প্রশ্ন : ‘গণতন্ত্র’ কাকে বলে ? শিক্ষায় গণতন্ত্রের প্রভাব লিখুন ।
উত্তর : গণতন্ত্র বা ডেমোক্রেসি শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দের সমন্বয় । ‘Demos’ যার অর্থ হল । জন সাধারণ এবং ‘Kartes’ যার অর্থ হল ক্ষমতা অর্থাৎ ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্র হল ‘জনগণের ক্ষমতা’ । গণতন্ত্র সম্পর্কে আধুনিক ধারণা সর্বপ্রথম পাওয়া যায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের বক্তব্য থেকে , গণতন্ত্রে ক্ষমতার অধিকারী হল জনগণ যেখানে জাতি , বর্ণ এবং লিঙ্গের কোনো ভেদ নেই ।
শিক্ষায় গণতন্ত্রের প্রভাব আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্য শিক্ষার বিভিন্ন দিকে গণতান্ত্রিক নীতির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা যেতে পারে ।
গণতন্ত্র এবং শিক্ষার লক্ষ্য : 1953 খ্রিস্টাব্দের মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনে উল্লেখ করা হয়েছে যে , ভারতবর্ষে শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল সুযোগ্য গণতান্ত্রিক নাগরিক গড়ে তোলা । গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় বৌদ্ধিক বিকাশের অর্থ হল—
(1) শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের চিন্তন ক্ষমতার বিকাশসাধন ।
(2) শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্ত – মনের বিকাশসাধন ।
(3) শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে তারা তাদের মতামত লিখিত বা বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হয় ।
(4) শিক্ষার লক্ষ্য হল সেই ক্ষমতা গড়ে তোলা যাতে শিক্ষার্থীরা মুক্ত মনে কোনো আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারে এবং মত বিনিময় করতে সক্ষম হয় গণতান্ত্রিক শিক্ষার সামাজিক লক্ষ্যগুলি হল—
(1) কমিউনিটিতে মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করা ,
(2) সামাজিক ন্যায়ের প্রতি আস্থা স্থাপন ।
(3) দেশাত্মবোধের বিকাশ ।
(4) আন্তর্জাতিকতা বোধের বিকাশসাধন ।
গণতন্ত্র এবং পাঠক্রম : নিম্নে উল্লেখিত নীতিগুলি হল গণতান্ত্রিক পাঠক্রমের ভিত্তি—
(1) জনগণের চাহিদা এবং আশা – আকাঙ্ক্ষা পুরণের সঙ্গে পাঠক্রমের বিষয়গুলি সম্পর্কিত হবে ।
(2) পাঠক্রম বৈচিত্র্যপূর্ণ হবে যাতে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ আগ্রহ এবং প্রবণতা অনুযায়ী কোর্স পছন্দ করার সুযোগ পায় ।
(3) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থার নীতি ।
(4) পাঠক্রম প্রণয়নে বৃত্তির প্রতি নজর দিতে হবে । নির্দিষ্ট পাঠক্রম শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা যাতে বৃত্তি গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজেকে সামাজিকভাবে প্রয়োজনীয় উৎপাদনশীল ব্যক্তি হিসেবে মনে করতে পারে ।
(5) শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষা অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষা – শিখন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় ।
গণতন্ত্র এবং শিক্ষা – শিখন প্রক্রিয়া : শিক্ষা – শিখন পদ্ধতিগুলির বৈশিষ্ট্য হবে সক্রিয়তা ভিত্তিক , শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক , জীবনকেন্দ্রিক এবং অংশগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগুলি হল ( 1 ) দলগত কাজ । ( 2 ) প্রকল্প পদ্ধতি । ( 3 ) সামাজিক পুনরাবৃত্তি , ভূমিকা অভিনয় , ক্রীড়া ইত্যাদি । ( 4 ) সার্ভে পদ্ধতি । ( 5 ) এনকোয়ারি পদ্ধতি এবং কৌশল । ( 6 ) নির্মাণবাদ ভিত্তিক ।
গণতন্ত্র এবং শৃঙ্খলা : গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা হবে আত্মশৃঙ্খলা এবং সামাজিক শৃঙ্খলা । এমন সামাজিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা কোনো কাজে শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় , যেমন – শিক্ষার্থী সংসদ , শ্রেণি কমিটি , স্বায়ত্তশাসন ( Self Government ) ইত্যাদি । এ ব্যতীত বিভিন্ন রকম সহ – পাঠক্রমিক কার্যাবলিতে ( যেমন — সামাজিক , সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ) অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমবেতভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে ধৈর্য , সকলের মতামত শ্রবণ , সহযোগিতার মনোভাব ইত্যাদি গড়ে ওঠে ।
গণতন্ত্র এবং শিক্ষক : শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে শিক্ষকের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । এর জন্য প্রথমেই যা প্রয়োজন তা হল গণতন্ত্রের পূজারি হিসেবে শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের নিকট তুলে ধরতে হবে । তিনি ব্যক্তি শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত মর্যাদা দেবেন । তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করে শিক্ষা – শিখন প্রক্রিয়া পরিচালনা করবেন এবং শিক্ষার্থীদের মতামতের উপর গুরুত্ব আরোপ করবেন । সর্বোপরি নিরপেক্ষতা অবলম্বন করবেন ।
গণতন্ত্র এবং শিক্ষা প্রশাসন : বিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ক্ষমতা এবং দায়িত্ব বণ্টন করবেন । ‘ বিকেন্দ্রীকরণ ’ এবং সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে প্রশাসনের চাবিকাঠি ।
গণতন্ত্র এবং বিদ্যালয় : গণতান্ত্রিক নীতি অনুযায়ী বিদ্যালয়ের কার্যাবলি হল—
(1) শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক নীতিগুলিকে সম্যকভাবে বোঝাতে হবে ।
( 2 ) গণতান্ত্রিক জীবনধারা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা ।
( 3 ) সহযোগিতামূলক কার্যাবলিতে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তোলা যার মাধ্যমে গণতন্ত্র রূপ পায় ।