প্রশ্ন 37 : অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় বিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা , পিতামাতা ও সমাজের ভূমিকা লিখুন ।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় বিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা : অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় বিদ্যালয় প্রশাসনের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে । মূলত এই ধরনের বাস্তবায়নের উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করে বিদ্যালয় প্রশাসন । সাধারণ বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের একত্রে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে সকল বাধা অতিক্রম করার দায়িত্ব বিদ্যালয় প্রশাসনের । প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকাগুলি হল —
(ক) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুদান সরকার বা স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জোগাড় করা ।
(খ) প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করা ।
(গ) বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের স্বল্পকালীন বিশেষ শিক্ষার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ।
(ঘ) বিদ্যালয়ের শিক্ষক – শিক্ষিকাদের নিয়ে এই শিক্ষা বিষয়ে পর্যালোচনা করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও গুরুত্ব তুলে ধরা ।
(ঙ) বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের ভিতরে ও বাইরে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোগত উন্নতির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া ।
(চ) শিক্ষকদের শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের জোগান দেওয়া ।
(ছ) প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে পাঠ্যক্রমের প্রয়োজনীয় সংযোজন ও বিয়োজন করা ।
(জ) বিদ্যালয়ের সমস্ত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধিতার ধরন ও মাত্রা নির্ধারণের জন্য উপযুক্ত চেক্ – আপ ক্যাম্পের আয়োজন করা ।
(ঝ) শিক্ষক – শিক্ষিকা , অভিভাবক ও অভিভাবিকাদের নিয়ে মাঝে মাঝে সাধারণ সভার POPI অয়োজন করা ।
(ঞ) প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ও তাদের অভিভাবকদের শিক্ষা বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য বিশেষ আর্থিক সাহায্য প্রদানের ব্যবস্থা করা ।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় পিতা – মাতার ভূমিকা : অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার সঠিক রূপায়ণে প্রতিবন্ধী শিশুদের অভিভাবকদের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে । এগুলি হল—
(ক) শিশুকে বিদ্যালয়ে ভরতির সময় প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্যের উল্লেখ করা ।
(খ) সন্তানের বিশেষ চাহিদা সম্পর্কে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অবহিত করা ।
(গ) সন্তানের প্রতিবন্ধিতার ধরন ও মাত্রা এবং তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে শিক্ষকদের অবহিত করা ।
(ঘ) নিয়মিতভাবে শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা ।
(3) বিদ্যালয় ছুটির পর অথবা বিদ্যালয় আরম্ভ হওয়ার আগে বাড়িতে সন্তানের কাজকর্ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়া ।
(চ) সন্তানের অগ্রগতি বা দুর্বলতার দিকগুলি সম্পর্কে শিক্ষকদের সঠিক তথ্য সরবরাহ করা ।
(ছ) শুধুমাত্র বিদ্যালয় বা শিক্ষকের উপর নির্ভরশীল না থেকে বাড়িতেও শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা ।
(জ) নিজের সন্তানের পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিবন্ধী ও স্বাভাবিক সহপাঠীদের প্রতিও সহানুভূতির মনোভাব পোষণ করা ।
(ঝ) বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্বতোভাবে সহায়তা করা ।
(ঞ) বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করা ।
(ট) পড়াশোনার পাশাপাশি সন্তানকে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলিতে উৎসাহিত করা ।
(ঠ) প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি চিকিৎসকের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা এবং চিকিৎসকের বিশেষ পরামর্শ সম্পর্কে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা ।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় অভিভাবকের অংশগ্রহণ একটি অমূল্য বিষয় । অভিভাবক ও শিক্ষকের জ্ঞান , অভিজ্ঞতা , সময় , শ্রম প্রভৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে একটি প্রতিবন্ধী শিশু সঠিক দিক নির্দেশ পেতে পারে ।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় সমাজের ভূমিকা : প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি । পরিবার তথা সমাজই পারে একজন প্রতিবন্ধীকে আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে । সমাজের কয়েকটি ভূমিকা হল—
(i) সমাজের প্রতিটি সুনাগরিককে প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে হবে । অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় এদেরকে অন্তর্ভুক্তকরণে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করতে হবে ।
(ii) বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে মত বিনিময় করতে হবে । এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সুপরামর্শ দিতে হবে ।
(iii) বিভিন্ন সামাজিক ক্রিয়াকর্মে প্রতিবন্ধীদের নিয়োজিত করে তাদের আত্মবিশ্বাস বারাতে হবে।
(iv) বিদ্যালয়ে সহপাঠী প্রতিবন্ধী বন্ধুদের প্রতি যাতে সহযোগিতা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এবিষয়ে নিজেদের স্বাভাবিক সন্তানদের সুপরামর্শ দেবেন ।
(v) বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর পিতা – মাতার পাশে দাঁড়াতে হবে ।
(vi) সমাজের যে সমস্ত প্রতিবন্ধী শিশু এখনও বিদ্যালয়ে যায়নি অথবা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে , তাদেরকে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় ভরতি করতে হবে ।
(vii) সমাজে ধর্মীয় , সাংস্কৃতিক , ক্রীড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করে তাদেরকে উৎসাহিত ও আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে ।