মেসােপটেমীয় – এ্যাসিরীয় সভ্যতা

💠 মেসােপটেমীয় – এ্যাসিরীয় সভ্যতা :

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০০০-৯০০ অব্দের মধ্যে এ্যাসিরীয় সভ্যতার পত্তন ঘটে । প্রাচীন সভ্যতাগুলাের মধ্যে এ্যাসিরীয় সভ্যতা অন্যতম । ব্যাবিলন থেকে প্রায় দু’শ মাইল উত্তরে টাইগ্রিস নদীর তীরে একটি শহর গড়ে ওঠে । সমৃদ্ধ এ শহরের নাম এ্যাসুর । এ শহরের অধিবাসীরা এ্যাসিরীয় নামে পরিচিত ছিল । প্রথমদিকে কৃষিকাজ আর পশুপালন করে এরা জীবন চালাত । কিন্তু জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে বেঁচে থাকার জন্য তাদের হাত বাড়াতে হয় প্রতিবেশী দেশগুলাের দিকে । ফলে এ্যাসিরীয়রা ক্রমে যােদ্ধা জাতিতে পরিণত হয় । সামরিক ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । তারা গােলন্দাজ বাহিনী গঠন করে এবং যুদ্ধরথের ব্যবহার করে । সে যুগের বিবেচনায় তাদের সেনাবাহিনী ছিল বেশ আধুনিক । ক্রমে এ্যাসিরীয় রাষ্ট্র একটি সামরিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় ।


এ্যাসিরীয় সম্রাট বিশ্বাস করতেন তিনি দেবতা অসুরের প্রতিনিধি । সব কিছুর ওপর তাঁর কর্তৃত্ব । প্রতিবেশী রাষ্ট্র দখলের ফলে ক্রমে এ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের সীমারেখা অনেক বেড়ে যায় । শাসন কার্যের সুবিধার জন্য সাম্রাজ্যকে কতগুলাে প্রদেশে ভাগ করা হয় । এ্যাসিরীয় সমাজ কাঠামাে ব্যবিলনীয় সমাজের মতােই ছিল । এ্যাসিরীয়দের অর্থনীতির মূল উৎস ছিল বিভিন্ন দেশ থেকে লুণ্ঠন করে আনা ধনসম্পদ । অল্প বিস্তর বাণিজ্যও তারা করত ।


ধর্ম :
ধর্মীয় ক্ষেত্রে এ্যাসিরীয়রা ব্যাবিলনীয়দের অনুসরণ করে । তারা বহু দেব – দেবতায় বিশ্বাস ও তাদের পূজা করত । তবে তাদের প্রধান দেবতা ছিল আসুর । এরপর ছিল ইশতারের স্থান । রাজা দেবতা আসুরের নামে রাজ্য শাসন করতেন । তারা কুসংস্কার ও তন্ত্র – মন্ত্রে বেশি বিশ্বাসী ছিল ।


সভ্যতায় এ্যাসিরীয়দের অবদান :

সামরিক ক্ষেত্রে :
সামরিক ক্ষেত্রে এ্যাসিরীয়দের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভূমিকা ছিল । তারা সর্বপ্রথম লােহার অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী গঠন করে ও যুদ্ধ রথের ব্যবহার করে । সে যুগের বিচারে তাদের সৈন্যবাহিনী ছিল বেশ আধুনিক । বহু নতুন নতুন অস্ত্র , যুদ্ধ কৌশল আবিষ্কারের কারণে প্রতিবেশীদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে । সামরিক প্রয়ােজনে শক্তিশালি গুপ্তচর ও যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তােলে ।

ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শিল্প :
ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শিল্পে এ্যাসিরীয়দের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল । বিভিন্ন রাজার সময় রাজধানী পরিবর্তনের ফলে এ্যাসিরীয় স্থাপত্যগুলাে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিল । তাদের উল্লেখযােগ্য স্থাপত্য কর্ম হচ্ছে- মন্দির , সুরম্য প্রাসাদ ও দুর্গ । উল্লেখ্য যে সামরিক প্রয়ােজনকে প্রাধান্য দিয়েই তারা তাদের স্থাপত্য কর্ম সম্পাদন করত । আর ভাস্কর্যে এ্যাসিরীয়দের অগ্রগতি ছিল স্থাপত্যের চেয়ে অধিক । ভাস্কর্যের বিষয় ছিল বৈচিত্র্যময় । যেমন- শত্রু নগরী ধ্বংস , যুদ্ধ বিজয় , যুদ্ধ যাত্রা , সম্রাটের সিংহ শিকার প্রভৃতি । ভাস্কর্যগুলাে চুনাপাথর দিয়ে তৈরি ছিল এবং চিত্রিত ছিল বিভিন্ন রঙের যেমন- সাদা , নীল , লাল ও সবুজ । এছাড়াও তাদের ব্রোঞ্জের তৈরি অনেক ভাস্কর্য পাওয়া যায় । সর্বোপরি এ্যাসিরীয়রা পাথর দিয়ে ঘর – বাড়ি নির্মাণ ও তৈজসপত্র তৈরিতে দক্ষ ছিল ।

জ্ঞান – বিজ্ঞানে :
জ্ঞান – বিজ্ঞানে তাদের উল্লেখযােগ্য অবদান ছিল । সম্রাট আশুরবনিপালের গড়া একটি বৃহৎ গ্রন্থাগার পাওয়া গেছে রাজধানী নিম্পরে । বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এ্যাসিরীয়দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । তারাই প্রথম বৃত্তকে ৩৬০ ° তে ভাগ করে । পৃথিবীকে সর্বপ্রথম তারা অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে ভাগ করেছিল ।

চিকিৎসাবিদ্যায় এ্যাসিরীয়দের ভূমিকা ছিল অসামান্য । তারা পাঁচশ’রও বেশি উদ্ভিদ ও খনিজ ওষুধের তালিকা প্রণয়ন করে সেগুলাের গুণাগুণ ও ব্যবহার পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করে ।


এ্যাসিরীয়দের পতন :
মানব সভ্যতার ইতিহাসে কোন সভ্যতাই দীর্ঘদিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি । বিকাশের এক পর্যায়ে এসে তার পতন ঘটেছে । এ্যাসিরীয়দের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি । উত্তরসূরি শাসকদের বিভিন্ন দুর্বলতা এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলাের আক্রমণের মুখে তিন’শ বছরের এই প্রাচীন সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব ৬১২ অব্দে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ।




পাঠোত্তর মূল্যায়ন : ২.৫ ক , নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন সঠিক উত্তরটি লিখুন : ১. এ্যাসিরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল- ব্যাবিলনে / টাইগ্রিস নদীর তীরে / সিন্ধু নদীর তীরে । ২ , প্রথম দিকে এ্যাসিরীয়দের পেশ্য ছিল- কৃষিকাজ ও পশু পালন / যুদ্ধ – বিগ্রহ । লুটতরাজ । ৩. পরবর্তী সময়ে এ্যাসিরীয়দের পরিচয় ঘটে- সামরিক রাষ্ট্র হিসেবে / যােদ্ধা জাতি হিসেবে / লুটেরা জাতি হিসেবে । ৪. এ্যাসিরীদের দেবতার নাম- দেবতা শশাঙ্ক দেবতা আসুর / দেবতা হিমাঙ্ক । ৫. এ্যাসিরীয়দের অর্থনীতির মূল উত্স ছিল- লুট করে আনা ধন – সম্পদ / পশুপালন ও কৃষিকাজ / ব্যবসা – বাণিজ্য । তিন জন অ ৭ কােন