রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা

✨ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে , আমরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন করব কেন ? এর উত্তরে আমরা একথা বলতে পারি যে , এতে অধ্যয়ন করার পিছনে কিছু প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে । যথা –

1) রাষ্ট্রের উদ্ভব কখন ও কীভাবে ঘটেছে এবং কীভাবে রাষ্ট্র আজও তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে তা আমরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করেই জানতে পারব ।

2) রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য , লক্ষ্য কাজকর্মের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা সামাজিক মানুষকে রাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ধারণে সাহায্য করে । তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা আছে ।

3 ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে ব্যক্তি নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট চেতনা লাভ করা যায় ।

4 ) সমাজতন্ত্রবাদ , সাম্যবাদ , উদারনীতিবাদ , গণতন্ত্র , গান্ধিবাদ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার মতাদর্শ প্রতিনিয়ত যেভাবে রাষ্ট্র ও রাজনীতির কর্মপ্রবাহে উপস্থাপিত হচ্ছে , তাদের যথাযথভাবে অনুধাবন করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা আছে ।

5 ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ ব্যক্তির রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ঘটায় এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তােলে ।

6 ) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনা ব্যক্তিকে জাত – পাত – ধর্ম সম্প্রদায়ের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে তার মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ববােধ জল্প | করে , যা জাতীয় সংহতিকে সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে সহায়ক ।

7 )রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনীতির যৌক্তিকতা এবং কল্যাণমূলক দিকটি সম্পর্কে অবহিত করে । রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ।

8 ) বর্তমান রাষ্ট্র রাজনীতির কর্মপ্রবাহে রাজনৈতিক সদস্যের সংখ্যা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে স্বাভাবিক । রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ।

9 ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের অন্তর্ভুক্ত প্রশাসন , সরকার , রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও রাজনীতির ধারণা ব্যক্তির মধ্যস্থ নেতৃত্বদানের গুণ বিকাশ ঘটায় এবং ব্যক্তিকে ভাবী প্রশাসক ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে ।

10 ) সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে নানা প্রকার বিশেষীকৃত ধ্যানধারণা কেবলমাত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমেই জানা যায় ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠক্রম রচনার মূলনীতিসমূহ :

শিক্ষার সামগ্রিক সফলতার ক্ষেত্রে যে সকল উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ‘ পাঠক্রম ’ তাদের মধ্যে অন্যতম । তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষণের পূর্বে শিক্ষাবিদরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠক্রম রচনার কাজকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন । আধুনিককালে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষার জন্য পাঠক্রম রচনার মৌলিক নীতিগুলি অনেক পরিবর্তিত হয়েছে । এই পরিবর্তিত আধুনিক নীতিগুলিকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় —1 . বিষয়বস্তু নির্বাচন সংক্রান্ত নীতি , 2. বিষয়বস্তু বিন্যাসের নীতি এবং 3. ক্রিয়াগত নীতি ।

  1. বিষয়বস্তু নির্বাচন সংক্রান্ত নীতি : পাঠক্রমের বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য আধুনিক শিক্ষাবিদগণ ছয়টি নীতির উল্লেখ করেছেন । সেগুলি হল— ✨ উদ্দেশ্যকেন্দ্রিকতার নীতি : শিক্ষার উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে হবে যাতে সমগ্র পাঠক্রমটি শিক্ষার উদ্দেশ্য লাভে সহায়ক হয় ।

✨ শিশুকেন্দ্রিকতার নীতি : আধুনিক শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা অনুসারে শিক্ষার্থীর আগ্রহ , জৈবিক , মানসিক ও সামাজিক চাহিদাবলি , পরিণমনের স্তর , ক্ষমতা প্রভৃতি বিকাশে সহায়ক , এমন পাঠক্রম রচনা করতে হবে ।

✨ সমাজকেন্দ্রিকতার নীতি : অভিযােজন , পরিবর্তন , উৎপাদনশীলতা প্রভৃতি সামাজিক চাহিদাগুলি পূরণ করতে সক্ষম , পাঠক্রমের বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে হবে ।

✨ সংরক্ষণের নীতি : অতীত অভিজ্ঞতাগুলি সংরক্ষণ এবং সেই সংরক্ষিত অভিজ্ঞতাগুলিকে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সালিত করার জন্য পাঠক্রমকে মানবজাতির অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ করে গড়ে তুলতে হবে । কারণ এর মাধ্যমেই আর মানবসমাজের সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হবে ।

✨ সৃজনশীলতার নীতি : পাঠক্রমের বিষয়বস্তুগলিকে এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ সৃজনশীলতা প্রকাশের সহায়ক হয় ।

✨ অগ্ৰমুখিতার নীতি : শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবন পরিবেশে অভিযােজনের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ সক্ষম এমন বিষয়বস্তু বাছাই করে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ।

  1. বিষয়বস্তু বিন্যাসের নীতি : পাঠক্রমের জন্য বিষয়বস্তু নির্বাচনের পর সেগুলিকে সুষ্ঠুভাবে সন্নিবেশিত করা বিশেষভাবে প্রয়ােজন । এক্ষেত্রে শিক্ষাবিদগণ যে দুটি নীতির কথা উল্লেখ করেছেন , সেগুলি হল—

✨ সমন্বয়ের নীতি : পাঠক্রমের জন্য বিষয়বস্তু নির্বাচনের পর সেগুলিকে যাতে শিক্ষার্থীর বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করে উপস্থাপন করা যায় , সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে ।

✨ ক্রমবিন্যাসের নীতি : শিক্ষার্থীর মানসিক গঠন ও তথ্যাবলির কাঠিন্যতার ভিত্তিতে পাঠক্রমের জন্য নির্ধারিত বিষয়বস্তুগুলিকে বিন্যাস করলে , তা শিক্ষার্থীর পক্ষে আয়ত্ত করা সহজ হয় ।

  1. ক্রিয়াগত নীতি : আধুনিক শিক্ষাবিদদের মতে একটি আদর্শ পাঠক্রম রচনা করার পর সেটিকে যাতে সহজে প্রয়ােগ করা যায় তার জন্য কিছু কৌশল স্থির করা প্রয়ােজন । এই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাবিদরা তিনটি নীতির কথা উল্লেখ করেছেন —

✨ কর্মকেন্দ্রিকতার নীতি : পাঠক্রমের জন্য বিষয়বস্তু নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে সেই বিষয়বস্তুটি কোন্ কর্মের প্রেক্ষিতে ar শিক্ষার্থীর সামনে উপস্থাপিত হবে , তা পূর্বে নির্ধারণ করে দিলে শিক্ষার্থীর কাছে পাঠক্রম অনেক সহজতর হয়ে ওঠে ।

✨ পরিবর্তনশীলতার নীতি : পাঠক্রমকে হতে হবে নমনীয় , অর্থাৎ ব্যক্তি ও সমাজের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাঠক্রমের কাঠামােটিও পরিবর্তনশীল হলে তা হয়ে উঠবে যুগােপযােগী ।

✨ বৈচিত্রের নীতি : আধুনিক শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পাঠক্রম রচনার সময় তার মধ্যে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করতে হবে , যাতে তা পরােক্ষভাবে হলেও শিক্ষার্থীর ব্যক্তিসত্তার বিকাশ ঘটায় এবং একঘেয়েমি দূর করতে সক্ষম হয় ।

আলােচ্য নীতিগুলির পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আদর্শ পাঠক্রম রচিত হলে শিক্ষণ – শিখন প্রক্রিয়ার কাজ অনেকটাই সমাপ্ত হয় । তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য , কেবলমাত্র নীতিগুলির প্রেক্ষিতেই নয় , পাঠক্রম রচনাকারীর ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি , দক্ষতা , প্রয়ােজনীয় তথ্যাবলির প্রাপ্তি , পারিপার্শ্বিক পরিবেশ প্রভৃতির প্রতিও অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে ।

💠 রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ্যক্রমের বৈশিষ্ট্যসমূহ ::—


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠক্রম হবে গতিশীল এবং পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে সুসামঞ্জস্য রক্ষাকারী , যাতে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত পথে অগ্রসর হয়ে সুনির্দিষ্ট ও যথাযথ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সুনাগরিক হওয়ার যােগ্যতাবলি অর্জন করে রাষ্ট্রের অগ্রগতির পক্ষে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে এবং চারপাশের বাস্তব পরিবেশকে আদর্শায়িত করতে পারে ।
একটি ভালাে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠক্রম তৈরি করতে হলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি মনে রাখতে হবে ।যেমন—

💫 পাঠক্রমকে ক্রমাগত অতীত থেকে বর্তমানে বিবর্তিত হতে হবে । আধুনিক এবং ক্রমপ্রগতিশীল সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাঠক্রমকে তার শিক্ষামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে ।

💫 শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও চাহিদার উপর ভিত্তি করে পাঠক্রম গড়ে উঠবে । একটি ভালাে পাঠক্রম একক ব্যক্তি এবং সমগ্র সমাজের চাহিদাগুলিকে প্রতিফলিত করে । যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলিকে গ্রহণ করে পাঠক্রম শিক্ষাকে আরও বেশি দায়িত্বশীল করে তােলে , যা দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তােলার পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক ।

💫 প্রয়ােজনে পাঠ্যবিষয়বস্তুকে যাতে সহজেই অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে অনুবন্ধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা যায় , সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে ।

💫 হাতেকলমে শিখনের জন্য বিভিন্ন শিখন পরিস্থিতিমূলক কার্যাবলি , যেমন — মিউনিসিপ্যালিটি , পঞ্চায়েত , পৌরসভা A প্রভৃতি পরিদর্শন , বিভিন্ন প্রােজেক্টে অংশগ্রহণ ইত্যাদি যুক্ত করতে হবে ।

💫 একটি ভালাে পাঠক্রম বিষয়বস্তুর যৌক্তিক ক্ৰমিক পর্যায়ের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে , ফলে শিক্ষার্থীরা সহজ থেকে ক্রমশ স । জটিলের দিকে অগ্রসর হয় এবং বিষয়বস্তুকে সহজেই আত্মস্থ করতে পারে ।

পাঠক্রম যাতে শিক্ষার্থীর আত্মশিখনে সহায়ক হয় সেদিকে যথাযথ নজর রাখতে হবে । বর্তমানের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন তথ্যাবলি ও উদাহরণ সহযােগে বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীদের সামনে যাতে উপস্থাপন করা যায় । সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে ।

💫 গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবােধ , যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি , উন্নত বিচারবােধ , প্রগতিশীল মানসিকতা প্রভৃতি বিকাশে সক্ষম এমন বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ।

💫 নমনীয়তা পাঠক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । প্রয়ােজনানুসারে বিভিন্ন পরিবর্তনগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাঠক্রমকে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে ।

সুতরাং, বলা যায় পাঠকম হল একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টার ফলাফল ।বদীর্ঘকালীন পরিকল্পনা ,ব্যবস্থাপনা , মূল্যায়ন কমপর্যায়ের মাধ্যমেই একটি ভালাে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠক্রমা প্রস্তুত করা সম্ভব ।

Related posts:

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবন কথা
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী : 2024
চন্দ্রযান-3 : চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ ভারত
GENERAL STUDIES : TEST-2
GENERAL STUDIES : 1
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: 8ই সেপ্টেম্বর
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
তপনের জীবনে তার ছোটো মাসির অবদান আলোচনা করো।
সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝ ?
আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায় ? এটি কয়প্রকার ও কী কী ?
একটি সাদা কাগজকে কীভাবে তুমি অস্বচ্ছ অথবা ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করবে ?
ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অস্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অপ্রভ বস্তুও কি আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে?
বিন্দু আলোক - উৎস কীভাবে পাওয়া যেতে পারে ?
বিন্দু আলোক - উৎস ও বিস্তৃত আলোক - উৎস কী ?
অপ্রভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বপ্নভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সবকিছু দেখতে পাই , কিন্তু রাত্রিবেলা আলোর অনুপস্থিতিতে কোনো জিনিসই দেখতে পা...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page