প্রশ্ন : ধারণা মানচিত্র কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্য লিখুন । বাস্তবায়নের উপায় লিখুন । এর গুরুত্ব লিখুন ।
উত্তর : ধারণার মানচিত্র এক ধরনের রেখ মানচিত্র , যা শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভে সহায়তা করে । ধারণার মানচিত্র কোনো মূল ধারণা বা অনুমানকে নিয়ে গড়ে ওঠে , মূল ধারণা কীভাবে ছোটো ছোটো ধারণায় ভেঙে নির্দিষ্ট একক – এ পৌঁছোনো যায় এবং তাদের পুনরায় একটি ধারণায় পরিণত করা যায় এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ধারণার মানচিত্র ( Concept mapping ) |
বৈশিষ্ট্য : ধারণার মানচিত্রের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে । যেমন—
( i ) এটি প্রাথমিকভাবে একটি দলগত পদ্ধতি ।
( ii ) এটি পরিকাঠামোগত সুবিধাযুক্ত ধারণা । দলগতভাবে কাজ করার এটি একটি খুবই কার্যকরী পদ্ধতি । ব্যক্তিগত কাজে অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার হলেও দলগত কাজে ধারণার মানচিত্র বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।
( iii ) এটি সুপরিকল্পিত পদ্ধতি । শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের ধারণাগুলি সাজিয়ে নিতে পারে , বুঝতে পারে সেজন্য প্রশিক্ষিত তত্ত্বাবধায়ক কতকগুলি সুনির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করেন ।
( iv ) ধারণার মানচিত্রের মূল কথা হল দলের প্রত্যেকের কাছ থেকে আলাদা আলাদা ধারণা নিয়ে তা বিশ্লেষণ করার পর একটি সামগ্রিক ধারণা তৈরি করা ।
( v ) ধারণার মানচিত্রের ধারণাগুলি যথার্থ বিশ্লেষণ ও এককীকরণের জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামের সহায়তা নেওয়া হয় । বাস্তবায়নের উপায় ধারণার মানচিত্র বাস্তবায়নে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যায় । যথা— প্রস্তুতি : ধারণার মানচিত্র গঠনের জন্য প্রথমে অংশগ্রহণকারীদের ( শিক্ষার্থীদের ) চিহ্নিত করা হয় । এদের সংখ্যা শ্রেণির শিক্ষার্থীর ভিত্তিতে করা হয় । তবে 5-10 জনকে নিয়ে দলগঠন করা যেতে পারে । এরপর প্রকল্পের উদ্দেশ্য নির্ণয় করা হবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সিডিউ তৈরি করা হবে ।
সাধারণ পদক্ষেপ : প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিবৃতি শিক্ষার্থীরা দেবে । প্রকল্পের ফলাফল সম্পর্কে তারা বলবে । প্রকল্পে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য ব্রেইনস্টমিং , কুইজ , প্রভৃতির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে ।
পরিকাঠামো নির্ণয় : শিক্ষার্থীরা যে বিবৃতি দেবে তার মধ্যে সাদৃশ্য বিবৃতিগুলিকে শ্রেণিবদ্ধ করবে , আলাদা ফাইল তৈরি করতে পারবে । কম্পিউটারের সাহায্য নিতে পারবে , হাতেকলমে কাজগুলি করতে পারবে । প্রত্যেক ফাইলের আলাদা আলাদা নামকরণ করা হবে । বিবৃতিগুলিকে সংখ্যার সাহায্যে প্রকাশ করা যেতে পারে । যেমন— 1 নং বিবৃতি , 2 নং বিবৃতি , ওনং বিবৃতি , 4 নং বিবৃতি , 5 নং বিবৃতি । 1 নং বিবৃতি অপেক্ষা ৫ নং বিবৃতি অধিক গুরুত্বপূর্ণ ।
উপস্থাপনস্তর : এই স্তরে ধারণার বিশ্লেষণ করা হয় । শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে । তত্ত্বাবধায়ক ( শিক্ষক ) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করবেন । তত্ত্বাবধায়কের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের ধারণার মানচিত্রগুলি তৈরি হবে ।
প্রয়োগ : যে ধারণার মানচিত্র গঠিত হবে তার সাহায্যে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যক্ত হবে । এর সাহায্যে প্রকল্পের উদ্দেশ্য কতদূর বাস্তবায়িত হল তাও পরিমাপ করা হয় ।
ধারণার মানচিত্রের গুরুত্ব
ধারণার মানচিত্র শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে । যেমন—
( i ) শিক্ষার্থীদের মনঃসঞ্চালন ( Brain storm ) এবং নতুন ধারণা গঠনে সহায়তা করে ।
( ii ) শিক্ষার্থীদের নতুন ধারণা গঠনে উৎসাহ দেয় এবং নতুন ধারণার সঙ্গে সংযোগ ঘটায় ।
( iii ) শিক্ষার্থীদের সুস্পষ্ট ভাবে অনুমান , চিন্তা এবং তথ্যসূত্রের সঙ্গে সংযোগসাধন করে । ধারণার মানচিত্র ।
( iv ) পুরাতন ধারণার সঙ্গে নতুন ধারণার সমন্বয় ঘটাতে সাহায্য করে ।
( v ) যে – কোনো এককের মূল ধারণা গ্রাহ্য এবং তথ্যের মূল্যায়ন সক্ষম করে তোলে ধারণার মানচিত্র ।
প্রশ্ন 43 : অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার নীতিগুলি লিখুন । অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষকের ভূমিকা লিখুন ।
উত্তর : শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার নীতি : শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার তিনটি নীতি রয়েছে । এগুলি হল—
( a ) ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা : শ্রেণির প্রতিটি শিশুই কোনো না কোনো ভাবে । বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন । কারণ জ্ঞানমূলক দক্ষতা বা পারদর্শিতার দিক থেকে কখনোই শ্রেণিকক্ষের সমস্ত শিশুকে একটি বা কয়েকটি দলে ভাগ করা যায় না । মনে রাখতে হবে প্রতিটি শিশুই যেহেতু একেকটি পৃথক সত্তা তাই প্রত্যেকেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এবং প্রত্যেকের জন্যই পৃথক পৃথক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে ।
( b ) শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গ্রহণ : শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য যে – কোনো রকম উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় । কোনো রকম শাস্তির ভয় না দেখিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন । পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে তাদের যেমন শিক্ষা দিতে হবে তেমনি তাদের ক্ষমতা বিবেচনা করে পাঠদানের কৌশল ঠিক করতে হবে ।
( c ) উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ : শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামনে শুধুমাত্র জ্ঞানমূলক শিক্ষা না দিয়ে সব সময় উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে জীবনে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করবেন । এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করে অনেক শিক্ষার্থীই যা সফলতার ভিডিয়ো পোস্টার দেখানো সম্ভব হলে এমন মানুষকে শ্রেণিতে উপস্থিত করে শিক্ষার্থীদের সামনে তার বক্তব্য অভিজ্ঞতা অর্থাৎ জীবনে সফলতার পদক্ষেপগুলি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করানো যেতে পারে ।
( i ) শ্রেণিতে শিশুদের মধ্যে ভিন্নতা থাকবেই , সেটা মেনে নিয়ে কীভাবে বৈচিত্র্য বজায় রেখে পাঠদান করা যায় তার ভাবনা ভাবতে হবে ।
( ii ) শ্রেণিকক্ষে প্রতিবন্ধকতা একটা সামাজিক নির্মাণ । যা সমাজ কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া ধারণা । একে বি – নির্মাণ করবে শিক্ষক নিজের অভিজ্ঞতা ও পারদর্শিতা দিয়ে ।
( iii ) শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থীকে রোজ এক জায়গায় বসতে না দিয়ে ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী এবং ঘড়ির কাঁটার বিপরীতমুখী করে বসাতে হবে । যেমন— শ্রেণিতে 20 জন শিক্ষার্থী থাকলে তাদের – 1 , 2 , 3 , 4 , 5 19,20 করে বসানো হল প্রথম দিন । দ্বিতীয় দিন 20 বসবে । এর জায়গায় । 1 বসবে 2 এর জায়গায় । এইভাবে চলতে থাকবে । এই পদক্ষেপের ফলে প্রতিবন্ধী , পিছিয়ে পড়া প্রমুখ শিশুরা নিজেদেরকে সকলের সামনে নিজেকে তুলে ধরতে পারবে ।
( iv ) সহ – শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে যাবেন ।
( v ) সৃজনশীল কাজ ( Creativity ) এর উপর জোর দেবেন । যেমন — কাগজের ফুল তৈরি , ছবি আঁকা প্রভৃতি । Srpg = zola এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে ওঠে — দলগত সহযোগিতা ও সংহতি বোধ , শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে , মূল্যবোধ গড়ে ওঠে ।
( vi ) শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যাতে সঙ্গী শিখন ( Peer learning ) এর মাধ্যমে শেখে সেদিকেও শিক্ষককে নজর দিতে হবে । এর ফলে তাদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব , নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা , সামাজিক হতে সহযোগিতা করে ।
( vii ) শ্রেণিতে বৈচিত্র্য থাকবেই । শিক্ষক বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলবেন । তাহলেই তাদের মধ্যে যে দৃঢ়তা তৈরি হবে তা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে ।