শান্তি শিক্ষা কাকে বলে ? শান্তি শিক্ষার ধারণাগুলি লিখুন । শান্তি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি লিখুন । শান্তি শিক্ষার প্রকৃতি ও পরিধি লিখুন । শান্তি শিক্ষার গুরুত্ব লিখুন । বা , বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে শান্তি শিক্ষার ভূমিকা লিখুন

প্রশ্ন : শান্তি শিক্ষা কাকে বলে ? শান্তি শিক্ষার ধারণাগুলি লিখুন । শান্তি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি লিখুন । শান্তি শিক্ষার প্রকৃতি ও পরিধি লিখুন । শান্তি শিক্ষার গুরুত্ব লিখুন । বা , বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে শান্তি শিক্ষার ভূমিকা লিখুন ।

উত্তর : শান্তি শিক্ষা হল সামাজিক সংগতি বিধানের সেই প্রতিকার যার মাধ্যমে সমাজে হিংসার পথ থেকে শিক্ষার্থীদের অপসারণের উপায় । যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন করা । শান্তি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চ মানসিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধ জন্ম দেয় । এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন এক মূল্যবোধ গড়ে তোলে যার মাধ্যমে সমগ্র সমাজ উপকৃত হয় । UNESCO শিক্ষার যে চারটি লক্ষ্য নির্ণয় করে তার মধ্যে Learning to live together এবং Learning to be পরোক্ষভাবে শান্তি শিক্ষার সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত ।

শান্তি শিক্ষার ধারণা : সামাজিক সংগতিবিধান , বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন এবং সংগতিপূর্ণ জীবনযাপনই হল শান্তির মূল বাতাবরণ । শান্তি বলতে মূলত বোঝায় প্রত্যেক ব্যক্তি ও সমাজের সাংস্কৃতিক ও নৈতিকতার উন্নতিকে । সহমর্মিতা , সহানুভূতি , আত্মসংযম , উৎসর্গ , জনসেবা , নৈতিকতা , ব্যক্তি সমাজের কল্যাণসাধন প্রভৃতির উপর ভিত্তি করেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় । শান্তি বলতে শুধুমাত্র অহিংসাকেই বোঝায় না । শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যক্তি মানুষের আন্তরিকতার প্রয়োজন ।

শিক্ষা হল সামাজিক সংগতিবিধানের এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সার্থক অভিযোজনে সক্ষম হয় । মানুষ সামাজিক জীব এবং শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে অভ্যস্থ এবং এই শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্যই ব্যক্তি মানুষ শিক্ষার আঙিনায় প্রবেশ করে । ব্যক্তি শিক্ষার্জন করে মূলত শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই । সমাজের রীতিনীতি , আচার – আচারণ , প্রথা প্রভৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে চলার জন্য শিক্ষা ব্যক্তিকে উপযোগী করে তোলে । শিক্ষা সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার স্বরূপ । মানুষের জীবন পরিবেশে তাকে সব সময় সামাজিক আবহের সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করতে হয় ।

একথা স্বীকার করতেই হবে যে , একজন ব্যক্তি কখনোই নিজের চেষ্টায় সামগ্রিক পরিবেশ পরিবর্তিত করতে পারে না , অন্যের সহায়তা তার প্রয়োজন হয় । শিক্ষা প্রক্রিয়াই সেই সহায়ক ভূমিকা পালন করে । শিক্ষার সাহায্যেই ব্যক্তি তার সামাজিক , সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে অভিযোজন করতে শেখে এবং সমাজ তথা সংস্কৃতির যোগ্য উত্তরাধিকারী হয় ।

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় শিক্ষা প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্যই হল সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা । ক্ষার মূল হল ব্যক্তির সমগ্র গুণাবলির বিকাশসাধন করা , যার মধ্য দিয়ে সে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে । বলা যায় , শান্তি শিক্ষা হল এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা যে শিক্ষার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ নৈতিক জীবন যাপনের জ্ঞান অর্জন করে ।

শান্তি শিক্ষা হল দক্ষতার শিখন । এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য দক্ষতাসম্পন্ন সমাজ গড়ার কারিগর তৈরি করা—যারা সারা বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করবে ।

শান্তি শিক্ষা হল সামগ্রিক শিক্ষা । যা ব্যক্তির দৈহিক , প্রাক্ষোভিক , বৌদ্ধিক সামাজিক নৈতিক মূল্যবোধ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে । ভালোবাসা , সহানুভূতি , সত্যতা স্বচ্ছতা , সহযোগিতা সুন্দর সমাজ ও সবুজ পৃথিবীর প্রতি সম্ভমপূর্ন ভালবাসায় এই দার্শনিক তত্ত্বের উপর শান্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত ।

Peace Education বা শান্তি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল সারা বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করা । শান্তি যেমন শিক্ষার্থীদের চরিত্রগঠনে গুরুত্ব দেয় তেমনি শিক্ষার্থীর মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মূল্যবোধ গড়ে তুলতেও সাহায্য করে । সমগ্র বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ তৈরির উদ্দেশ্যে এই শিক্ষার লক্ষ্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল

( i ) শান্তি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী তথা ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন করা এই শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ।

( ii ) শান্তি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির সংকীর্ণ মনোভাব দূর করে ব্যক্তিকে সমাজ ও দেশের উপযোগী করে তোলা ।

( iii ) ব্যক্তির চিস্তন শক্তি , কল্পনা শক্তি , বিশ্লেষণ ক্ষমতা প্রভৃতির বিকাশ ঘটিয়ে বাহিকে সর্বোচ্চ আসনে উন্নীত করা ।

( iv ) শান্তি শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে মূল্যবোধ গড়ে তোলা এই শিক্ষার অন্যত একটি লক্ষ্য ।

( v ) ব্যক্তিকে চরিত্রবান ও হৃদয়বান করে গড়ে তোলাও এই শিক্ষার উদ্দেশ্য ।

( vi ) শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বে যুদ্ধের আশঙ্কা দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ।

( vii ) শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতি , সামাজিক প্রথা ও সামাজিক সংস্কৃতি বিষয়ে জ্ঞান দান করাও এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ।

( viii ) ব্যক্তির আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ।

( ix ) ব্যক্তির মধ্যে সু – অভ্যাস গড়ে তোলা এই শিক্ষার লক্ষ্য ।

( x ) সমাজ তথা দেশকে যুদ্ধ হিংসার গণ্ডি থেকে বের করে নিয়ে আসা এই শিক্ষার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ।

( xi ) ব্যক্তিকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে অভিযোজন করতে সাহায্য করা ।

( xii ) ব্যক্তির জ্ঞান , দক্ষতা ও মনোভাবের উন্নীতকরণ এই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ।

( xiii ) ব্যক্তিকে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে বাস্তবধর্মী জ্ঞানদান করে সমাজের উপযোগী করে তোলা ।

শান্তি শিক্ষার প্রকৃতি : শান্তি শিক্ষার মাধ্যমে যেহেতু ব্যক্তির চারিত্রিক , নৈতিক , সামাজিক , আধ্যাত্মিক , নান্দনিক ইত্যাদি সমস্ত দিকের সুষম বিকাশ ঘটে , তাই এই শিক্ষার প্রকৃতির মধ্যে উক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত বলে আলোচনা করা যেতে পারে । যেমন—

( i ) সর্বজনীন শিক্ষা শান্তি শিক্ষা একটি সর্বজনীন শিক্ষা প্রক্রিয়া । সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য এই শিক্ষা উন্মুক্ত । যে – কোনো মেধার শিশুই এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে । নিজের সামর্থ্য , চাহিদা , প্রবণতা অনুযায়ী শিশুরা এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে ।

( ii ) অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা : ব্যক্তিকে তার দায়দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এই শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ।

( iv ) সংস্কৃতি বা কৃষ্টিমূলক শিক্ষা : শান্তি শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে ।

( v ) সংগতিবিধানে সহায়ক শিক্ষা : শান্তি শিক্ষা ব্যক্তিকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে শেখায় । সমাজের প্রতিটি সদস্য যাতে পরস্পরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে তাহলে সমাজ থেকে হিংসা , দ্বন্দ্ব , বিভেদ প্রভৃতি দূর হবে এবং আগামী ১ দিনে একটি সুন্দর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে উঠবে ।

( vi ) সামাজিক বিকাশে সহায়ক শিক্ষা শান্তি শিক্ষা শিক্ষার্থীর সামাজিক বিকাশ সাধনে সহায়ক । এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবে ।

শান্তি শিক্ষার প্রকৃতি : শান্তি শিক্ষার মাধ্যমে যেহেতু ব্যক্তির চারিত্রিক , নৈতিক , সামাজিক , আধ্যাত্মিক , নান্দনিক ইত্যাদি সমস্ত দিকের সুষম বিকাশ ঘটে , তাই এই শিক্ষার প্রকৃতির মধ্যে উক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত বলে আলোচনা করা যেতে পারে । যেমন—

(i) সর্বজনীন শিক্ষা শান্তি শিক্ষা একটি সর্বজনীন শিক্ষা প্রক্রিয়া । সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য এই শিক্ষা উন্মুক্ত । যে – কোনো মেধার শিশুই এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে । নিজের সামর্থ্য , চাহিদা , প্রবণতা অনুযায়ী শিশুরা এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে ।

(ii) অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা : ব্যক্তিকে তার দায়দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এই শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ।

(iii) ব্যক্তিত্বের বিকাশসাধন : শান্তি শিক্ষা ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক শিক্ষা । শিক্ষার্থীর মধ্যে মূল্যবোধ গড়ে তুলতে এবং একজন নাগরিকের কাছে সমাজ যা প্রত্যাশা করে । সেই প্রত্যাশা পূরণে এই শিক্ষা একান্ত সহায়ক ।

(iv) সংস্কৃতি বা কৃষ্টিমূলক শিক্ষা : শান্তি শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে ।

(v) সংগতিবিধানে সহায়ক শিক্ষা : শান্তি শিক্ষা ব্যক্তিকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে শেখায় । সমাজের প্রতিটি সদস্য যাতে পরস্পরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে তাহলে সমাজ থেকে হিংসা , দ্বন্দ্ব , বিভেদ প্রভৃতি দূর হবে এবং আগামী দিনে একটি সুন্দর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে উঠবে ।

(vi) সামাজিক বিকাশে সহায়ক শিক্ষা : শান্তি শিক্ষা শিক্ষার্থীর সামাজিক বিকাশ সাধনে সহায়ক । এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবে ।

(vii) বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়ক শিক্ষা : শান্তি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশ সাধনে সহায়ক । এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত ক্ষমতাগুলি বিকশিত হয় , বুদ্ধির বিকাশ ঘটে ।

(viii) সৌন্দর্যবোধের শিক্ষা : শান্তি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটায় । এই শিক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা একটি স্বপ্নের সমাজ তথা পৃথিবীর সন্ধান পাবে ।

শান্তি শিক্ষার পরিধি আলোচনা প্রসঙ্গে বলা যায় , শান্তি প্রতিষ্ঠাই যেহেতু এই শিক্ষার মূল আলোচ্য বিষয় তাই এই শিক্ষার পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে UNO বা জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা যেমন UNESCO বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে ব্যস্ত । Learning to live together বা একসঙ্গে বসবাসের জন্য শিক্ষা এবং Learning to be বা মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা এর পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত ।

জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তির যে অবদান অর্থাৎ জাতীয় সংহতি বা National integration এবং International Understanding বা আন্তর্জাতিক বোঝাপড়ার জন্য যে শিক্ষা তাও এই শাস্তি শিক্ষারই অঙ্গ ।

মূল্যবোধের শিক্ষা বা Value oriented education যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বা শিক্ষা সম্পর্কে যে বোধ তৈরি হয় তাও শান্তি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত । নৈতিকতার শিক্ষা যার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার মধ্যে নৈতিক জ্ঞান বিকশিত হয় , শিক্ষার্থী ভালো – মন্দ বিচার করতে পারে এবং যথাসময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে তাও এই শান্তি শিক্ষার পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ।

নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে নিয়মকানুন , সময়ের মূল্য , আচার – আচরণ প্রভৃতি বিকশিত হয় তাও শান্তি শিক্ষার পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ।

Learning to be বা মানুষ হওয়ার জন্য যে শিক্ষা যার মধ্য দিয়ে ব্যাপ্তি সমাজ একজন যোগ্য উত্তরাধিকার পায় , যোগ্য মানুষ পায় , যে সবসময় সমাজের আদর্শ হয়ে থাকবে প্রভৃতি শান্তি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত । ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা , ভালোবাসা , সহমর্মিতা , যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদান , শিক্ষার্থীর শৃঙ্খলাপরায়ণতা প্রভৃতি শান্তি শিক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থী অর্জন করে ।

শান্তি শিক্ষা এমন এক সুপরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা যার মধ্যে শিক্ষণীয় সমস্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছে । সাহিত্য থেকে বাণিজ্য , বিজ্ঞান থেকে দর্শন সবই শান্তি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত । এক কথায় বলা যায় , শান্তি প্রতিষ্ঠার সমস্ত উপকরণ , আলোচনা , প্রচেষ্টা , মাধ্যম , হাতিয়ার সবই শান্তি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত ।

শান্তি শিক্ষার গুরত্ব : শিশু নীতিপরায়ণ হয়ে জন্মায় না । অন্যান্য প্রাণীর মতো তার কতকগুলি স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে । তার এইসব প্রবণতা বা প্রবৃত্তি সবসময় সমাজ অনুমোদিত আদর্শের মধ্যে পড়ে না । সুতরাং তার বহুবিধ জৈব প্রবৃত্তিকে শিক্ষার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় । তার আদিম প্রবৃত্তিগুলির মধ্যে উদ্‌গতিসাধন করে তার মধ্যে চারিত্রিক আদর্শের সৃষ্টি করা শিক্ষার একটি অন্যতম দায়িত্ব । শান্তি শিক্ষা ব্যক্তিকে ন্যায়পরায়ণ , সত্যবাদী , দয়ালু , পরহিতকারী ও সংযতেন্দ্রিয় হতে সাহায্য করে । তাই অন্য শিক্ষাবিদদের মতো শিক্ষাবিদ হার্বার্ট বিশ্বাস করেন জীবনের প্রধান মূল্য হল নৈতিক মূল্য এবং শান্তি শিক্ষাই এই মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে পারে ।

আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগেও যেখানে সর্বদা হিংসা , বিদ্বেষ , রাজনীতি , সন্ত্রাসবাদ , বেকারত্ব প্রভৃতির উসকানি ব্যক্তি এবং সমাজকে ধ্বংসের মুখে এগিয়ে নিয়ে চলে , যেখানে শান্তি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় UNO বা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ । UNO- এর বিভিন্ন Sister Organization যেমন— UNICEF , UNESCO , WHO প্রভৃতি সংস্থা শান্তির বাতাবরণ তৈরিতে নিযুক্ত ।

বর্তমানে আদর্শহীনতা , দুর্নীতির প্রসার , সন্ত্রাসবাদ , সামাজিক ও নৈতিক অবমূল্যায়ন পৃথিবীর সব দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও শিক্ষাবিদদের গভীর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । জাপান বর্তমানে শান্তি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে । ইংল্যান্ড এ ব্যাপারে গভীর চিন্তাভাবনা শুরু করেছে । আমেরিকাও তার দেশের ক্রমবর্ধমান অপরাধপ্রবণতার জন্য শান্তি শিক্ষার সূত্রপাতের কথা ভাবছে ।

সামাজিক দায়দায়িত্ব , কর্তব্যবোধ , সততা , নির্লোভ স্বভাব , পারস্পরিক ভালোবাসা , মূল্যবোধ , সৌভ্রাত্র , নিয়মনিষ্ঠা ইত্যাদির বর্তমানে অভাব দেখা দিয়েছে । উক্ত বিভিন্ন নৈতিক দায়িত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে শান্তি শিক্ষা বর্তমানে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

প্রত্যক্ষভাবে আমাদের দেশের পাঠক্রমে শান্তি শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকলেও প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় এমন কিছু বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নৈতিক দায়িত্ব – কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয় , যেগুলি শান্তি শিক্ষারই অঙ্গ । একজন নীতিপরায়ণ ডাক্তার , উকিল , ইঞ্জিনিয়ার , রাজনৈতিক নেতা সমাজকল্যাণে সহায়ক হতে পারে । নীতি – জ্ঞানহীন ব্যক্তি যতই উচ্চশিক্ষিত হন তিনি সমাজের বিষফোড়া স্বরূপ । এ সম্বন্ধে খুব পরিষ্কারভাবে ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ বলেছেন— “We are building a civilisation , not a factory or workshop . The quality of civilisation depends not on the material equipment but on the character of men .”

Related posts:

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবন কথা
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী : 2024
চন্দ্রযান-3 : চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ ভারত
GENERAL STUDIES : TEST-2
GENERAL STUDIES : 1
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: 8ই সেপ্টেম্বর
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
তপনের জীবনে তার ছোটো মাসির অবদান আলোচনা করো।
সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝ ?
আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায় ? এটি কয়প্রকার ও কী কী ?
একটি সাদা কাগজকে কীভাবে তুমি অস্বচ্ছ অথবা ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করবে ?
ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অস্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অপ্রভ বস্তুও কি আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে?
বিন্দু আলোক - উৎস কীভাবে পাওয়া যেতে পারে ?
বিন্দু আলোক - উৎস ও বিস্তৃত আলোক - উৎস কী ?
অপ্রভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বপ্নভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সবকিছু দেখতে পাই , কিন্তু রাত্রিবেলা আলোর অনুপস্থিতিতে কোনো জিনিসই দেখতে পা...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page