দক্ষতামূলক শিখন কাকে বলে ? দক্ষতামূলক শিখনের প্রকৃতি , স্তর এবং দক্ষতা শিখনে বিদ্যালয়ের সংগঠিত কর্মসূচি সম্পর্কে লিখুন ।
উত্তর :
দক্ষতামূলক শিখন :–
ব্লুমের বক্তব্য অনুযায়ী ব্যক্তির তৃতীয় ধরনের শিখন হল দক্ষতা শিখন । এই ধরনের শিখনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল চলন এবং পেশিসংক্রান্ত কার্যাবলি । জ্ঞানমূলক এবং অনুভূতিমূলক শিখনের মতো দক্ষতা শিখনও অপর দুটি শিখনের সঙ্গে যুক্তভাবে কাজ করে । এই ধরনের শিখনের উদাহরণ হল সাইকেল চড়া , মোটর গাড়ি চালানো , তবলা বাজানো , বলে লাথি মারা , ব্যাট দিয়ে বলে আঘাত করা , টাইপ করা , কম্পিউটারে কাজ করা , স্কেচ অঙ্কন করা ইত্যাদি
। দক্ষতামুলক শিখনের প্রকৃতি
( 1 ) প্রায় সব দক্ষতাই বারংবার শিখনের ফলে কর্মসম্পাদনে উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করে ।
( 2 ) দক্ষতা অর্জনে শারীরিক বিকাশের প্রয়োজন হয় ।
( 3 ) দক্ষতা অর্জনে জ্ঞানমূলক বিকাশের প্রয়োজন হয় ।
( 4) দক্ষতা বিকাশে আগ্রহ এবং প্রেষণার প্রয়োজন ।
( 5 ) দক্ষতা সরল এবং জটিল ধরনের হয় । যেমন — দাঁত মাজা সরল ধরনের এবং লিখন জটিল ধরনের ।
( 6 ) দক্ষতা যখন স্বয়ংক্রিয়তায় উপস্থিত হয় তখন অভ্যাসে পরিণত হয় ।
( 7 ) দক্ষতামূলক শিখন সময় এবং অনুশীলন সাপেক্ষ । বহুদিন যদি কোনো একটি কাজ অনুশীলন করা না হয় তাহলে দক্ষতা হ্রাস পায় ।
( 8 ) জটিল দক্ষতা সমন্বিতমূলক কাজ ।
দক্ষতামূলক শিখনের স্তর
কোনো শিক্ষক বা পিতা – মাতা যদি শিক্ষার্থীকে কোনো কাজে দক্ষ করে তুলতে চান তাহলে দক্ষতা শিখনের স্তরগুলি অনুধাবন করে তাকে অগ্রসর হতে হবে । এই স্তরগুলি হল—
( 1 ) বৌদ্ধিক স্তর : এই স্তরে শিক্ষক বা শিক্ষিকা যে কাজে দক্ষতা অর্জনে সচেষ্ট হয়েছেন সেই কাজের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের উত্তমভাবে বুঝিয়ে দেবেন ।
( 2 ) সংগঠন স্তর : এই স্তরে দক্ষতা অর্জনের কৌশল অনুশীলন করা হয় । প্রথমে দক্ষতা অর্জনের প্রাথমিক কৌশলগুলি শেখানো হয় । দক্ষতাটি জটিল হলে দক্ষতার অংশগুলি বা উপদক্ষতাগুলি একটি একটি করে শেখানো হয় । সংগীতে দক্ষতা অর্জনের জন্য সুর তাল , লয় ইত্যাদি অনুশীলন করানো হয় । এই অনুশীলনের কাজটি খুব সতর্কভাবে করানো প্রয়োজন । কারণ একবার ভুল শেখা হলে পরবর্তী সময়ে সংশোধন করা খুব জটিল হয়ে পড়ে
( 3 ) স্বয়ংক্রিয় বা নির্ভুলতার স্তরঃ দক্ষতা অর্জনের পরেও নিয়মিতভাবে দক্ষতাটি অনুশীলন করতে অনুপ্রাণিত করতে হবে । এর ফলে একদিকে যেমন কাজটি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হবে অন্যদিকে ক্রমশ নির্ভুল হবে । পরে শিশুকে নির্দেশ দিতে হবে যাতে শিশু নিজ ভঙ্গি অনুযায়ী কাজটি সম্পন্ন করতে সচেষ্ট হয় ।
দক্ষতা শিখনে বিদ্যালয়ের সংগঠিত কার্যসূচি
দক্ষতা শিখনে শিক্ষকদের নেতৃত্বে যেসব কর্মসূচি বিদ্যালয়ে সংগঠিত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শারীরশিক্ষা কর্মসূচি এবং সহপাঠক্রমিক কর্মসূচি ।
শারীরশিক্ষা কর্মসূচি :–
শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে শারীরিক বিকাশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । শারীরিক সু – স্বাস্থ্য মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে । এই কারণেই
আমরা বলে থাকি সুস্থ দেহেই সুস্থ মন দেখা যায় । বিদ্যালয়ে যেসব শারীরিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা , ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ইত্যাদি । বিদ্যালয়ে খেলাধুলা এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হল—
• শারীরিক দক্ষতা বিকাশ ।
● দেহ এবং মনের কার্যকারিতার বিকাশ ।
• শৃঙ্খলার বিকাশ ।
• মূল্যবোধের বিকাশ , যেমন — সহযোগিতা , সঠিক বিচার , সুস্থ প্রতিযোগিতা , নিয়ম মেনে চলা ইত্যাদি ।
● দলগত একাত্মবোধ এবং
• নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ । শারীরিক কর্মসূচি সংগঠনে শিক্ষকগণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন । যেমন–
( i ) নির্দিষ্ট বয়সসীমা : শিশুর বয়স এবং শারীরিক বিকাশ অনুযায়ী শারীরিক কর্মসূচি নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন । অন্যথায় অসুবিধার কারণ হতে পারে।
যেমন — অল্পবয়সি শিশুদের দীর্ঘ সময়ের জন্য দৌড়োনো তাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতির কারণ হয়।
( ii ) বৌদ্ধিক বিকাশ : শারীরিক কর্মসূচি নির্দিষ্টকরণে আর – একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার দিক হল শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশ । যেমন — ফুটবল , বাস্কেট বল , ক্রিকেট ইত্যাদি সঠিকভাবে খেলার জন্য প্রয়োজন হল গতি , সময় , দিক এবং স্থান সম্পর্কে জ্ঞান ।
( iii ) আগ্রহ : শারীরিক কর্মসূচি নির্দিষ্টকরণে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিশুর আগ্রহ । কারণে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ক্রীড়ার প্রতি আগ্রহ দেখা যায় । সেই কারণে বিদ্যালয়কে বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সব শিশুরা সেই খেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় । লাগহ । বিভিন্ন
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিঃ–
পূর্বে বিদ্যালয়ে পাঠক্রমিক কর্মসূচির বাইরে খেলাধুলা সমেত অন্য সব কর্মসূচিকেই সহপাঠক্রমিক কর্মসূচি বলে মনে করা হত । বর্তমানে যেহেতু খেলাধুলা শারীরশিক্ষা কর্মসূচি হিসেবে পৃথকভাবে বিবেচনা করা হয় , সেজন্য অন্যান্য কর্মসূচি যেমন — সাহিত্য বিষয়ক Literary ) এবং সাংস্কৃতিক কার্যাবলি ( Cultural Activity ) – কে সহপাঠক্রমিক কর্মসূচি হিসেবে পৃথকভাবে বিবেচনা করা হয় ।