কুমুদরঞ্জন মল্লিক

✳️ কুমুদরঞ্জন মল্লিক ✳️

🟣 উনবিংশ শতকে সমগ্র বাংলা সাহিত্য জগত যখন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের কাব্যগাথার ছটায় উদ্ভাসিত , ঠিক সেই সময় নিজের স্বতন্ত্র লেখনী প্রতিভা নিয়ে কাব্য জগতে আবির্ভূত হলেন কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক। তিনি ১৮৮৩ সনের ৩রা মার্চ অবিভক্ত বাংলার, বর্ধমান জেলার কোগ্রাম নামক গ্রামে এক বৈদ্য ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

🟣 ছাত্র হিসাবে তিনি খুবই মেধাবী ছিলেন। ১৯০৫ সনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন এবং বঙ্কিমচন্দ্র স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন।পরবর্তীকালে বর্ধমানের মাথ্রন নবীনচন্দ্র বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন এবং এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার আলোকেই পরবর্তীকালে বাংলার আর এক স্বনামধন্য কবি বিদ্রোহী কবি রূপে আত্মপ্রকাশ করেন । কথিত আছে তাঁর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া অজয় ও কুনুর নদীই তাঁর কবিতার মুখ্য প্রেরণা।

🟣 তাঁর কবিতা মুখ্যত বৈষ্ণব ভাবনায় সম্পৃক্ত হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গ্রাম বাংলার প্রতি ভালবাসা তাঁর কবিতাগুলিকে করেছে এক অনবদ্য সৃষ্টির আধার। তাঁর কবিতায় ধর্মের উপস্থিতি থাকলেও তা ছিল ধর্মীয় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে । তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল – উজানী (১৯১১), বনতুলসী (১৯১১), অজয়(১৯২৭), স্বর্ণ সন্ধ্যা (১৯৪৮) প্রভৃতি।

🟣 পল্লী-প্রিয়তার সঙ্গে বৈষ্ণবভাবনা যুক্ত হয়ে তার কবিতার ভাব ও ভাষাকে স্নিগ্ধতা ও মাধুর্য দান করেছে। ‘কপিঞ্জল’ ছদ্মনামে তিনি ‘চুন ও কালি’ নামে ব্যঙ্গকাব্য রচনা করেন।

🟣 তবে তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মকে কাব্য জগতে আবদ্ধ না রেখে নাট্য রচনার দিকেও প্রসারিত করেছিলেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য নাটক হল – দ্বারাবতী (১৯২০)। তিনি জগত্তারিণী স্বর্ণ পদক এবং স্বাধীনতার পর ভারত সরকার দ্বারা পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন ।

🟣 কুমুদরঞ্জন ১৯০১ সালে এন্ট্রান্স, ১৯০৩ সালে রিপন কলেজ থেকে এফএ এবং ১৯০৫ সালে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। পরে বর্ধমানের মাথরুন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন এবং সেখান থেকেই ১৯৩৮ সালে প্রধান শিক্ষকরূপে অবসর গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, কাজী নজরুল ইসলাম ওই স্কুলে তাঁর ছাত্র ছিলেন।

🟣 কুমুদরঞ্জনের কবিত্বশক্তির বিকাশ ঘটে বাল্যকালেই। পল্লীর মানুষ ও প্রকৃতি তাঁর কাব্যের প্রধান বিষয়। তাঁর কবিতায় নির্জন গ্রামজীবনের সহজ-সরল রূপ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। পল্লী-প্রবণতার সঙ্গে বৈষ্ণবভাবুকতা যুক্ত হয়ে তাঁর কবিতার ভাব ও ভাষাকে স্নিগ্ধতা ও মাধুর্য দান করেছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘কুমুদরঞ্জনের কবিতা পড়লে বাঙলার গ্রামের তুলসীমঞ্চ, সন্ধ্যাপ্রদীপ, মঙ্গলশঙ্খের কথা মনে পড়ে।’

🟣 তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হলঃ

✅ শতদল (১৯০৬ – ০৭)
✅ বনতুলসী (১৯১১)
✅ উজানী (১৯১১)
✅ একতারা (১৯১৪)
✅ বীথি (১৯১৫)
✅ চুন ও কালি (১৯১৬)
✅ বীণা (১৯১৬)
✅ বনমল্লিকা (১৯১৮)
✅ কাব্যনাট্য দ্বারাবতী (১৯২০)
✅ রজনীগন্ধা (১৯২১)
✅ নূপুর (১৯২২)
✅ অজয় (১৯২৭)
✅ তূণীর (১৯২৮)
✅ স্বর্ণসন্ধ্যা (১৯৪৮)

🟣 তাঁর অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থটি হল ‘গরলের নৈবেদ্য’। এটি সোমনাথ মন্দির সম্পর্কিত ১০৮ টি কবিতার সংকলন হিসাবে প্রকাশ।


🟣 তাঁর পৈতৃক নিবাস একই জেলার শ্রীখন্ড গ্রামে। পিতা পূর্ণচন্দ্র মল্লিক ছিলেন কাশ্মীর রাজসরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মাতা ছিলেন সুরেশকুমারী দেবী।

🟣 সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি কলকাতা ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ‘বঙ্কিমচন্দ্র স্বর্ণপদক’ (১৯০৫) ও ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ এবং ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত হন।

🟣 ১৯৭০ সালের ১৪ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

Related posts:

তোত্তে- চানের আডভেঞ্চার - তেৎসুকো কুরোয়ানাগি
লিঙ্গ : পুংলিঙ্গ , স্ত্রীলিঙ্গ এবং ক্লীবলিঙ্গ ।
ভাষা শিক্ষণের নৈপুণ্যতা
আদর্শ বলা / আদর্শ কথন
স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির সঠিক উচ্চারণ
যুক্তবর্ণের উচ্চারণ : উষ্ট্র , রাষ্ট্র , ট্রেন , চিত্ত , বিত্ত , মত্ত , যুক্ত , রক্ত , শক্ত, যত্ন , ...
যুক্তবর্ণের উচ্চারণ : দ্বন্দ্ব , বিদ্বান , বিদ্বেষ , বদ্ধ , উদ্ধার
অনুলিখন vs শ্রুতিলিখন
কীভাবে শ্রুতিলিখন শ্রেণিকক্ষে শেখানাে যায় ?
বলা , পড়া ও লেখার ক্ষেত্রে যতিচিহ্নের যথাযথ ব্যবহার রীতি
বাংলা ব্যাকরণের কিছু প্রশ্নোত্তর
বলা , পড়া ও লেখার ক্ষেত্রে যতিচিহ্নের যথাযথ ব্যবহার রীতি
কীভাবে শ্রুতিলিখন শ্রেণিকক্ষে শেখানাে যায় ?
অনুলিখন vs শ্রুতিলিখন
কীভাবে হাতের লেখা শেখানাে হবে
ভালাে হস্তাক্ষরের বৈশিষ্ট্য
হাতের লেখা অনুশীলনের উদ্দেশ্য
স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির সঠিক উচ্চারণ
ভালাে কথাবার্তা শেখানাের কৌশল
আদর্শ বলা / আদর্শ কথন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page