নারীশিক্ষার সমস্যা ও এই সমস্যা সমাধানের উপায়গুলি লিখুন ।
উত্তরঃ নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যাগুলি দেখা যায় তা হল
(1) সংবিধানে নারী – পুরুষ সমানাধিকারের কথা বলা হলেও তার প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবে দেখা যায় না।
(2) গ্রাম-অঞ্চলে বালিকা বিদ্যালয়ের অভাব রয়েছে । দুরত্বের জন্য অনেক সময়ই দেখা যায় ইচ্ছা থাকলেও মেয়েরা বাইরে অর্থাৎ দূরের কোনো বালিকা বিদ্যালয়ে পড়তে যায় না ।
(3) অধিকাংশ অভিভাবক মনে করেন মেয়েরা গৃহকর্মের জন্যই উপযুক্ত । কন্যা সন্তানের শিক্ষার চেয়ে পুত্র সন্তানের শিক্ষার উপর বেশি নজর দেন ।
(4) গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের জন্য কোনো ছাত্রীনিবাস নেই । মেয়েদের পৃথক শৌচাগার নেই যা তাদের পক্ষে খুবই অসুবিধাজনক ।
(5) ত্রুটিপূর্ণ পাঠ্যক্রম যা অনেক সময়ই মেয়েদের রুচি , সামর্থ্য , আগ্রহ প্রভৃতি আকাঙ্ক্ষা মেটাতে পারে না । বাধ্য হয়ে যে – কোনো একটি বিষয় নিয়ে পড়তে হয় , যা তার পছন্দের বিষয় নাও হতে পারে ।
(6) আবার অনেক ক্ষেত্রে এই ধারণা মেয়েরা অঙ্কে , বিজ্ঞানে দুর্বল । তাই সামর্থ থাকলেও সুযোগের অভাব থাকে ।
(7) মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে দিতে অনেক সংকীর্ণ মানুষের অভিমত হল উচ্চশিক্ষিত মেয়েরা সাংসারিক শৃঙ্খলা মানতে চান না ।
(8) অনুন্নত জাতি – উপজাতিদের মধ্যে রক্ষণশীলতা ও কুসংস্কার থাকায় নারী শিক্ষার পথে বাধা সৃষ্টি করছে ।
(9) উচ্চ – শিক্ষার জন্য সর্বত্র মেয়েদের জন্য কলেজ নেই , সহ – শিক্ষারও সুযোগ অনেক কলেজে নেই ।
(10) মেয়েদের জন্য পৃথকভাবে শিক্ষক শিক্ষণের কলেজ অনেক কম তাই শিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষিকার অভাব রয়েছে ।
(11) বাল্যবিবাহ নারীশিক্ষাকে ব্যাহত করে।
(12) নিরক্ষর মহিলা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জননী । ফলে তারা তাদের মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে নিরুৎসাহ থাকবে ।
(13) পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারীশিক্ষার বাধা ।
(14) পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুত্রই কুল রক্ষা করে , কন্যা সন্তান অন্যের সংসারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় । তাই পিতৃকুল তার শিক্ষার তেমন দায়িত্ব নিতে চায় না ।
(15) নিরাপত্তার অভাব নারীদের চলার পথে প্রধান বাধা যা তার শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ।
(16) এই সমাজব্যবস্থায় পুরুষের তুলনায় নারীর সম্মান ও মর্যাদা অনেক অংশে কম । যা শুধু নারী শিক্ষা ব্যাহত করছে তাই নয় , কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়াকেও ব্যাহত করছে ।
(18) পশ্চাৎপদ সমাজব্যবস্থা ও বন্ধ্যা মানসিকতা নারী শিক্ষার অগ্রগতিকে রুদ্ধ করে ।
(17) নারী শিক্ষার পথে একটি বড়ো বাধা হল অনুন্নয়ন , যা সার্বিক জনশিক্ষাকেও ব্যাহত করে । মেয়েদের ক্ষেত্রে এই অনুন্নয়ন অনেক বেশি হয় । আর এই অনুন্নয়নের কারণ হল আর্থসামাজিক ও পূর্বে বর্ণিত কারণগুলি ।
নারীশিক্ষার সমস্যা সমাধানের উপায়গুলি হল —
(1) প্রয়োজন অনুসারে আঞ্চলিক দূরত্বের বিচারে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
(2) গ্রামাঞ্চলে ছাত্রীদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে ।
(3) মেয়েদের অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে ।
(4) মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে ।
(5) মেয়েদের জন্য আংশিক সময়ের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । যারা সাংসারিক কাজকর্মের কারণে পূর্ণ সময়ের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছেন না ।
(6) ছেলেমেয়েদের যৌথ বিদ্যালয়গুলিতে School mother নিয়োগ করতে হবে । কারণ অনেক সময় দেখা যায় যে যেসব বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েরা একসাথে পড়ে সেখানে যদি মহিলা শিক্ষিকা থাকে তাহলে অভিভাবকরা কন্যাকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে আগ্রহী হবেন ।
(7) দুর্গম অঞ্চলে যেসব শিক্ষার্থী যোগদান করবে তাদের বিশেষভাবে অর্থনৈতিক বা অন্যান্য সুযোগসুবিধা দেওয়া উচিত ।
(8) বিদ্যালয়ের নিকটে শিক্ষিকাদের থাকার ব্যবস্থা করা দরকার ।
(9) গ্রামের জনসাধারণ বালিকাদের বিদ্যালয়ে যেতে উৎসাহিত করবে সেজন্য ভিলেজ কমিউনিটি তৈরি করা ।
(10) নারী শিক্ষায় পাঠ্যক্রমে কিছু পরিবর্তন করা দরকার , মাতৃত্বের বৈশিষ্ট্য , যেমন— শিশুদের যত্ন , গৃহ – অর্থনীতি , শিশুদের লালনপালন ইত্যাদি বালিকাদের শিক্ষার বিষয় পাঠ্যক্রমে থাকবে ।
(11) কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য উৎসাহিত করবে ।
(12) নারীদের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে হবে ।
(13) সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের বয়স্ক নিরক্ষর মহিলাদের সাক্ষর করে তুলতে হবে , যারা পরোক্ষভাবে নারীশিক্ষার পথে অন্তরায় ।