প্রশ্ন : শিক্ষাকে যৌথ তালিকাভুক্ত করার পক্ষে যুক্তিসমূহ লিখুন । শিক্ষাকে যৌথ তালিকাভুক্ত করা কি ঠিক হয়েছে ? আপনার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দিন ।
শিক্ষাকে যৌগ তালিকাভুক্ত করার ফলে শিক্ষার নীতি প্রণয়ন অগ্রাধিকার এবং কর্মসূচি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা খুব গুরুত্ব লাভ করে ।
1 ) সংবিধানের 45 নং ধারায় যে নির্দেশাত্মক নীতির কথা বলা হয়েছে তা বাস্তবায়িত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আইনগত ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে ।
2 ) শিক্ষা , সমাজ এবং অর্থনৈতিক কর্মসূচি পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবীকরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ।
3 ) শিক্ষা সমনীতি এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকরী করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রই রাজ্যগুলিতে সঠিক নেতৃত্ব দেবে ।
4 ) শিক্ষার বিকাশে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতা না থাকায় কেন্দ্র এই ক্ষেত্রে বিশেষ সাহায্য করবে ।
5 ) শিক্ষার বিকাশে আঞ্চলিক বৈষম্যহীন পার্থক্যকে হ্রাস করার লক্ষ্যে শিক্ষায় সমসুযোগ এবং সমাজ ( Egalitarian Society ) সৃষ্টি করার জন্য কেন্দ্রকে আরও তৎপর হতে হবে ।
( 6 ) প্রয়োজনীয় সক্ষমতার অভাবে বিভিন্ন কমিটি , কমিশন এবং সম্মেলনে শিক্ষাসংক্রান্ত যেসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি ।
( 7 ) শিক্ষার মাধ্যমে জাতীয় সংহতি রক্ষার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । 1962 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় সংহতি কমিটি এ ব্যাপারে বিশেষ প্রশংসা করেছে ।
( 8 ) সমগ্র দেশে একই ধরনের শিক্ষা সংস্কারের জন্য ‘ অল ইন্ডিয়া এডুকেশান সার্ভিস ’ – এর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন । 1983-84 খ্রিস্টাব্দে ড . ডি পি চট্টোপ্যাধায়ের নেতৃত্বে যে ” National Commission & Teacher বিবরণী পেশ করা হয় সেখানে এই বিষয়টিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন । উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা UGC- এর মতো প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও এই ধরনের সংস্থা স্থাপন করা প্রয়োজন ।
শিক্ষাকে যৌথ তালিকাভুক্ত করার সমালোচনা : শিক্ষাকে যৌথ তালিকাভুক্ত করা সত্ত্বেও প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি । প্রকৃতপক্ষে কেন্দ্রের যে ভূমিকা গ্রহণ করার কথা তা করা হয়নি । এই কারণেই দেশের বিভিন্ন চিন্তাবিদ এবং শিক্ষাবিদ সংবিধানের এই সংশোধনের বিপক্ষে সমালোচনা করেছেন , যেমন—
(1) বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী Dr. V K R V Rao এই সংশোধনীর (অর্থাৎ যৌথ দায়িত্ব) প্রচন্ড বিরোধিতা করেছেন । তাঁর মতে
(ক) রাজ্যসরকারগুলি প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ এবং তার বাস্তবীকরণের জন্য যে অর্থ সংগ্রহ করা প্রয়োজন সে ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করবে না ।
(খ) রাজ্যসরকার তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করার বিরোধিতা করবে এবং শিক্ষায় জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণে বাধা দেবে ।
(2) প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী ড. হুমায়ুন কবীর বলেছেন , কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত হল শিক্ষার ক্ষেত্রে উপদেষ্টার ভূমিকা এবং যোগাযোগ রক্ষাকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করা । 1952-53 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত মুদালিয়ার কমিশনে এবং 1964-66 কোঠারি কমিশনের বিবরণীতে বলা হয়েছে শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলিতে উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সাধ্যমতো রাজ্যগুলিকে সহযোগিতা করবে । 1964-66 খ্রিস্টাব্দের কোঠারি কমিশনে আরও বলা হয়েছে— কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় স্তরের শিক্ষা প্রশাসন , আর্থিক সহযোগিতা , সঠিক নেতৃত্ব এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে । শিক্ষাকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করতে হবে । শিক্ষার এক অংশ থাকবে রাজ্যসরকারের অধীনে এবং অপর অংশ থাকৰে যৌথতালিকায়—এটা কমিশন সমর্থন করে না । কমিশনের সুপারিশ হল রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে থাকবে সম অংশীদারিত্বের বাতাবরণ ।