বিদ্যালয় সংস্কৃতি কাকে বলে ? সংস্কৃতিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় এবং কী কী ? বিবরণ দিন ।
উত্তর :–
সংস্কৃতি হল একগুচ্ছ আদর্শ , মূল্যবোধ , বিশ্বাস , ঐতিহ্য এবং রীতি – নীতি যা সময়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে । বিদ্যালয় সংস্কৃতি হল — মূল্যবোধ , কর্মসূচি যা বিদ্যালয়ে আছে তারই সম্মিলিত রূপ । বিদ্যালয় সংস্কৃতিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় । যথা—
( i ) ইতিবাচক সংস্কৃতি ,
( ii ) নেতিবাচক সংস্কৃতি ।
ইতিবাচক সংস্কৃতি :–
বিদ্যালয়ে ইতিবাচক সংস্কৃতি বলতে বোঝায় সেই ধরনের সংস্কৃতি যা একদিকে যেমন শিক্ষকদের পেশাগত সন্তুষ্টি , একাত্মবোধ এবং বিদ্যালয়ের কার্যকারিতার পক্ষে অনুকূল অন্যদিকে তেমনি শিক্ষার্থীদের শিখন এবং প্রত্যাশা পূরণের পক্ষে সহায়ক । ইতিবাচক সংস্কৃতির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল
• শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সাফল্যকে স্বীকৃতি দেয় ।
• সম্পর্ক স্থাপন এবং পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে উন্মুক্ত মন এবং আস্থা ও মর্যাদা প্রকাশ পায় । কর্মচারীদের মধ্যে উষ্ম এবং সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সকলেই উচ্চমানের পেশাজীবী হন ।
• শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীবৃন্দ শারীরিক এবং প্রাক্ষোভিক নিরাপত্তা বোধ করে এবং বিদ্যালয়ের নীতি এবং সুযোগ – সুবিধা সকল শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানায় ।
• বিদ্যালয় নেতৃত্ব , শিক্ষকগণ এবং অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দের আচরণ শিক্ষার্থীদের নিকট ইতিবাচক মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয় ।
• ভুল – ভ্রান্তিগুলি ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হয় না । বরং শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নিকট শিখনের সুযোগ হিসেবে গণ্য হয় ।
• শিক্ষার্থীদের নিকট সর্বদা উচ্চ পারদর্শিতা প্রত্যাশা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই সেই প্রত্যাশা পূরণ করে বা তাকে অতিক্রম করে ।
• সমালোচনা যদি হয় তা হয় পরিকল্পিত এবং গঠনমূলক , কখনোই অভিসন্ধিমূলক বা ধ্বংসমূলক নয় ।
• শিক্ষাসম্পদ এবং শিখনের সুযোগ – সুবিধাগুলি সমভাবে বণ্টিত হয় এবং সংখ্যালঘু পশ্চাৎপদ এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ভুক্ত সহ সকলেই তা ভোগ করে ।
• সাফল্যের জন্য প্রয়োজন পঠন – পাঠনের সুযোগ এবং তা গ্রহণের অধিকার সব শিক্ষার্থীরাই পায় ।
নেতিবাচক সংস্কৃতি :-
বিদ্যালয়ে নেতিবাচক সংস্কৃতি বলতে বোঝায় সেই সংস্কৃতি যেখানে শিক্ষকগণ কাজে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন এবং তাঁদের মধ্যে সর্বদাই বিরূপ এবং ধ্বংসাত্মক সমালোচনা দেখা যায় । এই ধরনের সাংস্কৃতিক আবহাওয়ার মধ্যে শিক্ষা এবং শিক্ষার্থী কেউ স্বস্তি এবং নিরাপত্তা বোধ করে না । সর্বদা নেতিবাচক আলোচনা দেখা যায় । শিক্ষক বা অন্যান্য কর্মচারীদের পারস্পরিক সম্ভাবের অভাব দেখা যায় এবং বিদ্যালয়ের সঙ্গে একাত্মবোধ গড়ে ওঠে না ।
সবশেষে বিদ্যালয়ে বাঞ্ছিত সংস্কৃতির অপরিহার্য বিষয়গুলি হল—
● বিদ্যালয়ের সংস্কৃতির দিকে গভীর দৃষ্টি রাখা ।
● শিক্ষার্থীরা শিক্ষক এবং বয়স্কদের সঙ্গে পঠন – পাঠন এবং ব্যক্তিগত বিষয়ে কথাবার্তা বলতে কোনো সংকোচ বোধ করে না ।
● কর্মচারীদের বাচনিক এবং অবাচনিক চিন্তা – ভাবনার ক্ষেত্রে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব দেখা যায় ।
● অনুষ্ঠান ( যেমন নবাগত শিক্ষার্থীদের অভিমুখীকরণ , সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন , পুনর্মিলন ইত্যাদি ) নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হয় । ।
● কর্মচারীদের পেশাগত ক্ষমতার বিকাশ / জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ দান ।
● গণতান্ত্রিক প্রশাসন ।
● শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বদান ব্যবস্থা ।
● সকলকে উপযুক্ত মর্যাদাদান ।
● বৈচিত্র্যকে স্বীকার করে তার মধ্যে ঐক্যের স্বাদগ্রহণ ।
● আচরণ সম্পর্কিত সুস্পষ্ট নীতি এবং প্রত্যাশা ।
●উচ্চহারে উপস্থিতি ।
● সাফল্যের উচ্চহার ।
● পাঠত্যাগের হার হ্রাস ।
● আনন্দের সঙ্গে মজা করা ।