ভূতের গল্প : সাধুর তান্ডব

সাধনপুর গ্রাম। গ্রামের শেষ প্রান্ত থেকে শুরু হয়েছে বিশাল এক মাঠ। মাঠের মাঝামাঝিতেই পুকুরটি। পুকুরের পূর্ব পাশে যে বিরাট বট গাছটা রয়েছে, তার তলায় আস্তানা গেড়েছে এক সাধু বাবা। ইয়া লম্বা লম্বা চুল আর দাড়ি গোফের জঙ্গল। হাত পায়ের নখগুলো বড় বড়। পরনে গেরুয়া বসন, উর্ধাঙ্গ খালি। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। একটা বাঘের চামড়ার উপর বসে থাকে। একপাশে খাড়া করে রাখা একটা ত্রিশুল। আর একটা লোটায় বিভিন্ন গাছের পাতা ও ফুল রাখা। দেখলেই ভক্তি জন্মে সাধু বাবার উপর। গ্রামের লোকজন খুব খুশি। এমন একজন মানুষ তাদের গ্রামে হাজির হয়েছে। গ্রামের লোকজন প্রতিদিন সকালে সাধুবাবার নিকট বিভিন্ন ফলমুল খাদ্যদ্রব্য নিয়ে হাজির হন। সাধুবাবা সবসময় চোখ বুজে থাকেন। কারো সাথে কথা বলেননা। সবগুলো জিনিষ যেভাবেই দেয়া হয় সেভাবেই পড়ে থাকে। পরে লোকেরা তা সরিয়ে নেয়। এভাবে কেটে গেল কয়েকটা দিন। গ্রামের উত্তর প্রান্তে রফিক মিয়ার বাড়ি। তার দুধেল গাইটি সন্ধ্যা থেকে পাওয়া যাচ্ছেনা। সারা গ্রাম আঁতিপাতি করে খোঁজ করেও পাওয়া গেলনা গরুটি। তারপর হাল ছেড়ে দিয়ে রফিক মিয়ে ভাবতে লাগলো কোথায় গেল গরুটি। পরদিন গোয়াল ঘরের পেছনেই পাওয়া যায় গরুটিকে। মৃত। বিভৎস। কিসে জানি পুরো মাথাটা ধড় থেকে টেনে ছিড়ে ফেলেছে এমন অবস্থা। তারপর পেট ফেড়ে কলিজা বের করে ফেলেছে। গ্রামের ছেলেবুড়ো সকলে জড়ো হয়ে যায় সেখানে। এমন কাজ কার দ্বারা সম্ভব। এত বড় একটা গরুর মাথা টেনে ছিড়ে ফেলে এমন শক্তি কোন জন্তুর আছে? গ্রামের সবখানেই এনিয়ে আলোচনা চলছে? কেউ বলছে বড়সড় কোন বাঘের হামলা। কেউ বলছে বাঘ হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। যেভাবে রাক্ষসের মত টেনে ছিড়ো ফেলেছে। কেউ বললো জ্বিনের কাজ। সবার মনেই এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা ও আতংক ভর করেছে। পরদিন নিয়মমাফিক সাধু বাবার নিকট ফলমুল নিয়ে গেল গ্রামের লোকজন। বাবা আগের মতই আছে। নির্মিলীত চোখ। সামনে আগুন জ্বালানো রয়েছে আজ। বাবা মাঝে মধ্যে সুর করে কি যেন পড়ছে। আর আগুনের দিকে কিসব ছিটিয়ে দিচ্ছে। সাথে সাথে আগুন জ্বলে উঠছে আরো দ্বিগুন হারে। বাবার কাছাকাছি যেতে লোকগুলো টের পেল বাবার আশেপাশে আগুনের তেজ বেশি। ফোস্কা পড়ে যাওয়ার অবস্থা। লোকের ভয় পেয়ে সেখান থেকে সরে এলো। প্রতিদিনই ঘটছে নতুন নতুন অঘটন। কোন না কোন প্রানীকে বিভৎস ভাবে হত্যা করে ফেলে রাখা হচ্ছে প্রতিদিন। হাঁস মুরগী, বিড়াল কুকুর কোন কিছুই রেহাই পাচ্ছেনা। এ কী ধরনের উৎপাত শুরু হলো গ্রামে? সবার মনেই আতংক। এভাবে কতদিন চলবে? গ্রামের দক্ষিন দিকের হিন্দু পাড়ার সমীর সেনের মেজো ছেলে শুভটা ভীষন দুষ্টু। মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে। অথচ শয়তানী বুদ্ধিতে সে সবার চেয়ে এগিয়ে। সন্ধ্যায় ঘরে পড়তে না বসে সে দুষ্টুমী করতে লাগল। একসময় খেলতে খেলতে টেবিলের উপর রাখা কাঁচের জগটি সে ফেলে দিলো মেঝেতে। ঝনঝন করে ভাংগল সেটি। তার মা রান্নাঘর থেকে বেত হাতে দৌড়ে এল। মারের ভয়ে ঘরের বাইরে

দৌড় দিলো শুভ। মা ভাবল বাইরে আর কোথায় যাবে, একটু পর ফিরে আসবে সে। মা রান্নাঘরে চলে গেল। রাত নয়টা বাজে, শুভ এখনো ঘরে ফেরেনি। টনক নড়ল মায়ের। গেল কোথায় ছেলেটা। সমীর সেন মানে শুভর বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, তিনিও দেখেননি। শুভর বড়ভাই ধ্রুব বললো, শুভ সন্ধ্যায় মারের ভয়ে দৌড়ে বের হয়ে গিয়েছিল, এখনও আসেনি। সবাই মিলে আশেপাশের ঘরে খোঁজ নিল। না শুভ কোথাও যায়নি। সারা গ্রামের লোকজন মিলেমিশে খোঁজ নিল শুভর। শুভ কোথাও নেই। অজানা আশংকায় কালো হয়ে উঠল সবার মুখ। সকালে মাঠে গরু চরাতে নিয়ে যাচ্ছিল গ্রামের এক রাখাল। পুকুরের উত্তর পাড়ের দিক দিয়ে যেতে যেতে দেখলো পুকুর পাড়ে কে যেন মড়ার মত শুয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখল – শুভ। মৃত। ভয়ানক বিভৎস সে লাশ। চেনাই যায়না। প্রচন্ড শক্তিতে কে যেন তার মাথাটি ধড় থেকে টেনে ছিড়ে ফেলেছে। বুক ফেড়ে কলিজা বের করে ফেলা হয়েছে। সারা শরীরে খামচির দাগ। লাশ দেখে বমি করে দিল সে। তারপর ভয়ে গ্রামের দিকে দৌড় দিল রাখালটি। সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো শুভর অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা। সাধনপুর গ্রামের পাশেই সরল ইউনিয়ন। সেই গ্রামের সবচেয়ে ধনী পরিবার মিয়া বাড়ির হোসেন মিয়ার একমাত্র ছেলে শোভন। পড়ালেখা করতে শহরে গিয়েছিল সে। প্রথম প্রথম বাড়িতে আসা যাওয়া করলেও বেশ কবছর হয়ে গেল বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগই রাখেনি সে। তার পরিবারের লোকেরা শহরে তার কলেজ সহ অনেক যায়গায় খোঁজ করেও তার সন্ধান পায়নি। পত্রিকায় নিঁখোজ সংবাদও ছাপা হয়েছিল। থানায় গিয়েও কোন লাভ হয়নি। শোভনের কোন খোঁজ খবর না পেয়ে একসময় হাল ছেড়ে দেয় তারা বাবা-মা। সেদিন সকাল বেলা হুট করে শোভন বাড়ি ফেরে। চেহারা সুরত কাপড় চোপড়ে অনেক পরিবর্তন। চেনার উপায় নাই। সাথে বড় বড় তিনটি ব্যাগ। বাড়িতে প্রবেশ করে প্রথমেই সে বাবার সামনে পড়ল। হোসেন মিয়া নিজ পুত্রকে প্রথমে চিনতেই পারলেননা। শোভনই বলল, বাবা আমি শোভন। তোমাদের কাছে ফিরে এসেছি। এতদিন পর হারানো পুত্রকে ফিরে পেয়ে বাকরুদ্ধ বাবা। আমার শোভন রে – বলে পুত্রকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন তিনি। বসার ঘরে কান্নাকাটির শব্দ শুনে ছুটে এলেন শোভনের মা। শোভনকে দেখেই চিনতে পারলেন। তিনি একবার দেখেই চিনতে পারলেন শোভনকে। শোভনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন তিনি। বিকালে শোভনকে দেখতে উঠানে জড়ো হলো গ্রামের অনেকেই। এতদিন কোথায় ছিল, কী করছিল, বাড়ির সাথে যোগাযোগ কেন রাখেনি এসব জানতে আগ্রহ সবার। সংক্ষেপে শোভন যা বলল তা হল- ড. আমজাদ আলী নামে এক বিজ্ঞান সাধকের সাথে বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষনা করছিল শোভন। তার সাথেই চলে যায় হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। সেখানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষনা করছিল দুজনে। তাদের বিজ্ঞান সাধনার বিষয় ছিল সারা দেশে ছড়িয়ে পরা প্রেত সাধকদের প্রতিরোধের উপায় বের করা। বিজ্ঞানী আমজাদ আলীর সাথে কাজ করে এ বিষয়ে অনেকদুর এগিয়ে গেছে শোভন। শোভন ফিরে আসার পর তার সাথে পুরোনো বন্ধুদের অনেকের দেখা হলো। বন্ধুরাও খুব খুশি। নদীর পারে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে কথায় কথায় উঠল সাধনপুর গ্রামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়ানক ঘটনাগুলোর কথা। শোভন খুব মনোযোগ

দিয়েই শুনল সম্পূর্ণ ঘটনা। তারপর বন্ধুদের বললো সাধনপুর গ্রামের কাউকে নিয়ে আসতে। সে যা সন্দেহ করছে সেটা ঐ গ্রামের কাউকে পেলেই তার সাথে কথা বলে পুরোপুরি বোঝা যাবে। সেদিন রাতেই শোভনদের বাড়িতে এলো সাধনপুর গ্রামের কলিমদ্দিন। কলিমদ্দি শোভনদের বসার ঘরে ঢুকতেই ঝট করে দাড়িয়ে গেল শোভন। তার মুখ থমথমে। ইশারায় কলিমদ্দিকে দাড়িয়ে থাকতে বললো।শোভনের হুট করে দাড়িয়ে যাওয়ায় কলিমদ্দি সহ অন্যরাও হতচকিয়ে গেছে। ব্যাপার কী? শোভন তার ব্যাগ থেকে একটি পানির বোতল বের করলো। তারপর কলিমদ্দি সহ ঘরে উপস্থিত সবার গায়ে বোতল থেকে পানি নিয়ে ছিটিয়ে দিল। কলিমদ্দিকে উদ্দেশ্যে করে বললো- এটা পবিত্র পানি। তুমি ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই বুঝতে পেরেছি তোমার উপর কোন প্রেত সাধকের আছর রয়েছে। সম্ভবত তোমাদের গ্রামে কোন প্রেত সাধক এসে আস্তানা গেড়েছে। তোমাদের গ্রামে সমস্ত অঘটনের জন্য দায়ী সেই প্রেত সাধক। প্রেত সাধকের কথা শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেল। শোভন জিজ্ঞেস করলো – তোমাদের গ্রামে নতুন কোন লোক সম্প্রতি বসবাস করছে কিনা? – কলিমদ্দি বললো, গ্রামে তো নতুন কোন লোক আসেনি। তবে গ্রামের বাইরের পুকুরে এক সাধুবাবা এসে বাস করছে। বাবা দিনরাত ধ্যান করেন। কারো সাতে পাঁচে নেই। কারও সাথে কথাও বলেননা। বাবাকে দিয়ে কারও ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই। শোভন বললো- আমি নিশ্চিত এই বাবাই যত অঘটনের মুল। সে একজন প্রেত সাধক। আমি রাতে ব্যাপারটা আরো নিশ্চিত হতে পারবো। তুমি আজ গ্রামে যেয়োনা। তোমার শরীরে পবিত্র পানির স্পর্শ আছে। তুমি গ্রামে গেলেই প্রেত সাধকটি তা টের পেয়ে যাবে। প্রেত সাধক বিষয়টি গ্রামের লোকদের জন্য নতুন বিষয়। তারা জানেনা প্রেত সাধক কী? তারা কী জন্য প্রেত সাধনা করে? তারা মানুষের ক্ষতি করে কেন? গ্রামের লোকজন এ বিষয়ে জানার জন্য কৌতুহল প্রকাশ করল শোভনের কাছে। শোভন বলতে লাগল- প্রেত সাধকরা মুলত শয়তানের উপাসনা করে। তারা শয়তানের উপাসনার মধ্যে দিয়ে অসীম ক্ষমতার মালিক হতে চায়। শয়তানকে খুশি করতে তারা বিভিন্ন জীবজন্তুর পাশাপাশি মানুষও বলি দিয়ে থাকে। এই সাধুটি কতটুকু শক্তির মালিক হতে পেরেছে আমি জানিনা। শুভকে যেভাবে খুন করেছে তাতে মনে হচ্ছে চুড়ান্ত ক্ষমতা পেতে তার বেশি দেরি নেই। তবে তাকে প্রতিরোধ করতে না পারলে সে অসীম ক্ষমতার মালিক হয়ে মানুষের ক্ষতি করবে। একজন বললো- পুলিশের কাছে গেলে কেমন হয়? শোভন বললো- পুলিশ না, সেনাবাহিনী আসলেও প্রেতসাধকটিকে ঠেকানো সম্ভব হবেনা। সে কোনভাবে যদি টের পায় আমরা তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছি সে পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে ছারখার করে দেবে। তাহলে এখন উপায় কী?

গ্রামবাসীরা জানতে চাইলো। শোভন বললো উপায় তো একটা আছে। তবে সেটা সবার সামনে বলা যাবেনা। আমি এলাকার তরুনদের নিয়ে বসবো। তাদের সাথে নিয়েই প্রেত সাধক সাধু বাবাকে প্রতিরোধের পরিকল্পনা করবো। এদিকে সাধনপুরের কলিমদ্দিকে সেরাতে গ্রামে যেতে মানা করলেও তা শোনেনি কলিমদ্দি। রাতেই সে সাধনপুর ফিরে গিয়ে গ্রামবাসীকে জানালো সবকথা। শোভন যা যা বলেছে সবকিছু খুলে বললো। সাধুবাবার কারণেই এসব হচ্ছে জানতে পেরে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলো গ্রামবাসী। সবারই কোন না কোন প্রানী হত্যা করেছে সাধুটি। সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত দেখা গেল শুভর বাবা সমীর সেনকে । পুত্র হারিয়ে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছিল সে। উত্তেজিত জনতা সেরাতেই লাটি সোটা, সড়কি বল্লম ও মশাল নিয়ে সাধুবাবার আস্তানায় হামলা করার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলো। সাধুবাবাকে সামনে পেলেই খুন করে ফেলবে। গ্রামের লোকজন সাধুবাবার আস্তানা পুকুরপাড়ের বটগাছের কাছাকাছি আসতে আসতে হঠাৎ প্রচন্ড বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো। বাতাসের তোড়ে গ্রামবাসীদের হাতে থাকা মশাল নিভে গেল। দুয়েকজনের হাতে টর্চলাইট ছিল। সেটার আলোতে সামনে অগ্রসর হচ্ছিল তারা। বাতাসের বেগ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এবার শুরু হলো বজ্রপাত। এমন জোরে বাজ পড়ছে মনে হলো কানের পর্দা ফেটে যাবে। আকাশে বজ্রের লেলিহান শিখা লকলক করছে সাপের জিহ্বার মত। হঠাৎ করে পরিস্কার আকাশে দমকা হাওয়া ও বজ্রপাতের কারণে ভয় পেয়ে গেল লোকজন। তবুও তারা সাধুবাবার দিকে এগিয়ে যেতে থাকল। প্রচন্ড ক্রোধ চেপে গেছে সবার। সাধুবাবার আস্তানার কাছাকাছি পৌছতে হঠাৎ কোত্থেকে এক ঝাক বৃহদাকৃতির কুকুর গ্রামবাসীদের ঘিরে ধরে ঘেউ ঘেউ করা শুরু করলো। হঠাৎ কুকুরের আক্রমনে ভীত হয়ে পড়লো সবাই। কোথা থেকে কুকুরগুলি আসলো কেউ বুঝতে পারলোনা। এতবড় বড় কুকুর কেউ কোনদিন দেখেনি। সবাই একজায়গায় জড়ো হয়ে ঠকঠক করে কাপতে লাগল। এদিকে প্রচন্ড বাতাসের মাঝেও সাধুবাবার সামনে জ্বালানো আগুন আরো দাউদাউ করে জ্বলছে। আগুনের শিখা লকলকিয়ে বটগাছের ডাল স্পর্শ করতে চাইছে যেন। সাধুবাবা নিজ আসন থেকে উঠে দাড়ালো। তারপর সমাগত জনতার দিকে ফিরে আকাশ বাতাস কাপিয়ে ভয়ানক স্বরে হা হা হা করে হাসতে লাগলো সে। তার হাসির দমকে বাতাসের গতিবেগ যেন আরো বেড়ে উঠছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বজ্রপাতের উজ্জ্বলতা ও শব্দ। মনে হলো দুনিয়ার বুকে যেন কেউ আজ বজ্রাঘাত করেছে।

Related posts:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page