরণকারীদের উপর নির্দেশ প্রদান করে । তিনি এইসব ব্যাপারে তাঁর অধস্তনদের সঙ্গে কখনোই আলাপ – আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেন না । বরং তিনি শাস্তি বা ভয় দেখিয়ে কার্যোদ্ধার করার চেষ্টা করেন
( খ ) গণতান্ত্রিক নেতৃত্বঃ এই ধরনের নেতৃত্ব অনুসরণকারীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার পর সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । এই নেতৃত্ব সর্বদাই তাঁর অনুসরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং দলের সমস্ত সিদ্ধান্ত প্রতিটি সদস্যের কাছে পৌঁছে দেন ।
( গ ) উদাসীন নেতৃত্বঃ এই ধরনের নেতৃত্ব তাঁর সমস্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য অধস্তনদের উপর অর্পণ করে নিশ্চিন্তে থাকেন । এই নেতৃত্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে ভয় পান । অনুসরণকারীর নেতৃত্ব থেকে কোনোরূপ অনুপ্রেরণা পায় না । ফলে সংগঠনের লক্ষ্যে পৌঁছোনো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে ।
( ঘ ) পিতৃসুলভ নেতৃত্ব : পরিবারে পিতার যেমন ভূমিকা থাকে , এই ধরনের নেতৃত্ব অনুরূপ ভূমিকা পালন করে থাকেন । এই নেতৃত্ব কিছুটা কৰ্তৃত্বসুলভ ও কিছুটা গণতান্ত্রিক প্রকৃতির । এখানে অনুসরণকারীদের স্বাধীনতাও আছে , আবার নিয়ন্ত্রণও আছে ।
বিদ্যালয়ে নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তাঃ বিদ্যালয়ের কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে নেতৃত্বের প্রয়োজন জরুরি সেগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল
( i ) কার্যকরী পরিকল্পনা রচনার ক্ষেত্রেঃ-
বিদ্যালয়ের উন্নতি সুপরিকল্পনার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল । আমরা আগেই আলোচনা করেছি যে , বিদ্যালয়ে প্রাপ্ত সম্পদগুলির সদ্ব্যবহার করে বিদ্যালয়ের উন্নতি করা যায় । ওইসব জড় সম্পদগুলির সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রচনা করা প্রয়োজন । এই ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা রচনার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের প্রয়োজন হয় ।
( ii ) বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে:- শুধুমাত্র পরিকল্পনা রচনার ক্ষেত্রেই নেতৃত্বের কাজ সীমাবন্ধ নয় , সেই পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত করার জন্য বিভিন্ন কার্যাবলি পরিচালনা করা প্রয়োজন । ওইসব কার্যাবলি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করার জন্য নেতৃত্বের প্রয়োজন হয় ।
( iii ) কর্মবণ্টন ও সুনির্দেশনার ক্ষেত্রেঃ– বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মীদের মধ্যে কর্ম বণ্টন করা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ । ব্যক্তির আগ্রহ , চাহিদা ও মানসিক ক্ষমতা তাদের মধ্যে কর্ম বণ্টিত হওয়ার শর্ত হওয়া উচিত । এতে তাদের কাছ থেকে সর্বাধিক পরিমাণে শ্রম আদায় করা যায় । এখানেই নেতৃত্বের দক্ষতা মূল্যায়ন করার সুযোগ পাওয়া যায় । এ ছাড়াও আরও অনেক ক্ষেত্র আছে সেখানেও নেতৃত্ব সমানভাবে প্রয়োজন । যেমন— শৃঙ্খলাস্থাপন , সমাজের সঙ্গে সম্পর্কস্থাপন , ছাত্রকল্যাণ ইত্যাদি ।