যে পাঁচটা ইন্দ্রিয় দিয়ে আমরা পৃথিবীকে জানি , তাদের ত্রুটি অনেক । অনেক রকম ভুল তাদের হয় । তবু আমাদের মত সাধারণ মানুষের তাদের ওপর বিশ্বাস অগাধ । অগাধ বিশ্বাস আমাদের সাধারণ বুদ্ধির ওপর । এই কটা ইন্দ্রিয়ের নাগালের মধ্যে না এলেই আমরা অনায়াসে অনেক কিছুই উড়িয়ে দিই । বুদ্ধি দিয়ে আমরা কঠিন ভাবে সত্য বা মিথ্যা বলে সব কিছুর উপর রায় দিই ; কিন্তু এমন অনেক জিনিস আছে, যা সত্য মিথ্যার মাঝামাঝি জগতের যেখানে বুদ্ধি থই পায় না, ইন্দ্রিয় হার মেনে যায় ।সেই রকম একটা কাহিনীই আজ বলতে বসেছি ।গােড়ায় নিজের একটু পরিচয় দেওয়া ভাল । পশ্চিমের কোনাে একটি মাঝারি গােছের সমৃদ্ধ শহরে আমি ডাক্তারি করি । শহরের নামে কোনাে প্রয়ােজন এ গল্পে নেই, সুতরাং নামটা নাই করলাম ।সেদিন রাত্রে শহরের প্রায় বাইরে বহু দূরের একটা ‘কল’ সেরে একাই ফিরছিলাম । একে দারুণ শীত এ-বছর, তার ওপর রাত অনেক হওয়ায় ঠাণ্ডা অনেক বেশী পড়েছিল । পুরু পুরু গােটাকতক গরমের জামা থাকা সত্ত্বেও সব ভেদ করে মনে হচ্ছিল, ঠাণ্ডা, হাওয়া আমার পাঁজরার ভেতর গিয়ে ঢুকছে ।আসছিলাম আমার পুরনাে মােটরে । এ – মােটর আমি আজ দশ বছর ধরে একাই চালিয়ে ফিরছি ; কিন্তু এখন মনে হচ্ছিল , সঙ্গে একজন সেপাই থাকলেই বুঝি ভাল হত । এই দারুণ শীতে স্টিয়ারিং হুইল ধরে সমস্ত হাওয়ার ঝাপটা সহ্য করার চেয়ে কষ্ট আর কিছুই নেই ।আমাদের শহরটি অত্যন্ত ছড়ানাে । বড় বড় কয়েকটি রাস্তাকে আশ্রয় করে চারিধারে অনেক দূর পর্যন্ত সে বিস্তৃত হয়ে আছে , কিন্তু জমাট বাঁধে নি ।অনেক সময় এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের মধ্যে শুধু একটি নির্জন রাস্তা ছাড়া আর কোনাে যােগ নেই ।যে – রাস্তা দিয়ে আসছিলাম , সেটিও অত্যন্ত নির্জন । দু – ধারে মাঝে মাঝে হরতকি বা মহুয়া গাছ । আর রাস্তার দু – ধারে শুধু শুন্য অসমতল মাঠ । তার ভেতর বাড়ি – ঘর নেই বললেই হয় । কে বাড়ি করবে এই নির্জন জায়গায় ।অন্ধকারে অবশ্য কিছুই দেখা যাচ্ছিল না । আমার মােটরের মিটমিটে আলােয় সামনের পথের খানিকটা দেখা যাচ্ছিল মাত্র । থেমে যেতে মনে হচ্ছিল , অন্ধকারের সমুদ্রই যেন আমার মােটরের আলােয় কেটে চলেছে কোনাে রকমে ।শীতের দরুন কষ্ট পেলেও বেশ নিশ্চিন্ত মনেই চলেছিলাম । আমার ‘কার’ টি পুরনাে হলেও মজবুত । বেয়াড়াপনা সে করে না । আধঘন্টার মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে গরম লেপের মধ্যে আরাম করে যে শুতে পাবাে , এ বিষয়ে কোনাে সন্দেহ ছিল না । অন্ধকার রাস্তার নিস্তব্ধতার ওপর শব্দের ঢেউ তুলে আমার মােটর চলেছে দ্রুতগতিতে । নিজেকে যথাসম্ভব আবৃত রেখে ভেতরে বসে সমস্ত চিন্তা পরিত্যাগ করে আমি শুধু আমার গরম বিছানাটার আরামের কথা ভাবছি । ডাক্তারদের মত পরাধীন আর কেউ নেই । তবু মনে হচ্ছিল , একবার বাড়িতে পৌঁছাতে পারলে প্রাণের দায়ে শুধু পয়সার জন্যে আর আমায় কেউ বের করতে পারবে না । এখন কোনাে রকমে কুড়ি – পঁচিশ মিনিট কাটলেই হয় ।কিন্তু হঠাৎ অপ্রত্যাশিত এক ঘটনায় সুখ – স্বপ্ন আমার ভেঙে গেল ।আমার একাণ্ড সুস্থ সবল মােটর থেকে থেকে যেন অদ্ভুত এক রকম ধাতব আর্তনাদ করতে শুরু করেছে । মােটরের এ রকম আচরণের কোনাে কারণ খুঁজে পেলাম না ।আজ দুপুরেই আমার মােটরের ভাল রকম সেবা – শুশ্রুষা হয়ে গেছে । কোনাে রকম রােগের আভাস তার ভেতরে তখন ছিল না । হঠাৎ তার এ রকম আকস্মিক বিকারের কারণ তবে কি ? এই দারুণ শীতের রাত্রে অন্ধকার নির্জন এই পথের মাঝে মােটরের এই বেয়াড়াপনায় সত্যি ভীত হয়ে উঠলাম । এখনও প্রায় সাত – আট মাইল পথ বাকী । রাস্তার মাঝে মােটর সত্যি অচল হয়ে গেলে করবাে কি ? এই রাত্রের ডাকেও সঙ্গে লােক না নেওয়ায় আমার নির্বুদ্ধিতার জন্যে এবার নিজের ওপরই রাগ হচ্ছিল । সঙ্গে একজন লোক থাকলে তবু বিপদে অনেক সাহায্য পাওয়া যেত ।দেখতে দেখতে মােটরের আর্তনাদ আরাে বেড়ে উঠল , সঙ্গে সঙ্গে মােটরের বেগও মন্থর হয়ে আসছে বুঝতে পারলাম । মােটর চালনার সমস্ত বিদ্যা প্রয়ােগ করেও সুরাহা কিছুই করতে পারলাম না ।কাতরাতে কাতরাতে খানিক দূর গিয়ে আমার মোটর হঠাৎ রাস্তার পাশে এক জায়গায় একেবারে থেমে গেল । আর তার নড়বার নাম নেই ।চেষ্টার আমি তখনও ত্রুটি করলাম না ; কিন্তু আমার পীড়নে অস্ফুট ভাবে একটু কাতরােক্তি করে ওঠা ছাড়া আর কোনাে সাড়া দিলে না । ভয়ে , দুর্ভাবনায় সত্যিই তখন আমার সমস্ত দেহ আড়ষ্ট হয়ে এসেছে । মােটর ফেলে এই দারুণ শীতের মাঝে সাত – আট মাইল জনহীন পথ হেঁটে যাওয়ার কথা তাে কল্পনা করা যায় না । এই মাঠের মাঝে মােটরে সারারাত কাটানােও অসম্ভব । এখন উপায় !ডাক্তারবাবু !হঠাৎ বুকের ভেতরে হৃৎপিণ্ডটা যেন লাফিয়ে উঠল । এই জনশূন্য পথে এমন সময়ে কে ডাকলে ?আবার শুনতে পেলাম , ‘ডাক্তারবাবু ।’এদিক-ওদিক অন্ধকারে তীক্ষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এবার দেখতেও পেলাম । পথের ধারে ঝাঁকরা একটা গাছের পাশে আবছা একটি দীর্ঘ শীর্ণ মূর্তি দেখা যাচ্ছে । হঠাৎ এমন জায়গায় কেমন করে তার উদয় হল, বুঝতে না পারলেও সাড়া দিয়ে বললাম ,“ কে তুমি ? ” মনে তখন আমার একটু আশার রেখাও দেখা দিয়েছে । তার আর্বিভাব যেমনই বিস্ময়কর হােক না কেন , লােকটার কাছে সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা তাে আছে । লােকটা সেই জায়গা থেকেই বললে , ‘আমায় চিনবেন না আপনি ।’চেনবার জন্যে আমি তখন ব্যস্ত নই ! আমায় সাহায্য করবার জন্যে একজন লােক তখন দরকার মাত্র । সেই কথাই আমি তাকে বলতে যাচ্ছি এমন সময় লােকটা আবার বললে , ‘ আপনাকে একটু আসতে হবে ডাক্তারবাবু । ভারী অসুখ একজনের ।’ এমন সময়ে এ অনুরােধে বিরক্ত যেমন হলাম , আশ্চর্যও হলাম তেমনি । ঠিক এই সময়ে রাস্তার ঠিক এই জায়গায় রােগী কি আমার জন্যে তৈরী হয়ে বসে ছিল ?লােকটা আমার মনের কথাই যেন আঁচ করে বললে , ‘এ ভগবানের দয়া ডাক্তারবাবু !এমন সময় আপনাকে এখানে পাবাে , স্বপ্নেও ভাবিনি , অথচ না পেলে কী বিপদই যে হত ।’বেশী কথাবার্তা তখন আর ভালাে লাগছিল না । একটু বিরক্ত হয়েই বললাম , ‘ কোথায় তােমার রােগী ?’লােকটা এবার নিঃশব্দে অন্ধকারের ভেতর এক দিকে হাত বাড়িয়ে নির্দেশ করলে ; সেদিকে চেয়ে দেখলাম , সত্যিই দূরে একটা বাড়ির আলাে যেন দেখা যাচ্ছে । এ রকম নির্জন প্রান্তরের মাঝে এ রকম বাড়ি খুবই কম থাকে । হঠাৎ এ রকম জায়গায় এমন সময়ে যাওয়াও একটু বিপজ্জনক । তবে শত্রু আমার কেউ তাে নেই এবং সঙ্গে টাকাকড়িও নিতান্ত সামান্য , এই যা ভরসা ।একটু ভেবে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম , ‘কি অসুখ ?’উত্তর এলাে , ‘জানি না ডাক্তারবাবু , কিন্তু অত্যন্ত সঙ্গিন অবস্থা , তাড়াতাড়ি না গেলে বােধহয় বাঁচানাে যাবে না । দোহাই আপনার চলুন ডাক্তারবাবু ? ”কোথায় নিজের বিপদ সামলাব , না হঠাৎ রাস্তার মাঝে মাঝ রাতে যেতে হবে পরের চিকিৎসায় ? তবু ডাক্তার মানুষ জীবন – মরণের কথা শুনলে চুপ করে বসে থাকতে পারা যায় না । বাধ্য হয়েই তাই বললাম , চল ।মাঠের উপর দিয়ে সরু একটি পথ । অন্ধকারে ভাল দেখাই যায় না । তাই লােকটার পিছু পিছু মিনিট পাঁচেক হেঁটে একটি বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়ালাম , সামনে একটি ঘরের দরজা থেকে আলাে দেখা যাচ্ছে । সেই দিক দেখিয়ে লােকটা বললেন , ‘ওই ঘরেই রােগী , বাবু , আপনি যান , আমি এখুনি আসছি ।’অন্ধকারের ভেতরেই বুঝতে পারছিলাম । বাড়িটি বিশেষ সমৃদ্ধ চেহারার নয় । গুটি চার পাঁচেক ঘর এবং একটুখানি ঘেরা উঠোন । ঘরগুলিও সব পাকা ছাদের নয় , দুপাশে খােলা ছাউনি ।লােকটার কথামত সামনের ঘরে গিয়ে এবার ঢুকলাম । ঘরটি আয়তনে বিশেষ বড় নয় , তার ওপর নানান আকারের বাক্স – পেঁটরায় বােঝাই বলে ভেতরে নড়বার চড়বার স্থান অত্যন্ত অল্প । দরজার মুখােমুখি একটি জানালা । সেই জানালার ধারে মিট্মিট্ করে একটি কেরােসিনের লণ্ঠন জ্বলছে । সেই আলােতেই অস্পষ্ট ভাবে দেখা গেল দরজার বাঁ – ধারে একটি চারপায়ায় অত্যন্ত শীর্ণ এক ভদ্রলােক শুয়ে আছেন ।আমি ঘরে ঢুকতেই ক্ষীণস্বরে ভদ্রলােক বললেন , ‘ এসেছেন ডাক্তারবাবু । আপনার দয়া কখনও ভুলব না , বসুন ।’ঘরের ভিতর এদিক – ওদিকে চেয়ে বসবার জায়গা একটি মাত্র দেখতে পেলাম । জানালার কাছে চারপায়া থেকে অনেক দূরে একটি বেতের মােড়া । সেইটেই টেনে চারপায়ার কাছে বসবার উদ্যোগ করতে ভদ্রলােক আবার ক্ষীণস্বরে বললেন , ‘ বসুন বসুন এইখানেই বসুন । আগে আমার রােগের কথা বলি শুনুন । একটু হেসে সেইখানেই বসলাম । রােগীদের নানা অদ্ভুত বাতিকের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে । বুঝলাম খানিকক্ষণ ধরে নিজের রােগ সম্বন্ধে ভদ্রলােকের নানা মতামত এখন আমায় শুনতে হবে । না শুনলে নিস্তার নেই ।ক্ষীণস্বরে প্রথমেই তিনি আরম্ভ করলেন , ‘ আমার রােগ সারাতে আপনি পারবেন না ডাক্তারবাবু ! বাঁচাতে পারবেন না ডাক্তারবাবু ।একটু হেসে বললাম , ‘সেই চেষ্টা করাই তাে আমার কাজ । বাঁচবেন নাই বা কেন ? একটু অদ্ভুত হাসির আওয়াজ এলাে খাট থেকে, বাঁচতেও পারি তাহলে ডাক্তারবাবু ?বললাম , ‘ পারেন বইকি ! কী এমন আর হয়েছে আপনার ?‘না, তেমন আর কী হয়েছে ।’ ভদ্রলােক আবার যেন হাসলেন , তারপর বললেন , ডাক্তারদের অনেক ক্ষমতা , কেমন না ? কিন্তু ধরুন তাতেও যদি না বাঁচি , যদি আজ রাতেই মারা যাই ?’রােগীর এই অর্দ্ধোন্মত্ত প্রলাপের কী যে বলব , কিছুই ভেবে পেলাম না । মনে মনে । তখন এই বিলম্বের জন্য অস্থির হয়ে উঠছিলাম ।রােগীই আবার বললেন , যদি আপনি থাকতে থাকতেই মারা যাই ডাক্তারবাবু , কী হবে তা হলে ? কে আপনার ফী দেবে ? ”আচ্ছা পাগল রােগীর পাল্লায় পড়া গেছে । বললাম , ‘যদি নেহাতই তাই হয় , তাহলে ফী না হয় নাই পেলাম । আমরা শুধু ফীর জন্যেই সব সময় আসি না ।’‘ তা বটে তা বটে । পৃথিবীতে ভাল লােকও আছে , পৃথিবীতে মনুষ্যত্ব তাহলে এখনও আছে , না ডাক্তারবাবু ! হঠাৎ যদি মরে যাই , তা হলে ঐ বাক্সটি খুলে ফেলবেন , বুঝলেন ডাক্তারবাবু ওই বেতের ছােট বাক্সটি ’ । ভদ্রলােকের স্বর আরাে মৃদু হয়ে এলাে , ‘ওই বাক্স থেকে আপনার প্রাপ্য টাকা নেবেন । আরও একটা জিনিস নেবেন ডাক্তারবাবু । বলুন নেবেন তাে ? ”একটু বিরক্ত হয়েই বললাম , “ কী ?‘ কিছু না , ডাক্তারবাবু , একটা কাগজ । কিন্তু ভয়ানক দরকারি কাগজ । যে কাগজ ওখানে আছে , শুধু আমি জানি আর আপনি এখন জানলেন । আর কেউ জানে না । জানলে আর ওখানে ওটা থাকত না ।’ভদ্রলােক একটু চুপ করে থেকে একটু হেসে আবার বললেন , “ এ বাড়িতে কাউকে দেখতে না পেয়ে ভাববেন না যেন আমার কেউ নেই । আমার অনেক আত্মীয় আছে – ওত পেতে আছে আমার মরার অপেক্ষায় । শুধু তাদের বিশ্বাস , আজ আমি হয়ত মরব না , তাদের বিশ্বাস , মরবার আগে আর আমি কিছু করবাে না ! তারাই পাবে সব ।আমি এবার বলতে যাচ্ছিলাম , আপনার অসুখ সম্বন্ধে –“ হ্যা , অসুখ তাে দেখবেন তার আগে একটা কথা বলে নিই — ঐ কাগজটা আমার উইল , ডাক্তারবাবু । আমার ছেলের নামে উইল । যে ছেলেকে আমি ত্যাজ্যপুত্র করেছিলাম একদিন , কোথায় আছে , তাও জানি না ; কিন্তু জানেনই তাে রক্ত জলের চেয়েও ঘন ।’ আর বেশীক্ষণ অপেক্ষা করা যায় না । মােড়া থেকে উঠে পড়ে আমি বললাম , ‘ এইবার আমি দেখতে পারি ?খাট থেকে আওয়াজ এলাে , ‘দেখুন ।’আমি খাটের কাছে এগিয়ে গিয়ে রোগীর নাড়ি দেখবার জন্য হাতটা তুলে ধরলাম এবং পর মুহুর্তেই সেই দারুণ শীতের ভেতরেও আমার সমস্ত দেহ ঘেমে উঠল ।সে হাত বরফের মত ঠাণ্ডা । রােগী মৃত ! শুধু মৃত হলে এতখানি আতঙ্কের কারণ আমার বােধহয় থাকতাে না । কিন্তু ব্যাপার যে আলাদা । ডাক্তারি শাস্ত্রে যদি কিছু সত্য থাকে , তা হলে এই রােগী এইমাত্র কখনই মারা যায় নি । তার মৃত্যু হয়েছে অনেক আগে ; কয়েক ঘণ্টা আগে । সমস্ত দেহ তার কঠিন ।উন্মাদের মতাে আরাে খানিকক্ষণ পরীক্ষা করলাম । নাঃ ভুল আমার . . . হতেই পারে না । কিন্তু তা হলে এ ব্যাপারের অর্থ কী ?তখন কিন্তু স্থিৱ ভাবে কোনাে চিন্তা করবার আর আমার ক্ষমতা নেই । আতঙ্কে আমার বুকের স্পন্দন পর্যন্ত যেন থেমে আসছে । হঠাৎ জানালার কাছে বাতিটা দপ্দপ্ করে নেচে উঠল । সেটা একবার নেড়ে দেখলাম , তাতে তেল এক ফোঁটাও নেই ! প্রান্তরের মাঝে নিস্তব্ধ নির্জন বাড়িতে এই ভয়ঙ্কর অবস্থায় আমি একা , এই বাতির আলােটুকুই যেন আমার সহায় ছিল , তাও নিবতে চলেছে দেখে আমি দ্রুতপদে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম । বুঝতে পারলাম , পেছনের আলােটা আর কয়েকবার নেচে নিবে গেল । তখন আমি উঠোন ছাড়িয়ে এসেছি প্রায় ।কী ভাবে সেই প্রান্তরের ভেতর দিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে মােটরে উঠেছিলাম , তা আমার মনে নেই । মােটর চালিয়ে শহরের মাঝ-বরাবর আসবার পর আমার যেন স্বাভাবিক জ্ঞান ফিরে এলাে । সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার মনে হল মােটরের এই চলা । খানিক আগে অদ্ভুত ভাবে যে মােটর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল , হঠাৎ এবার বিনা চেষ্টায় আপনা হতে সে মােটর এমন শুধরে গেল কী করে ?তার পরদিন দিনের আলােতে লোক সঙ্গে করে নিয়ে সেই প্রান্তরের মাঝেকার বাড়ির নিঃসঙ্গ রােগীর শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করবার ব্যবস্থা করেছিলাম । তাঁর ছেলেই আজকাল সমস্ত বিষয়ের মালিক ।সেদিনকার রহস্যের স্বাভাবিক মীমাংসা কিন্তু আমি এখনও করতে পারি নি ।
ভূতের গল্প : রাতের কল
ভূতের গল্প : কিম্ভুত ভূতের কান্ড
ভূতের গল্প : ভূতের রেডিও প্রোগ্রাম
ভূতের গল্প : মেজ কাকুর জেদ ও ভূত
ভূতের গল্প : পলাশ ডাঙ্গার শ্মশানে
ভূতের গল্প : শনি সন্ধ্যার পঞ্চভূত
ভূতের গল্প : রাত বারোটা
ভূতের গল্প : পেত্নীর আলতা পরা
ভূতের গল্প : Something are Wrong
ভূতের গল্প : রাতের চিৎকার
ভূতের গল্প : একটা পিশাচ
ভূতের গল্প : কালীমন্দির
ভূতের গল্প : শিব মন্দিরের একটি ঘটনা
ভূতের গল্প : টিউমারের ভূত
ভূতের গল্প : ভয়ঙ্কর রেলস্টেশন
ভূতের গল্প : ভুতূরে বট গাছ
ভূতের গল্প : কথায় কথায় ভূত
ভূতের গল্প : সত্যি ঘটনার অবলম্বনে — তাসনিয়া
ভূতের গল্প : লাশ রিসার্চ
ভূতের গল্প : রাক্ষস
ভূতের গল্প : জ্বীনের প্রতিশোধ