গার্ডেনারের বহুমুখী বুদ্ধি তত্ত্ব ( Gardner’s Theory of Multiple Intelligence )

( 9 ) গার্ডেনারের বহুমুখী বুদ্ধি তত্ত্ব ( Gardner’s Theory of Multiple Intelligence ) :

হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের নিউরােসায়েন্সের অধ্যাপক এবং মনস্তাত্ত্বিক ড . হাওয়ার্ড গার্ডনার 1983 সালে বহুমুখী বুদ্ধিতত্ত্বের ( Theory of Multiple Intelligence , MI ) কথা উল্লেখ করেন । সাধারণ বুদ্ধির ধারণা এবং বুদ্ধিকে একটি সংখ্যা ( বুদ্ধ্যঙ্ক ) দ্বারা ব্যস্ত করার তীব্র বিরোধিতা তিনি করেন । তিনি মনে করেন , প্রতিটি বুদ্ধির একটি সূচক আছে যা পরস্পর নিরপেক্ষ ।

গার্ডনার মনে করেন , মানুষের মধ্যে ন্যূনতম সাত প্রকারের বুদ্ধি আছে । বাহ্যিক পরিবেশে সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যার প্রতিফলন ঘটে । ব্যক্তি মাত্রেই এই সাত রক বুদ্ধির প্রোফাইলের অধিকারী , যদিও প্রত্যেক ব্যক্তির শত রকম বুদ্ধির অধিকারী , কিন্তু যেমন দুটি ব্যক্তির আঙুলের ছাপ কখনই এক হয় না , কোনাে দুই ব্যক্তির রূপও এক হয় না । নিম্নে সাত রকম বুদ্ধির উল্লেখ করা হল ।



ভাষাগত বুদ্ধি ( Linguistic Intelligence ) : মনের ভাবকে প্রকাশ করতে এবং অন্যকে বুঝতে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতাকে ভায়াগত বুদ্ধি বলে । এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় লিখিত ও কথা বলা ভাষার প্রতি অনুভূতিশীলতা , ভাষা শিখন এবং লক্ষ্য অর্জনে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা । নিজেকে প্রকাশ করতে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা এবং তথ্য সংরক্ষণের উপায় হিসাবে ভাষার ব্যবহার এই বুদ্ধির অন্তর্ভুক্ত । গার্ডনারের মতে লেখক , কবি , আইনজীবি এবং বক্তাগণের মধ্যে এই শ্রেণির বুদ্ধি অধিক পরিমাণে দেখা যায।

💠 ঘুক্তি গাণিতিক বৃদ্ধি ( Logical – mathematical Intelligence ) :

যুক্তিভিত্তিক সমস্যা বিশ্লেষণে , গাণিতিক কাজে এবং বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানে এই বুদ্ধির প্রয়ােজন । গার্ডনারের মতে , এই বুদ্ধি প্যাটার্ন অনুসন্ধানে , অবরােহী যুক্তিদানে এবং যুক্তিপূর্ণ চিন্তার প্রয়ােজন হয় । এই বুদ্ধি বিজ্ঞান এবং গাণিতিক চিন্তনে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় । বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ যেভাবে কাজ করেন এই বুদ্ধি সেইভাবে সক্রিয় হয় ।

সংগীত বা ছদাশ্রয়ী বুদ্ধি ( Musical / Rytlinic Intelligence ): সংগীতের ভাষায় চিন্তা করা , সংগীতের তাল বােঝার এবং সেই নিয়ে কাজ করার ক্ষমতায় এই বুদ্ধির প্রয়ােজন হয় । যেসব ব্যক্তির এই বুদ্ধি অধিক তারা শুধু সহজেই সংগীত মনে রাখে তাই নয় । তারা মন থেকে সংগীত সৃষ্টি করতে পারে ।

শারীরিক বা দেহ সঞ্চালনগত বুদ্ধি ( Bodily / Kinesthetic Intelligence ): শারীরিক বা দেহ -সঞ্চালনগত বুদ্ধি হল যে মানসিক ক্ষমতা যা দৈহিক সালনগুলির সঞ্চালনগুলি সমন্বয় সমন্বযসাধন করে । অ্যাথলেটিক , সম্পাদনমুখী শিল্প বিশেষ করে সংগীত এবং নৃত্যে এই ধরনের বুদ্ধির অধিক প্রয়ােগ হয় ।



খানিক বুদ্ধি ( Spatial Intelligence ) : মনের মধ্যে স্থানিক জগতের প্রতিচ্ছবি গড়ে তােলার ক্ষমতাই হল এই বুদ্ধি । একটা বৃহৎ মুক্ত বা বদ্ধ ক্ষেত্রকে বােঝা এবং তাকে সঠিকভাবে প্রয়ােজন মতাে ব্যবহার করার ক্ষমতা হল স্থানিক বুদ্ধি । একজন নাবিক বা একজন পাইলট মুক্ত সমুদ্র বা মুক্ত আকাশে জাহাজ বা উড়ােজাহাজ চালায় বা বদ্ধ স্থানে একজন দাবাড়ু চাল দেয় সবই স্থানিক বুদ্ধির সাহায্যে । পরিবেশের কিছু বৈশিষ্ট্যকে জানতে , শ্রেণিকরণ করতে এবং সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে এই বুদ্ধি ব্যক্তিকে সাহায্য করে ।

অন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি ( Intrapersonal Intelligence ) নিজেকে বুঝতে নিজের অনুভূতি , ভয় এবং প্রেষণাকে সম্মান দিতে যে ক্ষমতার প্রয়ােজন তাকে বলে অন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি । গার্ডেনারের মতে , নিজেকে কার্যকারী মডেল হিসেবে বিবেচনা করা এবং তদনুযায়ী নিজের জীবনকে পরিচালিত করা ।

💠 আন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি ( Inter Personal Intelligence ) : অন্যান্য ব্যক্তির ইচ্ছা , প্রেষণা , উদ্দেশ্য বােঝার ক্ষমতাই হল আন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি । অন্যান্যদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে এই বুদ্ধি সাহায্য করে । এই বুদ্ধি আমাদের সকলেরই প্রয়ােজন — তবে শিক্ষাবিদ , সেলসম্যান , ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতা ও পরামর্শদাতাদের বা যাদের অন্যান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করতে হয় তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । সম্প্রতি গার্ডেনার ( 1998 ) আরও তিনটি শ্রেণির বুদ্ধি যুক্ত করেছেন ।

এই তিনটি হল —
(i) প্রাকৃতিক ( Natural ) — সজীব পদার্থকে পৃথক করা এবং প্রাকৃতিক জগতের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের প্রতি অনুভূতিশীল হওয়া ।
( ii ) আধ্যাত্মিকতা ( Spiritual ) — আধ্যাত্মিক এবং পারমার্থিক বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব আরােপ ।
( iii ) প্রাকৃতিক ( Existential ) — জীবন , মৃত্যু এবং চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করার ক্ষমতা ।
অনেকে গার্ডেনারের অন্তর্ব্যক্তি এবং আন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি সম্পর্কে সমালােচনা করেছেন । তাঁদের মতে বুদ্ধির সঙ্গে এর কোনাে সম্পর্ক নেই , এগুলি ব্যক্তিত্বের সংলক্ষণ বা অন্যান্য ধরনের আচরণ যার সঙ্গে বুদ্ধির কোনাে সম্পর্ক নেই ।



অনেকে বলেন , গার্ডেনার–কল্পিত কিছু বুদ্ধিকে ( যেমন — সংগীত ) বিশেষ প্রতিভা বলা যায় , বুদ্ধি নয় । এই আলােচনা বুদ্ধিকে আবার অতীত দিনের সংজ্ঞা বিতর্কে নিয়ে যায় । তবে এটা সত্য যে , গার্ডেনারের বহুবিধ বুদ্ধিতত্ত্ব শীঘ্রই জনপ্রিয়তা লাভ করে বিশেষ করে বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে ।

গার্ডেনার তার তত্ত্বের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের কী উপায়ে পাঠদান এবং মূল্যায়ন করা হবে ।সে সম্পর্কে অনেক সংস্কারের কথা উল্লেখ করেছেন।

বর্তমানে প্রচলিত বিদ্যার্জনের প্রবণতা অভীক্ষা বা Scholastic Aptitude Test ( SAT ) এবং I.Q . সম্পর্কে তার অভিমত হল , এই ধরনের অভীক্ষায় প্রধানত ভাষাভিত্তিক বুদ্ধি , এবং যুক্তিভিত্তিক গাণিতিক বুদ্ধির উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয় ।



বুদ্ধির অন্যান্য উপাদানগুলি । উপেক্ষিত হয় । স্থানিক এবং আন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি যথেষ্ট পরিমাণে থাকা সত্ত্বেও বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থায় আশানুরূপ সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয় না ।এই কারণেই গার্ডনার বলেছেন যে , শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা পরিমাপ কালে বিভিন্ন প্রকারের বুদ্ধির উপর সমগুরুত্ব প্রদান করা প্রয়ােজন । গার্ডেনারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল , তিনি শিখনের ৪ টি কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন ।

কোনাে শিক্ষক যদি গতানুগতিক ভাষাভিত্তিক এবং যুক্তিভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পাঠদানে সফল না হন । সেক্ষেত্রে তিনি অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের নিকট বিষয়টিকে আরও কার্যকরভাবে তুলে ধরতে পারেন । চিত্তন , শিখন এবং সৃজনশীলতাকে আরও সক্সিয় এবং উন্নত করার লক্ষ্যে গার্ডেনার তার তত্ত্বের ভিত্তিতে Project Zero নামে । এক কর্মসূচি গ্রহণ করেন ।

এই কর্মসূচিতে গার্ডেনার শিল্প , মানবিক এবং বিজ্ঞান বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরােপ করেন এবং তার প্রস্তাবিত সব ধরনের বুদ্ধিকেই শিক্ষণ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় না। বিষয়টি আমেরিকার শিক্ষা জগতে বিশেষ সমাদৃত হয় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে Project SUMIT নামে ( School Using Multiple Intelligence Theory ) ।



একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে যে , যে সমস্ত বিদ্যালয় গার্ডেনারের বহুবিধ তত্ত্বকে অনুসরণ করে পঠন – পাঠন ব্যবস্থা পরিচালিত করেছে সেই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অধিক সফলতা অর্জন করেছে । অভিভাবকদের সক্রিয় অংশ গ্রহণ এবং শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে গেছে ।

Related posts:

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবন কথা
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী : 2024
চন্দ্রযান-3 : চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ ভারত
GENERAL STUDIES : TEST-2
GENERAL STUDIES : 1
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: 8ই সেপ্টেম্বর
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
তপনের জীবনে তার ছোটো মাসির অবদান আলোচনা করো।
সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝ ?
আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায় ? এটি কয়প্রকার ও কী কী ?
একটি সাদা কাগজকে কীভাবে তুমি অস্বচ্ছ অথবা ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করবে ?
ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অস্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অপ্রভ বস্তুও কি আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে?
বিন্দু আলোক - উৎস কীভাবে পাওয়া যেতে পারে ?
বিন্দু আলোক - উৎস ও বিস্তৃত আলোক - উৎস কী ?
অপ্রভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বপ্নভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সবকিছু দেখতে পাই , কিন্তু রাত্রিবেলা আলোর অনুপস্থিতিতে কোনো জিনিসই দেখতে পা...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page