শিখন কাকে বলে ? শিখনের প্রকৃতি সম্পর্কে লিখুন । শিখনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখুন।
উত্তর : শিখন : শিখন হল এমন এক ধরনের বিকাশের প্রক্রিয়া যা–
( i ) ব্যক্তির আত্মসক্রিয়তা বাড়িয়ে তোলে ;
( ii ) আচরণের পরিবর্তন ঘটায় ;
( iii ) উদ্বোধক ও পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল ;
( iv ) প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার প্রভাবে সৃষ্টি হয় ;
( v ) অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় আচরণ করতে শেখায় ।
( 11 ) শিখনের প্রকৃতি শিখন বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে হলে তার স্বরূপ বা প্রকৃতি জানা প্রয়োজন । নীচে শিখনের স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করা হল—
( 1 ) আচরণের পরিবর্তন : আচরণের পরিবর্তন শিখনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । শিখন ঘটলেই আচরণে কিছু না কিছু পরিবর্তন ঘটবে । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় , কোনো একটি শিশুর ছ্যাঁকা লাগা সম্পর্কে কোনোরকম অভিজ্ঞতা ছিল না । সে প্রথমবার যখন জ্বলন্ত মোমবাতির আগুনের উপর হাত দিতে গেল , তখন তার হাতে ছ্যাঁকা লাগল এবং সে ছ্যাঁকার যন্ত্রণা অনুভব করল । ফলে একদিকে যেমন তার ছ্যাঁকা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা হল , অন্যদিকে তেমন এখন থেকে সে আর জ্বলন্ত মোমবাতিতে হাত দেবে না ।
( 2) নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন : শিখনের ফলে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় , একটি শিশুর ক্ষেত্রে জ্বলন্ত মোমবাতির শিখায় হাত দেওয়ার ফলে কটি নতুন অভিজ্ঞতা হয় এবং যন্ত্রণা অনুভব করায় দ্বিতীয়বার সে জ্বলন্ত শিখায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করে না ।
( 3 ) নতুনত্ব : যে শিশু আগে জ্বলন্ত মোমবাতিতে হাত দিয়েছিল , অভিজ্ঞতা অর্জন বা শিখনের পরে সে আর তাতে হাত দেবে না । অর্থাৎ তার আচরণে নতুনত্ব দেখা দিয়েছে ।
( 4 ) বিশেষ গতিপথ বা প্রেষণা : শিখনের ফলে যে আচরণের পরিবর্তন ঘটে তার একটি বিশেষ গতিপথ থাকে । শিখনের আগে কোনো প্রাণীর মধ্যে যে প্রেষণার সৃষ্টি হয় , সেই প্রেষণা প্রাণীকে নির্দিষ্ট পথে নিয়ে গিয়ে তার মধ্যে পরিতৃপ্তি এনে দেয় । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় , শিশু খিদে পেলে এক বিশেষ ধরনের আচরণ করে এবং ওই আচরণ লক্ষ করে মা শিশুকে খেতে দেন । ওই খাদ্য পেলে শিশুর প্রেষণার পরিতৃপ্তি ঘটে ।
(5 ) উদ্দেশ্যমুখিনতা : শিখন উদ্দেশ্যমুখী এবং লক্ষ্যকেন্দ্রিক । কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে তাকে শিখন বলা যায় না ।
( 6 ) অনুশীলনের প্রভাব : শিখনের উপর অনুশীলনের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায় । শিখনের উপর অনুশীলনের প্রভাব বিষয়ে বহু পরীক্ষা হয়েছে । পরীক্ষায় দেখা গেছে , প্রথম দিকের অনুশীলনের শিখনের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে । তারপর বৃদ্ধি ঘটে কিন্তু তার হার হ্রাস পায় এবং এমন এক সময় আসে যখন শিখনের উপর অনুশীলনের প্রভাব দেখা যায় না , যাকে শিখনে অধিত্যকা বলে ।
( 7 ) সমস্যাসমাধানের তাগিদ : শিখনের ক্ষেত্রে আর – একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সমস্যা । সমস্যা না থাকলে প্রাণী কোনো কিছুই শিখতে চায় না । সমস্যা সমাধানের তাগিদেই সে তার বর্তমান আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন আচরণ আয়ত্ত করার দিকে অগ্রসর হয় ।
( 8 ) পরিণমনের গুরুত্ব : শিখনের ক্ষেত্রে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিণমন । শিখন অনেক ক্ষেত্রেই পরিণমনের উপর নির্ভরশীল ।
( 9 ) শিখন একটি প্রক্রিয়া : শিখন একটি প্রক্রিয়া যার পরিচয় মেলে ফলের মাধ্যমে ।
( 10 ) সর্বজনীন এবং নিরবচ্ছিন্ন প্রকৃতি : শিখন হল সর্বজনীন এবং নিরবচ্ছিন্ন । প্রতিটি সজীব প্রাণীই শেখে । মানুষের শিখনের ক্ষেত্রে বয়স , লিঙ্গ , জাতি বা সংস্কৃতির কোনো সীমাবদ্ধতা নেই ।
(11 ) সঞ্চালনযোগ্য : গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে , শিখন সঞ্চালনযোগ্য । একটি ক্ষেত্রের শিখন অন্য ক্ষেত্রে সঞ্চালিত হয় ।
(12 ) চর্চানির্ভর : শিখন চর্চা বা অনুশীলনের উপর নির্ভরশীল । চর্চা বা অনুশীলনের অভাবে শিখনের শক্তি হ্রাস পায় ।
শিখনের বৈশিষ্ট্য
( 1 ) শিখনের দ্বারা ব্যক্তি নতুন আচরণ সম্পন্ন করার যোগ্যতা অর্জন করে ।
( 2 ) কোনো নতুন অভিজ্ঞতা দ্বারা অর্জিত আচরণের পরিবর্তন বা নতুন আচরণ সম্পন্ন হল শিখন।
( 3 ) শিখন ব্যক্তিকে যে – কোনো ধরনের অভিযোজনের উপযোগী করে তোলে ।
( 4 ) শিখনের ফলে বিকাশ ঘটে ।
( 5 ) শিখন প্রক্রিয়া ব্যক্তির আত্মসক্রিয়তাকে জাগিয়ে তোলে ।
( 6 ) শিখন সবসময় কোনো না কোনো চাহিদা পরিতৃপ্ত করে ।
( 7 ) শিখন ব্যক্তির কর্মধারার পরিবর্তন আনে ।
( 8 ) শিখন সর্বজনীন ও ধারাবাহিক । ( শিখন হল উদ্দেশ্যমুখী প্রক্রিয়া ।
( 10 ) শিখন উদ্বোধক ও প্রেরণার পারস্পরিক ক্রিয়ার উপর নির্ভর করে ।
( 11 ) শিখনের জন্য প্রয়োজন অনুশীলনের ।