প্রশ্ন : শিক্ষর অধিকার আইন (2009) কার্যকরীকরণের বাধাগুলি লিখুন ।
উত্তর : শিক্ষার অধিকার আইন (2009) কার্যকরীকরণে যে বাধাগুলি দেখা পারে তাই হল—
(1) জনসংখ্যা বিস্ফোরণ : জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতবর্ষ হল দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ যেখানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় 16 শতাংশ বাস করে । আমাদের দেশ অর্থাৎ ভারতবর্ষে প্রতি বছর 19 মিলিয়ন লোক বৃদ্ধি পায় । শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর করে তুলতে এই বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে বিদ্যালয়ে সংখ্যা, শিক্ষকের সংখ্যা এবং পুস্তকসহ অন্যান্য শিক্ষোপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন । অর্থের সংস্থান কিভাবে হবে তা একটি বড় প্রশ্ন। তাই জন্য সংখ্যা বিস্ফোরণ শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকরী করার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা ।
(2) স্ত্রীলোকসহ সমাজের দুর্বল অংশের শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব: স্ত্রীলোক সহ সমাজের দুর্বল অংশ যেমন তপশিলিভুক্ত জাতি ও উপজাতি , আদিবাসী , সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যাদের শিক্ষা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই এবং শিক্ষার অভাব তারা বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্নের শিকার হয়েছে শিক্ষায় আগ্রহের পরিবর্তে তাদের মধ্যে একটা অনীহা দেখা যায় , যা শিক্ষার অধিকার আইনকে কার্যকরীকরনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ।
(3) পঠিত্যাগ ও অনুন্নয়ন : আমাদের দেশে পাঠত্যাগ ও অনুন্নয়ন শিক্ষার অধিকার আইনকে কার্যকরীকরণের পথে একটি বড়ো বাধা । পাঠত্যাগ বলতে বোঝায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পা সম্পূর্ণ না করে তার পূর্বেই পাঠত্যাগ করা । অনুন্নয়ন হল উচ্চশ্রেণিতে উত্তীর্ণ না হওয়ায় একই শ্রেণিতে অবস্থান করা । এই দু-ধরনের শিশুরাই শিক্ষার অপচয়ের কারণ ।
(4) বিদ্যালয়ের ন্যূনতম সুযোগসুবিধার অভাব : শিক্ষার অধিকার আইন (2009) বাস্তবীকরণের একটি বড়ো বাধা হল বিদ্যালয়ের ন্যূনতম সুযোগসুবিধার অভাব । গ্রামেগঞ্জে বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সুযোগসুবিধার তেমন কোনো বৃদ্ধি হয়নি । যেমন–বালিকাদের জন্য পৃথক ইউরিনাল-এর অভাব , শ্রেণিকক্ষের অভাব , পানীয় জলের অভাব ।
(5) অভিভাবকদের নিরক্ষরতা : এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশে যথেষ্ট সংখ্যক নিরক্ষর অভিভাবক আছেন । এঁদের মধ্যে অনেকেই তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয় পাঠাতে উৎসাহিত হন না । আইন করে এদের মানসিকতা কী পরিমাণে পরিবর্তন করা সম্ভব সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না । সমীক্ষায় দেখা গেছে যে , পিতা-মাতা বিশেষ করে জননীর শিক্ষার সঙ্গে সন্তানদের শিক্ষার একটা ধনাত্মক সম্পর্ক আছে । তাই পিতা – মাতা উভয়েই যদি নিরক্ষর হন সেক্ষেত্রে শিক্ষার অধিকার আইনকে কার্যকর করে তোলা অসুবিধাজনক হয়ে পড়ে ।
(6) আর্থিক বাধা : দারিদ্র্য বিশেষ করে যারা দারিদ্র্যসীমার নীচে অবস্থান করেন তাঁদের পরিবারের শিশুদের বিশেষ করে কন্যাদের সাংসারিক কাজকর্মে অংশগ্রহণ করতে হয় । অনেককেই অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন বাড়িতে বা মাঠে – ঘাটে কাজ করতে হয় । তা ছাড়া জননীরা যখন সাংসারিক কাজকর্ম করে বা অর্থ উপার্জনের জন্য অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকে তখন কন্যারাই তার ছোটো ভাই-বোনদের দেখাশোনা করে । এইভাবে বিদ্যালয়ে তাদের নাম নথিভুক্ত থাকলেও অনুপস্থিত থাকে ফলে শিক্ষা অর্জন করতে পারে না । অর্থাৎ শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকরীকরণে বাধার সৃষ্টি করে ।
(7) অন্যান্য বাধা : উপরোক্ত বাধাগুলি ছাড়াও অন্যান্য কিছু আর্থসামাজিক কারণের ফলে শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকরীকরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় । যেমন — প্রাপ্তবয়স্কদের বেকারত্ব এবং সাংসারিক আর্থিক অনটনের ফলে বিদ্যালয়গামী বয়সের শিশুরা উপার্জন করতে বাধ্য হচ্ছে । এছাড়া অনেক আদিবাসী শিশু তাদের ভাষার উপর কোনো পুস্তক বা শিক্ষোপকরণ না থাকায় তারা শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে না । তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশ অনুযায়ী পাঠক্রমের কোনো ব্যবস্থা নেই । তাদের মধ্য থেকে উপযুক্ত সংখ্যায় শিক্ষকও নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না । এই সমস্ত কারণও শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকরীকরণে বাধা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ।