বিদ্যালয় সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ তা আলোচনা করুন ।
উত্তর :– সমাজ নিজের প্রয়োজনে বিদ্যালয়ের জন্ম দিয়েছে । স্বভাবতই , বিদ্যালয় সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । ডিউই – এর মতে— “ School is a miniature society ” । অর্থাৎ বিদ্যালয় হল সমাজের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ । বিদ্যালয় কোন্ কোন্ দিক দিয়ে সমাজের সমতুল তা নীচে আলোচনা করা হল—
( 1 ) সংগঠনগত সাদৃশ্য : সমাজ এবং বিদ্যালয়ের মধ্যে গঠনগত মিল দেখা যায় । সমাজে একদল মানুষ একটি বা একাধিক সাধারণ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে একত্রে বসবাস করে এবং তাদের মধ্যে একটি সচেতন মানসিক আদানপ্রদান চলে । একইভাবে , বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একদল ছাত্রছাত্রী জ্ঞানার্জন বা পাঠগ্রহণের আদর্শকে সামনে রেখে একসঙ্গে শিক্ষাগ্রহণ করে এবং শিক্ষক , শিক্ষার্থী , শিক্ষাকর্মী সকলের মধ্যে একটি আন্তঃক্রিয়া চলে । এ ছাড়া সমাজের সাফল্য যেমন তার জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে , বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও শিক্ষক , শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাকর্মীর পারস্পরিক ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে উন্নতি বা সাফল্য আসে ।
(2)বিবর্তনগত সাদৃশ্য :
যুগে যুগে সমাজব্যবস্থা যেভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তার সঙ্গে সংগতি রেখে বিদ্যালয়েরও পরিবর্তন ঘটেছে । অনেকে তাই বিদ্যালয়কে সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । সমাজের অবক্ষয় দেখা দিলে বিদ্যালয়েও তার প্রভাব পড়ে । কেননা সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকেই ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসে । সমাজ যেখানে উন্নত সেখানে বিদ্যালয়গুলিও উন্নত । সুতরাং এই দিক দিয়েও বিদ্যালয়কে সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা যেতে পারে ।
( 3 ) উদ্দেশ্যগত সাদৃশ্য : মানুষ যেমন একটি লক্ষ্য নিয়ে দলবদ্ধভাবে সমাজ গড়ে , তেমনি বিদ্যালয় গঠনের ক্ষেত্রেও একটি লক্ষ্য থাকে । লক্ষ্য স্থির না থাকলে সমাজ যেমন ভেঙে পড়ে , বিদ্যালয়ও লক্ষ্যহীন অবস্থায় দীর্ঘদিন চলতে পারে না । তাই লক্ষ্যের ভিত্তিতেও বলা যায় বিদ্যালয় এবং সমাজ একই ধরনের সংস্থা ।
( 4 ) সম্পর্কগত সাদৃশ্য : সমাজের মধ্যে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক স্থাপিত হয় , বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তারা একে অপরের সহযোগিতা পায় এবং নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া – প্রীতি – ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলে । বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও শিক্ষক – শিক্ষার্থীর মধ্যে , শিক্ষার্থী – শিক্ষাকর্মীর মধ্যে , শিক্ষাকর্মী – শিক্ষকের মধ্যে এবং শিক্ষার্থীদের পরস্পরের মধ্যে এই ধরনের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় । এই সম্পর্ক স্থাপিত হয় লেখাপড়া , খেলাধুলো এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিতে । সুতরাং উভয় ক্ষেত্রেই পারস্পরিক সম্পর্কস্থাপনের ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
বিদ্যালয়কে সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে গড়ে তোলার উপায় : বিদ্যালয়কে বৃহত্তর সমাজের প্রতিচ্ছবি বা ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পরিকল্পনামাফিক কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তাকে তা বাস্তবায়িত করতে হবে । যেমন —
(1)সাধারণ কর্মসূচি রূপায়ণ :
বিদ্যালয়ের পরিবেশকে সামাজিক করে তোলার জন্য দরকার একটি সাধারণ কর্মসূচি । একসঙ্গে মিলেমিশে কিছু কাজের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীরা সামাজিক জীবনের নানা বৈশিষ্ট্য আয়ত্ত করতে পারে । বিভিন্ন সাধারণ কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সহযোগিতা , স্বার্থত্যাগ , সহানুভূতি , শৃঙ্খলাবোধ , আনুগত্য প্রভৃতি গুণের বিকাশ ঘটানো যায় । বিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কর্মসূচিগুলির মাধ্যমে যদি ছাত্রছাত্রীদের দলগতভাবে খেলাধুলো , অভিনয় , বিতর্কসভা , সমাজসেবা , ভ্রমণ প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করানো যায় তাহলে তাদের মধ্যে সমাজের পক্ষে উপযুক্ত অভ্যাস গড়ে ওঠে , যার দ্বারা তারা আরও বেশি সামাজিক হয়ে ওঠে ।
(2)সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি :
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি সহজ সমাজজীবন গড়ে তোলার জন্য দরকার সামাজিক সচেতনতা । আর এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহানুভূতির ভাব জাগিয়ে তোলা । নিজেদের বিদ্যালয় ও শ্রেণি সম্পর্কে তাদের মধ্যে গর্ববোধ জাগিয়ে তুলতে হবে । বিদ্যালয়ের নিজস্ব সংগীত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাত্মবোধ গড়ে তোলার অন্যতম উপায় ।
(3) গণতান্ত্রিক পরিবেশ গঠন :
শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃত সমাজচেতনা জাগাতে হলে বিদ্যালয়ের পরিবেশকে অবশ্যই গণতান্ত্রিক আদর্শে গড়ে তুলতে হবে । গণতান্ত্রিক