Child Psychology : শ্রেণিকক্ষে সমস্যার কারণ ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি লিখুন । এক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা লিখুন।

শ্রেণিকক্ষে সমস্যার কারণ ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি লিখুন । এক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা লিখুন।

উত্তর :-

শ্রেণিকক্ষে সমস্যার কারণ :-

শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন ধরনের যে সমস্যা দেখতে পাওয়া যায় তার একাধিক কারণ রয়েছে । সেই কারণগুলি হল—

( 1 ) শ্রেণিকক্ষ যদি উপযুক্ত না হয় অর্থাৎ অতিরিক্ত ছাত্রসংখ্যার জন্য শিক্ষার্থীদের যদি বসার উপযুক্ত জায়গা না থাকে , সমস্ত শিক্ষার্থী যদি ঠিকমতো বোর্ড দেখতে না পায় ইত্যাদি ক্ষেত্রে শ্রেণিতে সমস্যা দেখা যায় ।

( 2 ) শ্রেণিতে যে সমস্ত নীতি এবং পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হয় সেগুলি সঠিক কিনা সেই সম্পর্কে সচেতনতা দরকার । শিক্ষক যদি শ্রেণিতে কোনো নীতিকে জোর করে প্রয়োগ করতে চান সেক্ষেত্রেও শ্রেণিতে সমস্যা দেখা যায়।

( 3 ) শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পরিচালনার অভাব সমস্যার একটি কারণ । শ্রেণিতে যে সমস্ত নির্দেশদান ( instruction ) প্রয়োগ করা হচ্ছে তা স্পষ্ট এবং বোধগম্য কিনা সে সম্পর্কেও শিক্ষককে সচেতন হতে হবে ।

( 4 ) শ্রেণিতে শিক্ষকের নিজের ব্যবহার সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার । শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদানের সময় সঠিক নীতি অনুসরণ করবেন এবং সঠিক হচ্ছে কিনা তা লক্ষ রাখবেন ।

( 5 ) শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী অন্যায় আচরণ করলে সেই সম্পর্কে প্রথম থেকেই সতর্কতা দরকার , তা না হলে শিক্ষার্থীদের আচরণ এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে , তখন শ্রেণিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

( 6 ) শিক্ষক যে শিক্ষণ পদ্ধতিটি ব্যবহার করছেন সেই সম্পর্কে তাঁকে সচেতন থাকতে হবে । শিক্ষাদানের সময় শিক্ষার্থীরা তার শিক্ষণ পদ্ধতিটিকে ঠিকমতো অনুসরণ করতে না পারলে শিক্ষক – শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগ ঠিকমতো গড়ে উঠবে না , যার ফলে শ্রেণিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

( 7 ) সবশেষে বলা হয় শ্রেণিকক্ষের সমস্যাবলি মনস্তাত্ত্বিক , সামাজিক এবং প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে ।

 

শ্রেণিকক্ষ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি :–

শ্রেণিকক্ষকে সম্পূর্ণ সমস্যামুক্ত করা সম্ভব নয় । তবে কিছু কৌশল বা নীতি অবলম্বন করে শ্রেণি ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করে সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা অবশ্যই সম্ভব । এর জন্য শিক্ষককে কয়েকটি নীতি অবলম্বন করতে হবে । যেমন—

( i ) গণতন্ত্রের নীতি ( Principle of Democracy ) :- শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনায় গণতান্ত্রিক নীতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে । শিক্ষায় সমসুযোগ এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীর ক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে । ঢাক

( ii ) স্বাধীনতার নীতি ( Principle of Freedom ) :- শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা প্রকাশের জন্য অবাধ স্বাধীনতার প্রয়োজন । স্বাধীন পরিবেশেই সৃজনশীল চিন্তার অনুশীলন সম্ভব । শিক্ষার্থীদের ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশের জন্য তাদের অফুরন্ত স্বাধীনতার সুযোগ দিতে হবে ।

( iii ) শিক্ষার্থী – কেন্দ্রিকতার নীতি ( Child Centric Principle ) : সমস্ত রকমের শিক্ষামূলক কর্মসূচির লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মঙ্গলসাধন । Paul Appleby- র মতে , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যা হোক না কেন তা হবে “ of the students , by the students and for the students । ” তাই শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে শিক্ষাব্যবস্থার রূপ দিতে হবে ।

( iv ) নমনীয়তার নীতি ( Principle of Flaxibility ) : শিক্ষক নমনীয় হবেন । সুষ্ঠু অভিযোজন ক্ষমতার অধিকারী হবেন এবং তাঁর মধ্যে স্থায়িত্ব থাকতে হবে । তিনি শ্রেণিকক্ষে ন্যায়বিচার , স্বাধীনতা এবং সহযোগিতার পরিমণ্ডল গড়ে তুলবেন এইরকম পরিবেশেই উত্তম পাঠদান এবং সু – নেতৃত্ব সম্ভব ।

( v ) দায়িত্ব বণ্টনের নীতি ( Principle of Dividing Responsibility ) : শিক্ষার্থীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করতে হবে । সমস্যার প্রতিবিধানে দায়িত্ব বণ্টন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত । কথায় বলে , ‘ দশের লাঠি একের বোঝা কয়েকজনের সম্মিলিত মস্তিষ্ক একজনের মস্তিষ্ক অপেক্ষা অনেক বেশি কার্যকরী । তা ছাড়া দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা আত্মসচেতন ও আত্মবিশ্বাসী হয় , যার ফলে একদিকে যেমন সমস্যা তৈরি হবার সম্ভাবনা হ্রাস পায় অন্যদিকে সৃষ্ট সমস্যার মোকাবিলায় শিক্ষার্থীরা উদ্যোগী হয়।

( vi ) নিরপেক্ষতার নীতি ( Principle of Impartiality ) : একজন গণতন্ত্র সচেতন শিক্ষক সকল ছাত্রকেই সমান দৃষ্টিতে দেখেন । তাঁর কাছে কোনো ছাত্র অধিক প্রিয় বলে বিবেচিত হয় না । শ্রেণিকক্ষে সব ছাত্রই তাঁর কাছে সমান ।

( vii ) ন্যায়ের নীতি ( Principle of Justice ) : প্রতিটি শিক্ষার্থীর উপর ন্যায়ের নীতি সমভাবে প্রযোজ্য হবে । শিক্ষার্থীদের সব ধরনের বিশৃঙ্খলা , সব রকমের কলহ ন্যায্যভাবে মীমাংসা করতে হবে ।

( viii ) ইতিবাচক নীতি ( Principle of Positive Attitude ) : শিক্ষক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হবেন । কার্যক্ষেত্রে তিনি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে ব্রতী হবেন । সব ছাত্রের সাফল্যের ব্যাপারে তিনি আস্থা রাখবেন । শ্রেণিকক্ষে ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকের ভূমিকা : ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষতার ( যেমন— উচ্চমাত্রায় কর্মে মনোনিবেশ ( High Level Engagement ) এবং নিম্নমাত্রার বিশৃঙ্খলার ( Low Disruption ) সঙ্গে শিক্ষকের কিছু কিছু আচরণ সম্পর্কিত । এই আচরণগুলি 3 টি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়

( 1 ) শ্রেণি ব্যবস্থাপনার প্রাক্কার্যকালীন পর্যায়ের কাজ ,

( 2 ) পাঠ চালু করা ও সচল রাখা এবং

( 3 ) শ্রেণিকক্ষে ব্যবস্থাপনা বজায় রাখা ।

( 1 ) প্রাক্‌কার্যকালীন কাজ — শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত আচরণ নির্দিষ্ট করা : শিক্ষার্থীদের কী ধরনের আচরণ পাঠদানে প্রয়োজন এবং কী ধরনের আচরণ অপ্রয়োজন তা নির্দিষ্ট করা দরকার । এর মধ্যে অন্যতম হল —

( ক ) বিদ্যালয়ে কার্যারম্ভ : বিদ্যালয়ে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা তাদের করণীয় সম্পর্কে অবহিত হবে । যেমন — ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে তারা তাদের বসার জায়গায় বসবে এবং পরস্পরের সঙ্গে কথা বন্ধ করবে , যাতে শিক্ষক তাদের উপস্থিতি মিলিয়ে নিতে পারেন ।

( খ ) সামগ্রিক শ্রেণি কার্যাবলি : সামগ্রিক কার্যাবলির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে প্রত্যাশিত আচরণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল ; যখন শিক্ষক বা অন্য কোনো ছাত্র কিছু বলে তখন মনোযোগ দিয়ে শোনা , কিছু বলার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে হাত তুলে শিক্ষকের মনোযোগ আকর্ষণ করা এবং শিক্ষকের নির্দেশ অনুসরণ করা ।

( গ ) ছোটো দল কর্মসূচি : শ্রেণিকক্ষে অনেক সময় ছোটো ছোটো দলে কাজ করতে হয় । যেমন — শ্রেণি – পঠন । আবার অনেক সময় এককভাবে কাজ করতে হয় । যেমন অঙ্ক কষা বা ‘ ডিক্টেশন ’ নেওয়া । এই দুই ধরনের কার্যাবলির ক্ষেত্রে কী প্রয়োজনীয় | তা নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন । যারা দলগতভাবে কাজ করবে তাদের তদারকি করতে হবে । এবং তাদের প্রতিক্রিয়াগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । আর যারা এককভাবে কাজ করবে।তারা কী করবে তা জানানো প্রয়োজন । যেমন — তারা কি অন্যদের সঙ্গে কথা পারবে । তারা যদি শিক্ষকের সহযোগিতা চায় তাহলে কী করবে ইত্যাদি ঠিক করা উচিত ।

( ঘ ) শ্রেণিকক্ষের বাইরের কার্যাবলি : অনেক সময় ছাত্ররা যখন শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকে তখন ছাত্রদের দায়িত্ব শিক্ষকদের নিতে হয় । যেমন – টিফিনের সময় , পাঠাগার ব্যবহারের সময় , সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি এবং প্রয়োজন মতো বিদ্যালয়ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার সময় ইত্যাদি । এই ধরনের কার্যাবলিতে একদিকে যেমন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন অন্যদিকে তেমনি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি ।

( ঙ ) পরিষ্কার – পরিচ্ছন্নতা : প্রত্যাশা করা হয় গৃহে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে শিক্ষার্থীরা তাদের বসার স্থান , ব্ল্যাকবোর্ড , শিক্ষকের টেবিল – চেয়ার ইত্যাদি পরিষ্কার করবে । শিক্ষক শ্রেণিতে কী হয়েছে তার উপর এবং আগামী দিনে কী হবে তার উপর আকর্ষণীয়ভাবে আলোচনা করবেন ।

( চ ) দুটি কার্যের মধ্যে সময় : দুটি কাজ বা শ্রেণির কাজের মধ্যকার সময়ে শিক্ষার্থীরা কী করবে এ সম্পর্কে ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে । অন্যথায় এই সময়ে অনেক বিভ্রান্তি , বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে ।

( ছ ) শ্রেণি উপকরণ ব্যবহার এবং ভাগাভাগি করা : অনেক সময় শিক্ষার্থীদের শ্রেণি উপকরণগুলি ভাগ করে ব্যবহার করতে হয় । কে কতটা সময় ব্যবহার করবে , কীভাবে এর যত্ন নেওয়া যায় ইত্যাদি ছাত্রদের জানাতে হবে ।

( জ ) ব্যক্তিগত চাহিদার পরিকল্পনা : কীভাবে ‘ টয়লেট ‘ ব্যবহার করতে হয় , কীভাবে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয় , কীভাবে হারানো জিনিস অনুসন্ধান করতে হয় , কীভাবে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা টিফিন এবং অন্যান্য দ্রব্য সংরক্ষণ করা যায় — শিক্ষক এগুলি শ্রেণিকক্ষে জানাবেন ।

( ঝ ) শ্রেণিকক্ষের বিন্যাস : শ্রেণিকক্ষের মধ্যে যাতে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা যায় , সরবরাহের ব্যবস্থা যাতে উন্মুক্ত থাকে এবং শিক্ষক ও ছাত্র যাতে উভয় উভয়কে সহজে দেখতে পায় সে দিকে নজর রাখতে হবে ।

( 2 ) পাঠ চালু করা ও সচল রাখা : উপরিউক্ত আলোচনায় শ্রেণি ব্যবস্থাপনার প্রাক্‌কর্মকালীন পর্যায়ের কাজগুলি উল্লেখ করা হল । বর্তমান আলোচনায় কার্যকরী শ্রেণি ব্যবস্থাপনার জন্য বছরের শুরুতে কী কী করবেন তা ব্যাখ্যা করা হল । শ্রেণি ব্যবস্থাপনায় বিদ্যালয়ের শুরুতে কার্যগুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ , কারণ এই সময়ে শিক্ষার্থীদের আচরণ ও প্রত্যাশা গড়ে ওঠে । প্রথম সপ্তাহে শ্রেণির কাজে বিশৃঙ্খলা নিম্নমাত্রায় থাকে । এই সময় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিকট কী ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করেন এবং কী ধরনের আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত তা বলে দেওয়া হয় বছরের প্রথম দিকেই শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং সাফল্যের প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা করেন সে ক্ষেত্রে তার ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । শিক্ষার্থীদের নিকট প্রত্যাশিত আচরণ বিন্যাসে কী ধরনের বাধা আসতে পারে তা অনুসরণ করে শিক্ষক তার ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করবেন ।

বছরের শুরুতেই উত্তম ব্যবস্থাপক শিখনের পদ্ধতি ও নিয়মাবলির উপর গুরুত্ব দেবেন । প্রথম কয়েক দিনের মধ্যেই শিখনের পদ্ধতি এবং রুটিন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করবেন এবং তা চলতে থাকবে যত দিন না পর্যন্ত নতুন পদ্ধতি বা রুটিন চালু হয় । উত্তম ব্যবস্থাপক প্রথম দিকে শ্রেণিকক্ষের সমস্ত নিয়মগুলি ব্যক্ত করবেন না । ধীরে ধীরে প্রয়োজন অনুযায়ী তিনি ব্যক্ত করবেন । প্রথম সপ্তাহে শ্রেণিকক্ষের নিয়মাবলি , শিখন পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করার পরে অন্যান্য কার্যাবলি উল্লেখ করা হয় । এক্ষেত্রে 3 টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ।

প্রথমত , প্রথম দিকের কাজগুলি সহজ হবে , জটিলগুলি পরে উল্লেখ করা হয় ।

দ্বিতীয়ত , বছরের প্রথম দিকের কাজগুলি আকর্ষণীয় হবে যাতে সমস্ত শিক্ষার্থী সফলতা অর্জন করতে পারে । এর ফলে সহযোগিতা আরও নিশ্চিত হয় ।

তৃতীয়ত , শিক্ষক যতটা সম্ভব সমস্ত ছাত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রাখবেন । এর অর্থ হল শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে অবস্থান করে শিক্ষার্থীদের দলগত আচরণগুলির প্রতি নজর রাখবেন । সিটে বসে যখন শিক্ষার্থীরা কাজ করবে তার দিকে লক্ষ রাখবেন ছাত্ররা কাজ করছে কিনা , কার কী সাহায্য প্রয়োজন ইত্যাদি । সবশেষে মনে রাখতে হবে শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনায় শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাঞ্ছিত আচরণ গঠনের জন্য শিক্ষক যা নির্দেশ দেবেন তা যাতে সারাবছর অনুসৃত হয় , সে ব্যাপারে শিক্ষক তদারকি করবেন ।

( 3 ) শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থাপনা বজায় রাখা : শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থাপনা বজায় রাখার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ।

( ক ) Kinious Withinness বা তীক্ষ্ণ নজর : Withinness বলতে বোঝায় শিক্ষক খুব মনোযোগের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষের ঘটনাবলি প্রত্যক্ষ করেন , সকলের প্রতি দৃষ্টি দেন । শিক্ষার্থী যখন নিজের জায়গায় বসে কাজ করে তখন শিক্ষক লক্ষ রাখেন তারা ঠিক কাজ করছে কিনা , কোথায় সাহায্যের দরকার ইত্যাদি ।

( খ ) অবাঞ্ছিত আচরণের নিয়ন্ত্রণ : শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অবাঞ্ছিত আচরণ ( যদি ঘটে ) নির্দিষ্ট করে , উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন যাতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে না পড়ে । শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া অবশ্য নির্ভর করে অবাঞ্ছিত আচরণের প্রকৃতি এবং কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে আচরণ করছে তার উপর । যেমন— আলোচনার সময় শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক কথা বলা আলোচনায় বাধার সৃষ্টি হয় , কিন্তু এককভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে এর ফলে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না । প্রথম ক্ষেত্রে শিক্ষক পারস্পরিক কথা বলতে অবশ্যই নিষেধ করবেন কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া বাধ্যতামূলক নয় । শিক্ষকের আচরণ অনেক সময় অবাঞ্ছিত আচরণের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে । তাই শ্রেণিকক্ষে কাজ চলাকালীন শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীদের প্রতি নজর দেবেন এবং সংকেতের সাহায্যে অবাঞ্ছিত আচরণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন । যেমন — কোনো ছাত্র কথা বললে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে কথা বলতে নিষেধ করা ইত্যাদি ।

( গ ) শাস্তি ও পুরস্কারের ব্যবহার : উত্তম ব্যবস্থাপনা , সঠিক এবং প্রত্যাশিত আচরণ সম্পন্ন করার জন্য সর্বদা পুরস্কারের সাহায্য গ্রহণ করা হয় । এই পুরস্কার নানা রকম হতে পারে । যেমন – প্রশংসা , ঈয়ৎ হাস্য , ইতিবাচক মাথা নাড়া , নোট বইতে মন্তব্য লেখা , আর্থিক পুরস্কার , যারা সারা মাসে ভালো কাজ করেছে তাদের নাম বুলেটিন বোর্ডে প্রকাশ করা ইত্যাদি । উত্তম শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য শাস্তি প্রদানের সাহায্য নিতে হয় । তবে এক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক হওয়া প্রয়োজন এবং এর ফলে যাতে কোনো রকম ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ দিতে হবে ।

( ঘ ) শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব গ্রহণ ঃ শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে শিখন সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ করতে হয় । যেমন— সিটে বসে কাজ করা , ছোটো ছোটো দলে কাজ করা এবং সকলে একই সঙ্গে কাজ করা । শ্রেণিকক্ষে কাজ দেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের কাজে নিযুক্ত রাখা শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব । বসে কাজ করার ক্ষেত্রে শিক্ষককে লক্ষ রাখতে হবে অন্যান্যরা যাতে অসুবিধা সৃষ্টি না করে । এ ছাড়া বসে কাজ করার উত্তম ব্যবস্থাপনার জন্য কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন

প্রথমত , অ্যাসাইনমেন্টের উপকরণ এবং সময়সীমা শিক্ষার্থীদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে । জটিল অংশগুলির ক্ষেত্রে মৌখিকভাবে নির্দেশের সঙ্গে লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হবে ।

দ্বিতীয়ত , অ্যাসাইনমেন্ট শুরু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সমস্যা বোঝাবার জন্য শিক্ষক তদারকি করবেন । তবে যেহেতু ব্যক্তিগত তদারকিতে অনেক সময়ের প্রয়োজন তাই তদারকি ন্যূনতম হবে ।

তৃতীয়ত , অ্যাসাইনমেন্টের উন্নতি কীরকম ঘটছে তা জানার জন্য ফিডব্যাক ( Feed back ) সরবরাহ করার দায়িত্ব নিতে হবে । চতুর্থত , প্রোজেক্টের কাজের ( যা সম্পন্ন হতে কয়েক দিন প্রয়োজন ) প্রগতি নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা । ) পাঠ চালিয়ে যাওয়া অর্থাৎ সচল রাখা : সুপরিকল্পিত গতিশীল পাঠদান শিক্ষার্থীদের উচ্চমাত্রার কাজের পক্ষে অনুকূল । পাঠের গতিশীলতা হ্রাস পেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরক্তি উৎপন্ন হয় , কারণ মনোযোগ ব্যাহত হয় । পাঠের গতিশীলতা বজায় রাখার উপাদান যেমন — তদারকি , অবাঞ্ছিত আচরণকে দ্রুত নিবৃত্ত করা , দায়বদ্ধতা ইত্যাদি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে । এ ছাড়া উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বাধাদানকারী আচরণকে প্রতিহত করে পাঠদানকে আরও উন্নত করা উত্তম শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনায় অন্যতম শর্ত ।

( চ ) বাহ্যিক উপাদান : শিক্ষকের শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থাপনার উপর বাহ্যিক কিছু উপাদান প্রভাব ফেলে । যেমন — প্রতিটি শিক্ষকের উপর কয়েকজন শিক্ষার্থীর দায়িত্ব থাকা বা দায়িত্ব সব শিক্ষকদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া ( যেমন – Team Teaching ) শিক্ষার্থীদের মেধা শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনার উপর প্রভাব পড়ে । শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধার যথেষ্ট পার্থক্য থাকলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকরণ করা প্রয়োজন । অন্যথায় শিক্ষকের শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট জটিলতা দেখা যায় ।

Related posts:

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবন কথা
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী : 2024
চন্দ্রযান-3 : চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ ভারত
GENERAL STUDIES : TEST-2
GENERAL STUDIES : 1
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: 8ই সেপ্টেম্বর
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
তপনের জীবনে তার ছোটো মাসির অবদান আলোচনা করো।
সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝ ?
আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায় ? এটি কয়প্রকার ও কী কী ?
একটি সাদা কাগজকে কীভাবে তুমি অস্বচ্ছ অথবা ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করবে ?
ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অস্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অপ্রভ বস্তুও কি আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে?
বিন্দু আলোক - উৎস কীভাবে পাওয়া যেতে পারে ?
বিন্দু আলোক - উৎস ও বিস্তৃত আলোক - উৎস কী ?
অপ্রভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বপ্নভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সবকিছু দেখতে পাই , কিন্তু রাত্রিবেলা আলোর অনুপস্থিতিতে কোনো জিনিসই দেখতে পা...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page