প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (1948-49) বা রাধাকৃষ্ণণ কমিশনের বিভিন্ন সুপারিশগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করুন ।
উত্তর : গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় : ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর ভারতের হাজার হাজার গ্রামের বিশেষ প্রয়োজন মেটাবার উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যায় প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং তা থেকেই গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা দেখা দেয় । কমিশন বুঝেছিলেন , তৎকালীন যেসব কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেগুলিতে প্রধানত শহরের ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে । তাই গ্রামে যেসব ছেলেমেয়ে বাস করে এবং যাদের শহরে এসে পড়ার সুযোগ হয় না তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য কমিশন গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় নামে এক নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন । গ্রামের মানুষ যাতে নিম্নস্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত শিক্ষালাভ করতে পারে সেদিকে লক্ষ রেখে রাধাকৃষুণ কমিশন গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা রচনা করেন । সুতরাং রাধাকৃষ্ণণ কমিশনের রিপোর্টের একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল গ্রামীণ শিক্ষা সম্বন্ধে একটি সর্বাত্মক নতুন চেতনা যোগ করা । ভারতের সমাজ , সংস্কৃতি , অর্থনৈতিক জীবনে গ্রামের গুরুত্ব অনুভব করে শিক্ষাব্যবস্থাকে কমিশন গ্রাম্যজীবনের সঙ্গে সমন্বয়সাধনের কথা বলেছেন ।
কমিশনের মতে , গ্রামের সমাজজীবন ও শহরের সমাজজীবনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে । তাই গ্রামীণ উচ্চশিক্ষা ও নাগরিক উচ্চশিক্ষার মধ্যেও কিছুটা পার্থক্য থাকবে । শহরে ও গ্রামের অধিবাসীদের জীবিকা , শিক্ষার মান ও সামাজিক সমস্যার পার্থক্যের দিকে লক্ষ রেখে উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল ওই রিপোর্টে । যেমন শহরের উচ্চশিক্ষায় কারিগরি , যন্ত্রশিক্ষা , চিকিৎসাবিদ্যা প্রভৃতি যদি প্রাধান্য লাভ করে থাকে তবে সেখানে উচ্চ শিক্ষা প্রদান ও লাভ করবে । জনশিক্ষা , কৃষি , গ্রামোন্নয়ন , সমাজ উন্নয়ন প্রভৃতি গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যসূচির । শিক্ষাদান-পদ্ধতি ও অন্যান্য বিষয়ে পরিকল্পনা করার সময় গ্রাম্যজীবনের প্রয়োজনে দিকে লক্ষ্য করার কথা বলা হয়েছিল এই কমিশনের রিপোর্টে ।
এই কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত একটি সর্বাঙ্গীণ ব্যবস্থার রূপ প্রস্তাব করেন । এই প্রস্তাবে উত্তর-বুনিয়াদি বিদ্যালয়কে গ্রামীণ বিদ্যালয়রূপে গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছিল । বলা হয়েছিল , কয়েকটি স্কুলকে কেন্দ্র করে থাকবে গ্রামীণ কলেজ । কয়েকটি কলেজকে কেন্দ্র করে থাকবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ।
গ্রামীণ শিক্ষা কাঠামোয় থাকবে :
(1) 7 কিংবা 8 বছরব্যাপী নিম্ন ও উচ্চবুনিয়াদি শিক্ষা ।
(2) 3 কিংবা 4 বছরের উচ্চবুনিয়াদি ও মাধ্যমিক শিক্ষা ।
(3) ও করের গ্রামীণ কলেজ ।
(4) বিশ্ববিদ্যালয়ে 2 বছরের স্নাতকোত্তর শিক্ষা ।
প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় 30 থেকে 60 একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে এর মধ্যে থাকবে বিদ্যালয় গৃহ শিক্ষকের আবাসন খেলার মাঠ ওয়ার্কশপ কৃষিখামার বাগান ইত্যাদি । বিদ্যালয় ছাত্র সংখ্যা 150 জনের অধিক হবেনা শতকরা 50 ভাগ সময় তাত্ত্বিক বিষয়ের উপর অবশিষ্ট 50 ভাগ সময় ব্যবহারিক কার্যে ব্যয় করা হবে ।
থাকবে বিদ্যালয় গৃহ , শিক্ষকদের আবাসন , খেলার মাঠ , ওয়ার্কশপ কৃষিখামার , বাবান ইত্যাদি বিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা 150 জনের অধিক হবে না শতকরা 50 ভাগ সময়ই তাত্ত্বিক বিষয়ে উপর উপর এবং অবশিষ্ট 50 ভাগ সময় ব্যবহারিক কাজে ব্যয় করা হবে ।
মাধ্যমিক স্তরের পরে গ্রামীণ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা কতকগুলি গ্রামীণ কলেজ নিয়ে একটি প্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় হবে । স্নাতক স্তরের শিক্ষা কলেজে এবং স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠদান ও গবেষণা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে । প্রতিটি কলেজে এবং প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে 2500 শিক্ষার্থী – সংখ্যা সীমাবদ্ধ থাকবে । কলেজে ব্যাবহারিক উভয় ধরনের শিক্ষা সমান গুরুত্ব পাবে । গ্রামাণ বিষয়গুলে ছাড়াও উচ্চতর ও গবেষণার জন্য অন্যান্য বিষয়ের পাঠদানের ব্যবস্থা থাকবে । পাঠক্রমে প্রধান বিষয় হিে থাকবে দর্শন , ভাষা , সাহিত্য , পদার্থবিদ্যা , রসায়নবিদ্যা , জীববিদ্যা , শারীরবিদ্যা , সমাজবিদ মনোবিদ্যা , অর্থনীতি , কৃষিবিদ্যা ইত্যাদি । কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক স্বাধিকার থাকবে ।
পরীক্ষা পদ্ধতির পুনর্বিন্যাস : প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির অসারতা সম্পর্কে রাধাকৃষ্ণ কমিশন সুচিন্তিত মন্তব্য করেন । কমিশন ঘোষণা করেছিলেন , “If we are to suggest one single reform in university education , it should be out of examination .” এককথায় , প্রচলিত পরীক্ষা ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন কমিশন । পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার সম্বন্ধে কমিশনের সুপারিশগুলি হল—
(ক) বৈজ্ঞানিক উপায়ে অভীক্ষা প্রস্তুতির কাজ কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু করতে হবে ।
(খ) প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্থায়ী পরীক্ষা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে । এই সংস্থার সদস্য হবেন বিশেষ অধ্যাপকগণ । নতুন অভীক্ষাপত্র কীভাবে প্রস্তুত করা হবে সে সম্বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অন্তর্ভুক্ত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের প্রস্তুত করার কাজের ভার এই সংস্থার উপর দেওয়া হবে ।
(গ) অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন । সমগ্র পরীক্ষার মূল্যায়নের এক-তৃতীয়াংশ অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা দিলে কাজ ভালো হবে । শ্রেণিকক্ষে অথবা শ্রেণির সকল কাজেরও উপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবে । বাইরেও বিষয় সম্পর্কিত যে-কোনো কাজ করানো হবে ; অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় সে
( ঘ ) বছরে একটা করে পরীক্ষা না নিয়ে ধারাবাহিক পরীক্ষার প্রবর্তন করলে কাজ ভালো হবে । ধারাবাহিক পরীক্ষার উপর ক্রেডিটের ব্যবস্থা করা দরকার । আর ১৯
(ঙ) পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে রচনাধর্মী ও নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা এই দুয়েরই সমন্বয় করা প্রয়োজন ।
(চ) কমিশনের মতে , সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে পৃথক পরীক্ষা গ্রহণ করা যুক্তিযুক্ত । এর জন্য পরীক্ষাসংক্রান্ত অনেক ত্রুটি দূর হবে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির কোনো প্রয়োজন নেই । এই ব্যবস্থা গৃহীত হলে
(ছ) পরীক্ষক নির্বাচনের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে । কোনো বিষয়ে অন্তত পাঁচ বছরের পড়ানোর অভিজ্ঞতা না থাকলে তাঁকে পরীক্ষক নিয়োগ করা যাবে না । থাকতে পারবেন না । ডিগ্রি পরীক্ষায় বহিঃপরীক্ষক একাদিক্রমে তিন বছরের বেশি সময় পরীক্ষক হিসাবে