ইতিহাসের প্রকৃতি :
✳️ সময় বা কালের প্রেক্ষাপট : সময় বা কাল ইতিহাসের এক অত্যন্ত অপরিহার্য উপাদান । কালের প্রেক্ষাপটে অতীতের কাহিনি হয় জীবন্ত । তাই ইতিহাসে সময় চেতনা ও কাল চেতনা গুরুত্বপূর্ণ । সময়ের অঙ্গনে বিমূর্ত চিন্তা মূর্ত ও বাস্তব হয়ে ওঠে ।
✳️ সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনকাহিনি : ইতিহাসের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হল মানুষ । ইতিহাসের প্রকৃত পদচারণা হয় যখন মানুষের মধ্যে যূথবদ্ধতা গুণের প্রকাশ ঘটে ঠিক তখন থেকেই । সমাজবদ্ধ মানুষের ক্রম উত্তরণের কাহিনি ইতিহাসে বিবৃত হয় । মানুষের কর্ম ও কীর্তির মালা গেঁথে চলে ইতিহাস ।
✳️ চলমান ও অবিচ্ছেদ্যতা : ইতিহাসের গতি নদীর স্রোতধারার মতাে প্রবহমান । এই গতি নিরবচ্ছিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য । চলমানতাই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য । তাই ইতিহাস হল সভ্যতার ক্রম উন্মেষণের কাহিনি ( হেগেল ) ।
✳️ বিশ্লেষণধর্মিতা বা বিজ্ঞানধর্মিতা : আধুনিক ইতিহাসের প্রকৃতি হল বিশ্লেষণধর্মিতা । সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনকাহিনির T ধারাবাহিক বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণই হল ইতিহাসের অবশ্যস্বীকার্য সত্য । ইতিহাসের ঘটনা পরীক্ষিত ।
✳️ কার্যকারণ সম্পর্ক : ইতিহাসের ঘটনাবলি কার্যকারণ সম্পর্কে অন্বিত । সংগৃহীত তথ্যের ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়া হল ইতিহাস ।
✳️ বর্তমানের প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতের পূর্বাভাস : ইতিহাস মানুষের সামাজিক , অর্থনৈতিক , ধর্মীয় ও রাষ্ট্রনৈতিক জীবনে বর্তমানের আলােকে অতীতের বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ করে । ইতিহাস ভবিষ্যৎ সমাজ ও সভ্যতার দিশারি ।
✳️ গতিময়তা : ইতিহাস গতিশীল । বর্বর জীবন থেকে সভ্যজীবনে মানুষের উত্তরণ ইতিহাসের গতিময়তাকেই প্রমাণ করে । সভ্যতার বিবর্তন , বৃদ্ধি ও উন্নয়ন গতিশীলতার পরিচয় দেয় ।
✳️ সত্যনিষ্ঠতা : ইতিহাস কোনাে কল্পকাহিনি নয় , অতিকথন কিংবা অতিরঞ্জন নয় , ইতিহাসের বিষয়বস্তু সত্যনিষ্ঠ ও প্রমাণসাপেক্ষ । সত্যাসত্য অনুসন্ধানই ঐতিহাসিকের কাজ । এদিক থেকে হােরােডােটাসই সর্বপ্রথম , পারস্য যুদ্ধের ইতিহাসে সত্যানুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন বলে তাঁকে ইতিহাসের জনক ’ বলা হয়েছে ।
✳️ স্থান চেতনা : ইতিহাসের প্রকাশ তার নির্দিষ্ট অঙ্গনে । মানুষের ঘটনাবহুল কর্ম ও সৃষ্টিমুখর জীবনপ্রবাহ ঘটে নির্দিষ্ট অঞ্চলে , নির্দিষ্ট স্থানে । তাই শিক্ষার্থীর স্থান চেতনা ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ।
ইতিহাসের পরিধি :
✳️ রবীন্দ্রনাথ – এর কথায় , “ There is only one history the history of man . ” মানুষের বৈচিত্র্যময় ক্রিয়াকলাপই ইতিহাসের উপজীব্য বিষয়বস্তু । ব্যক্তিমানুষ ও সামাজিক মানুষের কর্মপ্রচেষ্টা ও কর্মসাধনা , আশা – আকাঙ্ক্ষা , আদর্শ , সামাজিক , অর্থনৈতিক , ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তাই ইতিহাসের আলােচনায় অন্তর্ভুক্ত হয় ।
✨ সমাজজীবন : ইতিহাস হল একটি অন্যতম সমাজবিজ্ঞান । তাই সমাজবদ্ধ মানুষের সামাজিক অগ্রগতি , মানুষে মানুষে সম্পর্ক , মানুষের সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক , সামাজিক অনুষ্ঠান – প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক , সামাজিক রীতিনীতি , আচার লো আচরণ , আহার – বিহার সবকিছুই ইতিহাসের আলােচনাক্ষেত্রের মধ্যে আসে ।
✨ অর্থনৈতিক জীবন : সভ্যতার উত্তরণের পথে শ্রমের উদ্ভব , দলবধ শ্রমের মাধ্যমে কৃষি , বাণিজ্য ও শিল্পে অভাবনীয় উন্নতি ও মানুষের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের জন্য যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ইতিহাসের উপজীব্য বিষয়বস্তু ।
✨ ধর্মীয় জীবন : সমাজবদ্ধ মানুষের ধর্মীয় কার্যকলাপ , ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠান , ধর্মীয় আচার – আচরণ ইতিহাসের আলােচনার বিষয় ৷
✨ রাষ্ট্রনৈতিক জীবন : জনপদ থেকে রাষ্ট্রের উদ্ভব , রাষ্ট্রশক্তির বিকাশ , সর্বোপরি , বিভিন্ন যুগে মানুষের অধিকার ও কর্তব্য ইতিহাসের আলােচ্য বিষয় ।
✨ সাংস্কৃতিক জীবন : বিভিন্ন যুগে মানুষের সংস্কৃতি , শিল্প – স্থাপত্য , চিত্রকলা , জ্ঞান – বিজ্ঞান , ভাষা – সাহিত্যের অগ্রগতি , সংগীতচর্চা , প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষা ইত্যাদি ইতিহাসের আলােচনার মধ্যে আসে ।
✨ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকতা : দেশ ও জাতির ঐক্য , আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি , বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববােধ , আন্তর্জাতিক শান্তি ও সংহতি , মানবকল্যাণ সবকিছুই ইতিহাসের আলােচ্য বিষয় ।