প্রশ্ন : পাঠ একক বিশ্লেষণ কাকে বলে ? পাঠ একক বিশ্লেষণের স্তর বা ধাপগুলি লিখুন ।
উত্তর : সাধারণত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ শ্রেণি পাঠক্রমের বিষয়বস্তুকে বিভিন্ন একক অনুসারে উপস্থাপন করেন । কিন্তু উপস্থাপনার পূর্বে উক্ত বিষয়বস্তুর অংশসমূহকে শিক্ষণবিজ্ঞানের আধুনিক সূত্র মেনে নির্দিষ্ট ধাপ অনুসারে শিক্ষক যদি নিজের পাঠে অগ্রসর হন । তবে পাঠদান কার্যাবলি যথাযথ হয় এবং শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা সার্থকভাবে শিখন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে । এই পদ্ধতিকে পাঠ একক বিশ্লেষণ বলে ।
পাঠ একক বিশ্লেষণের স্তর বা ধাপ : শ্রেণি শিক্ষণকে আদর্শায়িত করার জন্য শিক্ষণবিজ্ঞানগত বিশ্লেষণের কাজটি কয়েকটি স্তর অনুসরণ করে অগ্রসর হয় । এই স্তরগুলি হল—
( i ) বিষয় নির্বাচন : কোন্ বিষয়ের পাঠ একক বিশ্লেষণ হবে তা প্রথমে ঠিক করে নিতে হবে । পাঠ একক উপএককে ভাগ বলে তা করে নিতে হবে এবং কোন উপএককের জন্য কত পিরিয়ড বা সময় ব্যয় করা হবে তাও ঠিক করে নিতে হবে । নিম্নের ছক অনুযায়ী বিষয় একক , উপএকক , পিরিয়ড সংখ্যা ভাগ করতে হবে ।
( ii ) বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্ত বিবরণ : শিক্ষার্থীদের সমানে বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হবে । আজকের পাঠটি পাঠ করে শিক্ষকের বুঝতে হবে— মানসিক শক্তির সঙ্গে শারীরিক ও সামাজিক দিকেরও বিকাশ ঘটাতে হবে ।
( iii ) পূর্বার্জিত শিখন সামর্থ্য : তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ‘ পোশাক ‘ এককটির আজকের উপএকক দুটি পাঠ গ্রহণের আগে খাদ্য এককটি সম্পর্কে জেনেছে । পূর্বের শিখন সামর্থ্যকে কাজে লাগাবার জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হবে । যেমন—
( a ) শাকপাতা খাওয়া দরকারি কেন ?
( b ) গাছের কোন্ কোন্ অংশ আমরা খাই উদাহরণসহ বলো ।
( c ) ফল খাওয়ার সুফল বলো ।
( d ) প্রাণীজ খাবার ও উদ্ভিদজাত খাবারের নাম বলো ।
( e ) মানুষ কীভাবে আগুন জ্বালাতে শিখেছিল ?
( iv ) শিক্ষার্জিত উদ্দেশ্যাবলি : শিক্ষার্জিত উদ্দেশ্যাবলি বলতে বোঝায় – শিক্ষার্থীরা বিষয় একক পাঠ করে যা শিখবে বা জানবে । এই উদ্দেশ্যাবলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় । এগুলি হল—
( a ) বৌদ্ধিক স্তর , ( b ) অনুভূতিমূলক স্তর , ( c ) সঞ্চালনমূলক স্তর ।
( a ) বৌদ্ধিক স্তর : ( i ) জ্ঞানমূলক উদ্দেশ্য , ( ii ) বোধমূলক উদ্দেশ্য , ( iii ) প্রয়োগমূলক উদ্দেশ্য , ( iv ) দক্ষতামূলক , ( v ) বিশ্লেষণ করতে পারা , ( vi ) সংশ্লেষণ এবং ( vii ) মূল্যায়ন করতে পারা ।
( b ) অনুভূতিমূলক স্তর : অনুভূতিমূলক উদ্দেশ্যাবলিকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— ( i ) আগ্রহ , ( ii ) মনোভাব এবং ( iii ) চরিত্রায়ণ ।
( c ) সঞ্চালনমূলক স্তর : সঞ্চালনমূলক উদ্দেশ্যাবলি হল দক্ষতামূলক কাজ ( Skill ) ।
( v ) শিক্ষণ কৌশল : কোনো বিষয় শিক্ষার্থীদের সামনে যে যে পদ্ধতিতে তুলে ধরা হয় । এবং তাদের আয়ত্ত করতে সাহায্য করে তাকে শিক্ষণ কৌশল বলে । যেমন—
( i ) বক্তৃতা : শিক্ষক – শিক্ষিকা বিষয়বস্তুটি বক্তৃতা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন । যেমন — পোশাক সম্পর্কে বক্তৃতা প্রদান । শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পোশাক নিয়ে আলাপ – আলোচনা করে মতের আদানপ্রদান ঘটানো ।
( ii ) প্রতিপাদন : বিভিন্ন প্রকার উপকরণসহ শিক্ষার্থীদের সামনে বিষয় উপস্থাপনকেই বলা হয় প্রতিপাদন যেমন – পোশাক একক উপস্থাপনের সময় চার্ট , মডেল , বাস্তব পোশাকসহ বিষয় ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা ।
( iii ) আবিষ্কারমূলক পদ্ধতি : কোনো বিষয় জানার পর সেই বোধ বাস্তবে প্রয়োগ করাই হল আবিষ্কার । যেমন — বিভিন্ন ধরনের ফলের মধ্যে কোন্ ফল খাওয়া যায় তা বেছে নিতে পারা ।
( iv ) আলোচনা : শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা যে জ্ঞান অর্জন করে তার সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত জ্ঞানের সমন্বয় ঘটাতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শ্রেণিবিন্যাসকে যথাযথ করেন তাকে আলোচনা বলে ।
( v ) পরীক্ষামূলক : বিষয় সম্পর্কে যে ধারণা হবে তা বাস্তবজীবনে পরীক্ষার সুযোগ পাবে । এই ক্ষেত্রে উপকরণ / প্রদীপনও ব্যবহার করা যেতে পারে ।
( vi ) পাঠসহায়ক উপাদান : পাঠ পরিচালনার জন্য যে সকল উপকরণ ব্যবহার করা হয় তাকে পাঠসহায়ক উপাদান বলা হয় । পাঠসহায়ক উপাদানে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা উপাদান লাগে , তবে কিছু উপাদান সব বিষয়ের পাঠদানের জন্য লাগে , যেমন – চক , ডাস্টার , কৃষুফলক ( ব্ল্যাকবোর্ড ) , অন্যান্য বোর্ড , নির্দেশক দণ্ড ইত্যাদি । পোশাক একক পাঠদানের জন্য রংবাহারি পোশাক , বিভিন্ন পেশার জন্য নির্দিষ্ট পোশাক , ঝতু অনুযায়ী বাস্তব পোশাক বা ছবি , পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজন সুতো , উল ইত্যাদি উৎস সম্পর্কে তথ্য , পোশাক তৈরির কারখানা , অতীতের পোশাকের ছবি , পোশাক তৈরির মেশিনপত্রের ছবি প্রভৃতি ।
( vii ) শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদান পদ্ধতি : শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাদান পদ্ধতির ( methods ) ব্যবহার করা হয় । অর্থাৎ সব বিষয়ে একই রকম পদ্ধতি ( methods ) ব্যবহার করা হয় না । সাধারণত যে সকল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা হল—( a ) প্রতিপাদন পদ্ধতি , ( b ) প্রদর্শন ( Display ) পদ্ধতি , ( c ) পরীক্ষণ ( Experimentation ) , ( d ) শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা ( Students ‘ , Activity ) , ( e ) আলোচনা পদ্ধতি ( Diss – cussion methods ) , ( f ) চক ও ব্ল্যাকবোর্ডের ব্যবহার ।
( viii ) অনুসন্ধানী প্রশ্ন ও উত্তর : পাঠকে আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশ্ন ও উত্তর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ।
( ix ) গৃহকাজ : শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণকালে যা শিখল তা প্রশ্ন – উত্তরের মাধ্যমে যাচাই করার পর বাড়ির কাজ দেওয়া যেতে পারে । এই ক্ষেত্রে Worksheet দেওয়া হয় , প্রশ্ন দেওয়া হয় উত্তর লিখে আনার জন্য ।
( x ) অভীক্ষাপত্রের খসড়া প্রস্তুতকরণ ও একক অভীক্ষাপত্র তৈরি করা । এই অভীক্ষাপত্রের সাহায্যে শিক্ষার্থীর অগ্রগতি যাচাই করা হয় ।
শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পূর্বে শিক্ষক – শিক্ষিকাগণ উপরোক্ত বিষয়গুলি অনুসরণ করে । উপএকক বিশ্লেষণ করবেন । শিক্ষক – শিক্ষিকা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের পূর্বে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি স্থির করতে পারেন , যথা—
( a ) পাঠ্যবিষয় শিক্ষার্থীদের আচরণের কী পরিবর্তন আনতে পারবে ।
( b ) শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবিষয় থেকে কী কী শিখবে ।
( c ) বিষয়বস্তুর তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবে ।
( d ) বিষয়ের অর্জিত জ্ঞান নতুন পরিস্থিতিতে কতটা কাজে লাগাতে পারবে ।
( e ) বিষয়বস্তু কেমনভাবে উপস্থাপন করতে পারবে ।
( f ) শিক্ষা উপকরণ হিসাবে কী কী ব্যবহার করবে ।
( g ) শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তুকে কতটা গ্রহণ করতে পেরেছে তা নির্ণয় করার কৌশল গ্রহণ ।
( h ) শিক্ষার্থীর জ্ঞান নির্ণয় করা প্রভৃতি ।