প্রশ্ন : অসমতা ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতীয় শ্রেণিকক্ষে পাঠক্রম ও শিক্ষাবিজ্ঞান সংক্রান্ত কৌশলের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব তা লিখুন ।
উত্তর : সমস্ত ধরনের ব্যতিক্রমী (প্রতিবন্ধীসহ) শিক্ষার্থীদের সামর্থ্য ও চাহিদার সঙ্গে সামস্য রেখে শিক্ষার ব্যবস্থা করা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থার বিশেষ বৈশিষ্ট্য । এই বৈশিষ্ট্যকে সার্থক রূপ দেওয়ার জন্য শিক্ষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন কৌশল (Pedagogical Tech nique) প্রয়োগ করা হয় । যার ফলে শিক্ষার্থীদের বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাদান সম্ভব হয় । নিম্নে শিক্ষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন কৌশল উল্লেখ করা হল
(1) সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষণ দক্ষতাবৃদ্ধি : অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার সার্থক রূপায়ণের জন্য সাধারণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন হয় । NCTE 1998 খ্রিস্টাব্দে উল্লেখ করেছে যে , পেশাগ্রহণের আগে শিক্ষকদের শিক্ষণমূলক পাঠক্রমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টি রাখতে হবে । উপযুক্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বিশেষ চাহিদাগুলি চিহ্নিত করতে পারবেন ও শিক্ষাদানে সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারবেন
(2) চাহিদাভিত্তিক নির্দেশনামূলক কৌশল অবলম্বন : অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বলতে কিছু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা প্রতিবন্ধী শিশুকে সাধারণ স্কুলে ভরতি করা বোঝায় না এইসব শিশুদের শ্রেণি – পরিবেশে অভ্যস্ত করে তোলার ব্যবস্থা নিতে হয় । সব শিশুর চাহিদা এক রকম নয় । তাদের প্রতিবন্ধকতাও এক ধরনের নয় । এদের অনেকে সর্বদা সাহায্য প্রত্যাশী আবার অনেকে সামান্য সাহায্য পেলেই এগিয়ে যেতে পারে ।
(3) মানবশক্তি ও বস্তুগত সম্পদের আদানপ্রদান : এই শিক্ষাব্যবস্থা এমন একটি কার্যক্রম যেখানে সমগ্র সমাজকে যুক্ত হতে হয় । কাজেই সামাজিক উন্নতির জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের পারস্পরিক চিন্তা ও কাজের যোগাযোগের উপর এই শিক্ষাব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে ।
(4) অভিভাবক ও সমাজের অন্যান্যদের অংশগ্রহণ : এই শিক্ষা কার্যক্রমে অভিভাবকদের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন । এর ফলে অন্তর্ভুক্তির সংখ্যাও বৃদ্ধি পায় ও প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটে ।
(5) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও সাধারণ শিশুর মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন ও সহযোগিতামূলক শিখন . সাধারণ শিশুরাও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের ব্যাপারে পরস্পরকে সাহায্য করতে পারে ।
(6) বিদ্যালয় গৃহে বিশেষ পরিকল্পনা ও সাহায্যকারী সরঞ্জামের ব্যবস্থা : এখানে এক এক ধরনের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য এক – এক ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন । হয় । শারীরিক ও অস্থিজনিত প্রতিবন্ধীদের জন্য বিদ্যালয় – গৃহের সিঁড়ি ইত্যাদির বিশেষ ব্যবস্থা দরকার । তবে পাশাপাশি একথা মনে রাখতে হবে যে , প্রতিবন্ধীদের সুবিধার্থে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে যেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের অসুবিধা না হয় ।
(7) নমনীয় পাঠক্রম এবং সহ – পাঠক্রমের ব্যবস্থা : কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ পাঠক্রম ও সহ – পাঠক্রমের প্রয়োজন হয় । যেমন- ভাষা শিক্ষার জন্য শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের বিশেষ পাঠক্রম প্রয়োজন হতে পারে । আবার ভূগোলে মানচিত্র অঙ্কন বা রেখাচিত্র অঙ্কনের জন্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে । Peer Tutoring- এর ব্যবস্থা করা : এক্ষেত্রে দুজন , তিনজন বা চারজন শিক্ষার্থী এক সঙ্গে কাজ করে । Peer Tutoring- এর ভিত্তি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সাহায্য ও মত আদানপ্রদানের মাধ্যমে শিক্ষা । শিক্ষক ঠিক করে দেন কোথা থেকে শিক্ষা গ্রহণ শুরু হবে । শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের পড়াবে , শিক্ষক মাঝে মাঝে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন , মূল্যায়ন করেন এবং কোথায় শেষ হবে বলে দেন ।
(9) সহপাঠক্রমিক এবং সংস্কৃতিমূলক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ : শিক্ষার্থীরা যাতে বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের এবং সংস্কৃতিমূলক কর্মসূচিতে অধিক পরিমাণে অংশগ্রহণ করে তার প্রতি লক্ষ রাখা প্রয়োজন ।
(10) বিদ্যালয়ের নিয়মনীতি ইত্যাদির নমনীয়তা : শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের কথা স্মরণ করে বিদ্যালয়ের নিয়মনীতি , প্রথা , সুযোগসুবিধা ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে ।
(11) বিশেষ শিক্ষামূলক চাহিদা : ‘ বিশেষ শিক্ষামূলক চাহিদার কথা বিবেচনা করে শিখনের বাধা ন্যূনতম মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে যাতে সব শিক্ষার্থীরাই শিখনে অংশগ্রহণ করতে পারে ।
(14) শিক্ষণের বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ : শিখনের বিভিন্ন কৌশল এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগের মাধ্যমে এই ধরনের শিক্ষা – শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকরী করে তুলতে হবে ।
(15) গঠনমূলক মূল্যায়ন প্রয়োগ : শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি চিহ্নিত করার জন্য গঠনমূলক মূল্যায়ন (Assessment) প্রয়োগ করতে হবে ।
(16) বহু – ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার : শিখন এবং শিক্ষণে যাতে একাধিক ইন্দ্রিয় সক্রিয় হয় সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ।
(17) বিশেষ শিশুদের পাঠক্রম প্রণয়নে Brennan (1985) চারটি সুপারিশ করেন । যেমন—
(ক) পাঠক্রমের বিষয়বস্তু সব ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী হবে ।
(খ) পাঠক্রম সব ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রাসঙ্গিক হবে অর্থাৎ সব ধরনের শিশুরা বুঝবে যে পাঠক্রম তাদের নিকট প্রয়োজনীয় ।
(গ) পাঠক্রম হবে বাস্তব অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের বয়স , ক্ষমতা অনুযায়ী হবে এবং যা অবশ্যই অর্জনযোগ্য হবে ।
(ঘ) শিক্ষার্থীদের নিকট শিখনের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে ।
(18) তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার : শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করা প্রয়োজন । কারণ তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির সঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মিথস্ক্রিয়া উত্তমভাবে সম্পন্ন হয় ।