আকবর ( 1556-1605 খ্রিষ্টাব্দ )

“◼️ আকবর ( 1556-1605 খ্রিষ্টাব্দ ) : 

 

🔹হুমায়ুনের আকস্মিক মৃত্যুতে মাত্র 13 বছর বয়সে পাঞ্জাবের কালানৌরে আকবরের অভিষেক হয় । প্রথমদিকে তাঁর অভিভাবক ছিলেন বৈরাম খান । বৈরাম খানের নেতৃত্বেই মুঘলরা 1556 সালে দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে আফগানদের পরাজিত করে । পরে বৈরাম খানকে সরিয়ে আকবর নিজের হাতে ক্ষমতা তুলে নেন । পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে আকবর – বৈরাম বাহিনীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মেওয়ার ছাড়া । শের শাহ – র ভ্রাতুস্পুত্র মহম্মদ আদিল শাহ – র মন্ত্রী / সেনাপতি হিমু বা হেমচন্দ্র ।

 

🔹আকবর ছিলেন অসাধারণ সমরনায়ক । তাঁর আমলে মুঘল সৈন্যবাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব সমগ্র ভারতে স্বীকৃত হয় । মেওয়ার ছাড়া সব কয়টি রাজপুত রাজ্য একে একে তাঁর কাছে পরাজিত হয়ে আনুগত্য স্বীকার করে , কিন্তু আকবর তাঁদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক ও মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মুঘল সাম্রাজ্যকে আরও শক্তিশালী করে তােলেন । 1576 সালে গােগুন্ডা বা হলদিঘাটির যুদ্ধে মেওয়ারের রাণা প্রতাপও মুঘলদের কাছে পরাজিত হন । এই যুদ্ধে বাদশাহের অন্যতম সেনাপতি ছিলেন মানসিংহ । আকবর গুজরাট ( 1572-73 সাল ) ও বাংলা ( 1574-76 ) জয় করেন । 1595 সালের মধ্যে তিনি কাশ্মীর , সিন্ধ , উড়িষ্যা , মধ্য ভারত এবং কান্দাহার জয় করেন । দাক্ষিণাত্যে তিনি খান্দেশ , বেরার ও আহম্মদনগরের অংশবিশেষ জয় করেন ।

 

🔹শুধুমাত্র সামরিক বিজয় নয় আকবর প্রশাসনিক কাঠামােও সুবিন্যস্ত করেন । এর উল্লেখযােগ্য দিকগুলি ছিল — অভিজাতদের কাঠামােগত বিন্যাস ও সামরিক সংগঠনের জন্য মনসবদারি ব্যবস্থা , রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার ( সমগ্র জমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ধারণ ) ও রাজস্ব সংগ্রহের জন্য জায়গীরদারি ব্যবস্থা এবং একটি বিস্তৃত প্রশাসনিক কাঠামাে তৈরি । রাজস্ব সংস্কার করা হয়েছিল অনেকাংশেই শের শাহের অনুসরণে এবং এক্ষেত্রে তােডরমলের বিশেষ অবদান ছিল ।

 

🔹সাম্রাজ্যের সমর্থনভিওি বিস্তৃত করায় আকবরের ধর্মীয় নীতির বিশেষ অবদান ছিল । শুধুমাত্র হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মের শাসকগােষ্ঠীকে মুঘল প্রশাসনে সামিল করাই নয় , আকবর অন্যান্য ধর্ম ও দর্শন বিষয়েও বিশেষ আগ্রহ দেখাতেন । ফতেপুর সিক্রিতে নির্মিত ইবাদৎখানায় ( 1575 সালে ) প্রতিদিন ধর্মচর্চা হ’ত । আকবর 1579 সালে ‘ মাহজারনামা ঘােষণা করেন । এই ঘােষণায় আকবর বলেন যে , সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ( ধর্মীয় বিষয়েও  ) হবেন সম্রাট — এর ফলে মুসলিম ধর্মীয় শ্রেণির গুরুত্ব খর্ব করা হয় । এর আগেই আকবরের নামে ‘ খুতবা ’ পাঠ করা হয় । শেষপর্যন্ত 1582 সালে আকবর একটি সামাজিক – নীতিগত বিধিনিয়ম । রূপে তৌহিদ – ই – ইলাহি ( দীন – ই – ইলাহি ) চালু করেন । সাম্রাজ্যের সরকারি নীতি হিসেবে ‘ সুল – ই – কুল ’ বা সকলের জন্য শান্তির কথাও বলেন আকবর ।

 

🔹আকবরের আমলেই মুঘল সংস্কৃতির গৌরবের সূচনা হয় ও উল্লেখযােগ্য উচ্চতায় পৌছােয় । আকবরের সভায় উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত কবি ফৈজি , আব্দুর রহমান খান – ই – খানান , বিখ্যাত সূংগীতজ্ঞ তানসেন , ঐতিহাসিক নিজামউদ্দিন বদায়ুনী , আবুল ফজল | স্থাপত্যের দিক থেকে হুমায়ুনের সমাধি , ফতেপুর সিক্রি , আগ্রা দুর্গ , লাহাের ও এলাহাবাদ দুর্গ , বুলন্দ দরওয়াজা , যােধপুর মহল স্থাপিত হয় । চিত্রকলার দিক থেকেও আকবরের সময় উল্লেখযােগ্য অগ্রগতি হয় ।

 

◼️ জাহাঙ্গির ( 1605-1627 খ্রিষ্টাব্দ ) :

 

🔹খসরুর বিদ্রোহের দমন করে জাহাঙ্গির 1605 সালে সম্রাট হন । তাঁর আমলে ( আকবরের ) রাজপুতদের সঙ্গে মৈত্রীর নীতি অক্ষুন্ন থাকে । যোধাবাঈয়ের পুত্র জাহাঙ্গির নিজেও রাজপুত কন্যা মানুবাঈকে বিবাহ করেন । শিখ গুরু অর্জুনদেবকে খসরুকে সাহায্যের অভিযােগে হত্যা করা হয় , কিন্তু ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতি অব্যাহত থাকে ।

 

🔹জাহাঙ্গির বাংলায় মুঘল রাজ সুদৃঢ় করেন । উত্তর ভারতের বিভিন্ন ছােটোখাটো রাজ্য ও গােষ্ঠীপতিদের নিয়ন্ত্রণে আনেন । অমর সিংকে পরাজিত করে মেওয়ারকেও আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করেন । জাহাঙ্গির কাংড়া জয় করেন , কিন্তু কান্দাহার তাঁর হাতছাড়া হয় । তাঁর রাজত্বের শেষদিকে রাজপুত্র খুররম ( পরবর্তীকালে শাহজাহান ) বিদ্রোহ করেন । তাঁর আমলেই স্যার টমাস রো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে বাণিজ্যের সনদ লাভ করেন । 1615 খ্রিষ্টাব্দ ) ।

 

🔹জাহাঙ্গিরের আমলে তার স্ত্রী নুরজাহান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন । জাহাঙ্গির ও নুরজাহানের নামে মিলিতভাবে মুদ্রাও অঙ্কন করা হয় । জাহাঙ্গিরের আমলে মুঘল স্থাপত্য এবং বিশেষ করে চিত্রকলা খ্যাতির শিখরে পৌঁছায় । ফার্সিতে জাহাঙ্গির তাঁর আত্মজীবনী ‘ তুজুক – ই – জাহাঙ্গিরি ’ লেখেন ।

 

◼️ শাহজাহান ( 1627-1658 খ্রিষ্টাব্দ ) :

 

🔹জাহাঙ্গিরের মৃত্যুতে সম্রাট হন শাহজাহান , তাঁর মাতাও রাজপুত কন্যা ছিলেন ( জগৎ গোঁসাই ) । মহিষী আরজুমন্দ বানু বেগম বা মুমতাজ মহলের স্মৃতিতে শাহজাহান তাজমহল নির্মাণ করেন , যা মূঘল স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন রূপে বিশ্বখ্যাত । পারস্যের বিখ্যাত স্থপতি মির্জা ইশার উপর তাজমহল নির্মাণের ভার দেওয়া হয় । বিখ্যাত শিল্পী বেবাদল খাঁ-র তত্ত্বাবধানে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজাহান তৈরি করেন তার ময়ূর সিংহাসন ( তখৎ – তাউস ) । পরবর্তীকালে ( 1739 সালে ) পারস্যের রাজা নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করে এই সিংহাসন ও বিখ্যাত কোহিনূর হিরে পারস্যে নিয়ে যান । পুরােনাে দিল্লি বা শাহজাহানাবাদ ( লালকেল্লা – সহ ) । শাহাজাহানেরই নির্মাণ । শাহজাহানাবাদের দেওয়ান – ই – খাস ও দেওয়ান – ই – আম ; দিল্লীর জাম – ই – মসজিদ , আগ্রার মােতি মসজিদ ছিল অনবদ্য শিল্প সৃষ্টি । তাঁর আমলে মুঘল স্থাপত্য গৌরবের চরম পর্যায়ে পৌঁছােয় ।

 

🔹শাহজাহান রাজত্বের প্রথমেই খান জাহান — লোদি ও বন্দেলাদের বিদ্রোহ দমন করেন । দাক্ষিণাত্যে তিনি আহম্মদ‌্নগর দখল করেন ; বিজাপুর ও গােলকুণ্ডাকে আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করে দাক্ষিণাত্য সমস্যার সমাধান করেন । পুত্র

ঔরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যের প্রধান নিযুক্ত করেন ।

 

🔹শাহজাহান কান্দাহার পুনরুদ্ধার করেন ( 1638 সাল ) , কিন্তু 1649 সালে কান্দাহার আবার হাতছাড়া হয়ে যায় । বলখ‌্ ও বাদাকশান অভিযানও সাফল্যলাভে ব্যর্থ হয় , তবে আসাম ( কামরূপ ) মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয় ।”

Related posts:

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবন কথা
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী : 2024
চন্দ্রযান-3 : চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ ভারত
GENERAL STUDIES : TEST-2
GENERAL STUDIES : 1
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: 8ই সেপ্টেম্বর
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
তপনের জীবনে তার ছোটো মাসির অবদান আলোচনা করো।
সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝ ?
আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায় ? এটি কয়প্রকার ও কী কী ?
একটি সাদা কাগজকে কীভাবে তুমি অস্বচ্ছ অথবা ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করবে ?
ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অস্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অপ্রভ বস্তুও কি আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে?
বিন্দু আলোক - উৎস কীভাবে পাওয়া যেতে পারে ?
বিন্দু আলোক - উৎস ও বিস্তৃত আলোক - উৎস কী ?
অপ্রভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বপ্নভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সবকিছু দেখতে পাই , কিন্তু রাত্রিবেলা আলোর অনুপস্থিতিতে কোনো জিনিসই দেখতে পা...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page