বিদ্যালয়ান ( Schooling ) ও শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক লিখুন ।
উত্তর :–
বিদ্যালয় এবং শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্ক বিচারের পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন বিদ্যালয় কাকে বলে । বিদ্যালয় যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হল School ( লাতিন ভাষা থেকে এসেছে ) , এর অর্থ হল- অবসর সময়ে তাত্ত্বিকজ্ঞানের আলোচনা ( A Scholar by discussion held in spare time ) । অর্থাৎ ব্যুৎপত্তিগত অর্থে ‘ স্কুল ‘ হল এমন একটি স্থান যেখানে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ আছে।
বিদ্যালয়ের সৃষ্টি কীভাবে হল তার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে আদিম শিক্ষার কোনো প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা ছিল না । জৈবিক জীবনযাপনের জন্য ন্যূনতম চাহিদাগুলি পুরণের ক্ষেত্রে যেসব কৌশল প্রয়োগ করা হত সেগুলি বয়স্করাই শিশুদের শেখাত ।
ক্রমশ মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালী জটিল হতে থাকায় এই জটিল জীবনযাত্রার সঙ্গে অভিযোজন করার জন্য পূর্ব উল্লিখিত বয়স্কদের অপ্রথাগত শিক্ষা যথেষ্ট নয় । এর জন্য প্রয়োজন হল বিশেষ একদল অভিজ্ঞ ব্যক্তি , যারা নির্দিষ্ট স্থানে শিশুদেরকে নিয়ে এসে অভিযোজনের পথ বা কৌশলগুলি তাদের অবহিত করাবেন এবং তা অনুশীলনের জন্য উৎসাহদান করবেন । এইভাবে দেখা গেল শিক্ষার জন্য প্রয়োজন হল নির্দিষ্ট ব্যক্তিসকল , নির্দিষ্ট স্থান , শিক্ষার্থী এবং অভিযোজনের কৌশল সকল । এই ধরনের শিক্ষাকেই বলা হল প্রথাগত শিক্ষা । অর্থাৎ প্রথাগত শিক্ষার উপাদানগুলি হল— শিক্ষক ( অভিজ্ঞ ব্যক্তি ) , নির্দিষ্ট স্থান ( বিদ্যালয় ) , শিক্ষার্থী এবং পাঠক্রম ( অভিযোজনের উপায় সকল ) । তাই বলা হয় বিদ্যালয় বা স্কুল হল শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । অর্থাৎ শিক্ষার সঙ্গে বিদ্যালয় বা বিদ্যালয়ান ( Schooling ) – এর সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ । এ ব্যতীত বিদ্যালয়ানের ( বিদ্যালয়ের ব্যাবহারিক অর্থ ) সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্ক প্রসঙ্গে আরও কিছু যুক্তি প্রদান করা যেতে পারে যেমন—
( 1 ) বিদ্যালয় প্রথাগত শিক্ষার অন্য তিনটি উপাদান শিক্ষক , শিক্ষার্থী ও পাঠক্রম পারস্পরিক ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে আবদ্ধ । এই তিনটি উপাদানের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়ার জন্য একটি মাধ্যমের প্রয়োজন । বিদ্যালয় এই মাধ্যমের কাজ করে
( 2 ) সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষণীয় বিষয় বিপুল ও জটিল আকার ধারণ করে পরিবারের মধ্যে ব্যক্তিদের দ্বারা এই সব বিষয় শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয় । বিদ্যালয়ান এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে এগিয়ে আসে ।
( 3 ) শিশুর সার্বিক এবং সুসমন্বিত বিকাশ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য । এই বিকাশকে সঠিক রূপ দেওয়া কেবলমাত্র বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব ।
( 4 ) শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের জীবিকা অর্জনের জন্য প্রস্তুত করে তোলা । বর্তমান বিশেষীকরণের যুগে জীবিকা অর্জনের বহু পথ উন্মোচিত হয়েছে । শিক্ষার্থীদের এইসব পথ সম্পর্কে সচেতন করা এবং তাদের মেধা , আগ্রহ এবং প্রবণতা অনুযায়ী জীবিকা অর্জনের প্রাথমিক ব্যবস্থা শিক্ষাই গ্রহণ করে । আর এর জন্য প্রয়োজন হল বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পাঠক্রমিক এবং সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করা ।
(5 ) আমাদের মতো গণতান্ত্রিক দেশে সকলেরই শিক্ষার অধিকার আছে । যেসব শিশুরা বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে আছে তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন । এই ধরনের শিক্ষার সুযোগ বিদ্যালয়ের পক্ষেই করা সম্ভব । উপরোক্ত আলোচনার পেক্ষিতে বলা যায় যে , বিদ্যালয় এবং শিক্ষা অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্কিত ।