প্রশ্ন : অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় মূল্যায়নের প্রকৃতি ও তার ব্যবহার লিখুন ।
উত্তর : বিশেষ ধরনের শিক্ষার্থীদের শিখনের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত পারদর্শিতার পরিবর্তে প্রেষণা , আত্মবিশ্বাস এবং তাদের প্রতি আস্থা স্থাপন ইত্যাদি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন । কীভাবে এই ধরনের শিক্ষার্থীদের শিখনে অগ্রগতির মূল্যায়ন করা হবে তা নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের অসুবিধাগুলি বিচার করার পর ।
কীভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিখনে মূল্যায়ন বা অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যায় সে সম্পর্কে কয়েকটি উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হল । যথা—
(1) অপ্রথাগত অ্যাসেসমেন্ট : শিক্ষার্থীদের অপ্রথাগত মূল্যায়নের সুবিধা হল , এখানে অর্জনযোগ্য লক্ষ্য স্থির করা হয় । এই ধরনের মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা বিচার করার সুযোগ থাকে । সফলতার সঙ্গে শ্রেণিকক্ষের কাজ এবং নিয়মিত উপস্থিতি , গৃহকাজ সম্পন্ন করা , বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ ইত্যাদি হল অপ্রথাগত মূল্যায়নের উপাদান (Factors) । এইগুলি শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক আচরণকে শক্তিশালী করে (Reinforce) এবং বিভিন্ন কাছে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে । অপ্রথাগত মূল্যায়নের সুবিধা হল এখানে সকলের জন্য । আইনযোগ্য লক্ষ্য স্থির করা হয় এবং যাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ চাহিদা তাদের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বনের প্রয়োজন হয় না । যেসব শিক্ষার্থী তাদের কাজে সফলতা অর্জন করেছে তাদেরকে পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে যা পারদর্শিতার পরিমাপ বলে গণ্য হবে ।
(2) পোর্টফোলিও অ্যাসেসমেন্ট : বর্তমান সময়ে পোর্টফোলিও সংরক্ষণের মাধ্যমে । শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি এবং শিখন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাবলি সংগ্রহ করেন । Paulson এবং Meyer (1991)-এর মতে শিক্ষক বা শিক্ষার্থীদের যারা মূল্যায়ন করেন তারা যখন শিক্ষার্থীদের কার্যাবলি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীর শিখন পরিমাপের প্রমাণপত্র হিসাবে ব্যবহার করেন তাকেই পোর্টফোলিও অ্যাসেসমেন্ট বলে ।
(3) স্বয়ং মূল্যায়ন এবং সহপাঠীদের দ্বারা মূল্যায়ন : স্বয়ং মূল্যায়ন (অ্যাসেসমেন্ট) শিক্ষার্থীদের নিকট একটা সুযোগ , যেখানে শিক্ষার্থী নিজেই নিজের মূল্যায়নের অংশীদার । এই ব্যবস্থা একদিকে যেমন শিক্ষার্থীর নিকট প্রেরণাদায়ক , অন্যদিকে তেমনি শিক্ষার্থী নিজেই নিজের শিখন লক্ষ্য স্থির করার সুযোগ পায় । স্ব- মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হলে শিক্ষার্থী নিজেই নিজের শিখন নির্দেশক (Learning Instructor) যা শিখনের ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী হয় এবং প্রেরণা সঞ্চার করে ।
এই ব্যবস্থার একটি অন্য রূপ হল সহপাঠীদের দ্বারা অ্যাসেসমেন্ট বা মূল্যায়ন । স্ব-মূল্যায়নের মতো সহপাঠীদের দ্বারা মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের ফিডব্যাক সরবরাহ করে এবং পারদর্শিতাকে তুলে ধরে (Venn , 2000) । দলগত কাজ ও (Group work or Project) সহপাঠীদের দ্বারা মূল্যায়ন করা যেতে পারে যা সহপাঠীদের সঙ্গে ইতিবাচক মিথস্ক্রিয়া এবং সহযোগিতামূলক (Cooperative Learning) শিখনের সুযোগ সৃষ্টি করে ।
(4) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো বিশেষ সুযোগদান : অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার অ্যাসেসমেন্টের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যাতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শিখন প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তাদের অক্ষমতার ফলে কোনো বাধা প্রাপ্ত না হয় । যেসব সংস্কার এবং সুযোগ সৃষ্টি করার প্রয়োজন তা নিম্নে উল্লেখ করা হল ।
(ক) এই ধরনের শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা এবং ব্যাবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের শিখন প্রদর্শনের সুযোগ সৃষ্টি করা ।
(খ) এদের জন্য অতিরিক্ত সময় দান এবং অপেক্ষাকৃত নির্জন স্থানে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা ।
(গ) যাদের মধ্যে মনোযোগ দানের অসুবিধা দেখা যায় তাদের জন্য একই বিষয়ের ছোটো ছোটো প্রশ্ন করা ।
(ঘ) যাদের মধ্যে দৈহিক অক্ষমতা আছে তাদের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দান বা স্ক্রাইবের (যারা অন্যের পরিবর্তে লেখে) ব্যবস্থা করা ।
(ঙ) যাদের মধ্যে শিখনে অসুবিধা আছে তারা যাতে নিজেরাই প্রশ্ন করে উত্তর দেয় (Self Spaced Test) তার সুযোগ দান ।
( চ ) যেসব শিক্ষার্থীদের প্রথাগত বা লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করতে খুব অসুবিধা হয় তাদের ক্ষেত্রে পোর্টফোলিও অ্যাসেসমেন্ট , প্রকল্পের কাজ নিরবচ্ছিন্ন অ্যাসেসমেন্টের ব্যবস্থা করা যেতে পারে ।
(5) পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত সুযোগদান : সরকারি পরীক্ষার শংসাপত্র (Public Examination) (যেমন School learning certificates , মাধ্যমিক পরীক্ষা , উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ইত্যাদি) শিক্ষার্থীদের নিকট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এর মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা বৃহত্তর জীবনে প্রবেশ করার সুযোগ পায় । যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে । যে সমস্ত বিশেষ সুযোগের ব্যবস্থা করা উচিত তা এখানে উল্লেখ করা হল Te
(ক) যাদের যোগাযোগ রক্ষা বা মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা আছে তাদের জন্য ওয়ার্ড প্রসেসর বা বিশেষ পরিস্থিতিতে স্কাইবের (যারা অন্যের জন্যে লেখে) সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন ।
(খ) যাদের জ্ঞানমূলক অসুবিধা (Cognitive Difficulties) আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ করা প্রয়োজন । প্রয়োজন হলে পঠন ও লিখনের জন্য সাহায্যকারীর ব্যবস্থা করতে হবে ।
(গ) ইন্দ্রিয় ও শারীরিক সমস্যাপূর্ণদের জন্য অতিরিক্ত সময় , ওয়ার্ড প্রসেসর , স্ক্রাইব ইত্যাদির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ।