প্রশ্ন : শিক্ষার অধিকার আইনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত লিখুন ।
উত্তর : বিনাবেতনে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ইতিহাস শুরু হয় প্রায় আড়াইশো বছর পূর্বে । যার সংক্ষিপ্ত বিবরণী নিম্নে উল্লেখ করা হল ।
• 1970 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনে বাধ্যতামূলক শিক্ষার আইন গৃহীত হয় ।
• 1982 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় নেতৃবৃন্দ গণশিক্ষা এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষার দাবি করেন ।
• 1893 খ্রিস্টাব্দে আমেঠি তালুকে বরোদার মহারাজা বালকদের জন্য বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন করেন ।
• 1906 খ্রিস্টাব্দে সমগ্র রাজ্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষার প্রবর্তন করেন ।
• 1910 খ্রিস্টাব্দে মহামতি গোখেল ‘প্রাইভেট মেম্বারস বিল’ প্রস্তাব করেন , কিন্তু তা বাতিল হয়ে যায় ।
• 1917 খ্রিস্টাব্দে বল্লভভাই প্যাটেল বিলটি পাস করতে সক্ষম হন । প্রকৃতপক্ষে ভারতবর্ষের শিক্ষার ইতিহাসে এটিকেই সর্বপ্রথম বাধ্যতামূলক শিক্ষার নীতি হিসাে উল্লেখ করা যায় (এটিকেই প্যাটেল আইন বলা হয়) ।
• 1937 খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধি সর্বজনীন শিক্ষার দাবি করেন । তিনি এর জন্য ‘নঈ তালিম’ নামের নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনে কথা বলেন , যা পরবর্তীকালে প্রাক্-বুনিয়াদি , বুনিয়াদি , প্ররবর্তী বুনিয়াদি প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা নামে উল্লেখিত হয় ।
• 1947 কনস্টিটুয়েন্টের মৌলিক অধিকারের সাব কমিটি মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক শিক্ষাকে মৌলিক অধিকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে ।
• 1947-এর এপ্রিলে কনস্টিটুয়েন্টের অ্যাডভাইসরি কমিটি বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকারকে বাতিল করেছে ।
• 1950 খ্রিস্টাব্দে যখন ভারতবর্ষ নিজেকে একটি রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করে তখন রাষ্ট্রের নির্দেশাত্মক নীতির 45 নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে , সংবিধান চালু হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে যত দিন না পর্যন্ত শিশু 14 বছরে উপনীত হয় ততদিন পর্যন্ত প্রতিটি শিশুকে বিনাবেতনে বাধ্যতামূলক শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে ।
• 1964 খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী এম সি চাগলা সংবিধানের 45 নং ধারায় যে সর্বজনীন প্রারম্ভিক শিক্ষার সুযোগদানের কথা বলা হয়েছে তা বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণ এবং কীভাবে বাস্তবায়িত করা যায় যে সম্পর্কে কিছু সুপারিশ করেন ।
প্রশ্ন 26 : শিক্ষার অধিকার আইন (2009) -কে বাস্তবায়িত করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগগুলি লিখুন ।
উত্তর : শিক্ষার অধিকার আইন (2009) -কে কার্যকর করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেছে তা হল—
(1) বিজ্ঞপ্তি No. 09 SE (s) -SL/SS- 116/10 at 6th January , 2011 -তে বিদ্যালয়ে । শিক্ষার্থীদের দৈহিক শাস্তি এবং মানসিকভাবে বিব্রত করতে নিষেধ করেছে । এই প্রসঙ্গে কতকগুলি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । যেমন—
(ক) যদি কোনো শিশুকে কোনো শিক্ষক বা প্রশাসক দৈহিক শাস্তি বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেন তাহলে অভিভাবক বিদ্যালয়ের প্রধান বা কমিটির নিকট অভিযোগ করতে পারেন ।
(খ) যদি কোনো শিক্ষক বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখতে দুর্বিনীত ছাত্রের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নিতে পারেন । যেমন—
(i) বিনা বেতনে শিক্ষার সুযোগ কোনোভাবে ব্যাহত না করে দুর্বিনীত ছাত্রকে জরিমানা করতে পারেন ।
(ii) শিক্ষা সম্পর্কিত অতিরিক্ত কাজ করতে দেওয়া ।
(iii) শ্রেণিকক্ষে কোনো বালকের কারণে যদি শ্রেণির কাজে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে তাকে সাময়িকভাবে শ্রেণীকক্ষ থেকে বহিষ্কৃত করা যেতে পারে ।
(iv) শাস্তি হিসাবে খেলাধুলা , Sports এবং সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণে নিষেধ করা যেতে পারে ।
(v) দুর্বিনীত শিশুকে কাউন্সিলারের নিকট পাঠানো যেতে পারে ।
(vi) অভিভাবককে শিশুর অবাঞ্ছিত কাজ জানানো যেতে পারে যাতে অভিভাবকগণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন ।
(vii) অভিভাবককে ডেকে বা অভিভাবকদের সভায় আহ্বান করে শিশুর পঠনপাঠন এবং প্রাক্ষোভিক চাহিদা সম্পর্কে বোঝাতে পারেন ।
(2) বিজ্ঞপ্ত No. 187-SE (Law)/S/LA-01/09 of 14 February , 2011-তে বলা ।
(i) কেবলমাত্র উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সর্বোচ্চ 240 ঢাকা গ্রহণ করতে পারবে । তবে কোনো অভিভাবক যদি মনে করেন এই অর্থ তার ক্ষমতার বাইরে এবং এর ফলে তার পুত্র বা কন্যার প্রারম্ভিক শিক্ষা ব্যাহত হবে , সেক্ষেত্রে তিনি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে পারবেন ।
(ii) কোনো বিদ্যালয় যদি এই আদেশের বিরোধিতা করে এবং সেক্ষেত্রে যদি পিতামাতা বা অভিভাবক ক্ষতিগ্রস্ত হয় । তাহলে তিনি 15 দিনের মধ্যে D.I of Schools-এর নিকট অভিযোগ করতে পারবেন । স্কুল ইনস্পেকটর সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন । তবে অভিযোগ পাওয়ার পরে ইনস্পেকটর 30 দিনের মধ্যে বিরোধী পক্ষকে তাদের বক্তব্য রক্ষার সুযোগ দেবেন । তারপরেই তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন ।
(3) বিজ্ঞপ্তি No. 189-SE (Law)/S/1A- 01/09 dated 14th February , 2011-c বলা হয়েছে যে , কোনো শিক্ষক প্রাইভেট টিউশন বা প্রাইভেট টিচিং সংক্রান্ত কার্যাবলির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করবে না । পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ ব্যাপারে দুটি নির্দেশ জারি করেন ।
(ক) প্রতিটি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বা পরিচালন সমিতি লক্ষ রাখবেন যাতে তাদের কোনো কার্যাবলিতে যুক্ত না থাকেন । বিদ্যালয়ের কর্মরত কোনো শিক্ষক প্রাইভেট টিউশন বা প্রাইভেট টিচিং সংক্রান্ত কোন কার্যাবলীদের যুক্ত না থাকেন ।
(খ) যদি কোনো শিক্ষক নিজেকে প্রাইভেট টিউশন বা প্রাইভেট টিচিং সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন । কার্যাবলিতে যুক্ত থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন ।
(4) বিজ্ঞপ্তি No. 190-SE (Law)/S/1A- 01/09 dated 14th February , 2011-তে বলা হয়েছে যে , কোনোভাবে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত নয় এমন বিদ্যালয়কে প্রথম শ্রেণিতে ভরতির ছাত্রসংখ্যার মধ্যে ন্যূনতম 25% ছাত্র হবে সেই অঞ্চলের সমাজের দুর্বল অংশ এবং বঞ্চিত পরিবারভুক্ত । প্রারম্ভিক শিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এদের বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । এই 25 % কে নিম্নোক্ত অনুপাতে ভাগ করা হবে—
(5) বিজ্ঞপ্তি No. 60-SE (P & B)/1OM- 9/ 10 dated 18th February , 2011-03 বলা হয়েছে , যেহেতু রাজ্যসরকার মনে করে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ছাত্রের শিক্ষায় অগ্রগতি সম্পর্কে কম্পিউটারের সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন । সেই কারণে রাজ্যসরকার National Information Centre-কে অনুরোধ করে যাতে তারা ‘Dipankar’ নামে Tracking Project তোর করে NIC জমা দেওয়ার পর এবং মাননীয় রাজ্যপাল এটি চালু করতে সম্মতি দেওয়ার পর । সরকার এটিকে Child Tracking Project হিসাবে 1911 খ্রিস্টাব্দ থেকে চালু করে প্রাথমিকভাবে এটি কেবলমাত্র চারটি জেলায় সীমাবন্ধ থাকবে যেমন উত্তর চব্বিশ পরগনা , কলকাতা , হাওড়া এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ।