চারদিকে অন্ধকার আর অন্ধকার। এরই মধ্য দিয়ে ছুটে চলছে রাতের ট্রেন। আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে তাই দেশের বাড়ি যাচ্ছি। কমলাপুর থেকে ট্রেনে উঠেছি। আমার কামরায় কয়েকজন ছিলো তাদের সাথে গল্প করে ভালোই সময় কাটালাম। সবাই একে একে নেমে যাওয়ায় আমি একা হয়ে গেলাম এবং একরাশ অন্ধকার আমায় গ্রাশ করে নিলো। আমি নামবো একদম শেষ ষ্টেশনে, তাই ভাবলাম একটা ঘুম দিয়ে নেই ষ্টেশনে পৌছাতে প্রায় শেষ রাত হবে। ঘুমিয়ে গেছি হঠাৎ …………….
একটা ঝাকুনি দিয়ে ট্রেন থেমে গেলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা মেয়ের আবছা মত দেখলাম ট্রেনে উঠে আসলো এবং ট্রেনটি আবার চলতে আরম্ভ করলো(আবছা দেখার কারন চারদিকে অন্ধকার ছিলো)। যাহোক আমিতো ভয় পেয়ে গেছিলাম না যানি আবার ট্রেনে ডাকাত পড়েছে আবার। ইদানীং এদিকে নাকি খুব ডাকাতি হচ্ছে। যাক ট্রেন আবার চালু হওয়ায় হাফ ছেড়ে বাচলাম। এতসব ভাবতে ভাবতে আমার পাশের মেয়েটার দিকে তাকানোর সুযোগই পাইনি। সুযোগ থাকলেও কিছুই করার নেই চারদিকে যে অন্ধকার। যাক আমি লজ্জায় গুটিয়ে গেলাম। লজ্জা পাওয়ার কারন ও ছিলো একটি মেয়ে আর আমিই শুধু একটা কামরায় তাও অন্ধকার এর মধ্যে। যাহোক নিজেকে সহজ করার জন্য পকেট থেকে মোবাইল টা বের করলাম। এবং উদ্দেশ্যহীন টিপাটিপি আরম্ভ করলাম। যাহোক অভাগা যেখানে যায় নদীর পানিও শুকিয়ে যায়। কোন জানান দেওয়া ছাড়াই মোববাইলটা বন্ধ হয়ে গেলো। ভাবলাম চার্জ শেষ। কিন্তু বাসা থেকেতো ফুল চার্জ দিয়ে বের হইছি। যাক মোববাইলটা আবার পকেটে রেখে দিলাম। কামরায় আবার অন্ধকার নেমে এল। মেয়েটাইই প্রথম নিরবতা ভাংলো। বলে উঠলো আমি শ্রুতি…. আমি বলতে গেলাম আমি হাসান। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম আমার কন্ঠ অনেকটা কোলা ব্যাঙের মত হয়ে গেছে, বুঝলাম ভয়ে এমনটা হয়েছে। নিজেকে সহজ করার জন্য হাসলাম……। মেয়েটির কন্ঠ অনেক মিষ্টি… মেয়েটি আমার অবস্থা বুঝলো কিনা জানিনা তবে সে তার ব্যাগ থেকে একটা মোমবাতি বের করে জ্বালালো। আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম প্রচন্ড বাতাস থাকা শর্তেও মোমবাতিটা দিব্যি জ্বলছে। যাক এবার মেয়েটার চেহারার দিকে এবার তাকালাম। অতটা ফর্সা না, গোল মুখ চিকন নাক…..আর বর্ননা দিতে পারবোনা। এককথায় বলবো মায়াবী একটা চেহারা। দেখলেই ভালোলাগে। আস্তে আস্তে কথায় কথায় পরিস্থিতি সহজ হয়ে এলো। আমিও আমার সম্বন্ধে বললাম সে ও তার সম্বন্ধে বললো। একটা জিনিস দেখলাম ওর শরীল থেকে কেমন যেনো অদ্ভুত এক সুগন্ধি বের হচ্ছে।সুগন্ধিটা কেমন যেনো নেশা ধরানো। ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারবোনা। ঘুম ভাঙলো শেষ রাতের দিকে। জেগে দেখি কামরা খালি….. শ্রুতির জায়গায় পড়ে আছে তার জ্বালানো মোমবাতির শেষ অংশ। ট্রেনও ষ্টেশনে পৌছে গেছে। ওর নাম্বারটাতো নেওয়া হয়নি। ইশশ…. ওর বাড়ির এড্রেসটাওতো নিলামনা। টিকিট চ্যাকার কে জিঞ্জেস করলাম এই কামরায় যে মেয়েটি আমার সাথে ছিলো সে কোথায়? ও বললো এখানে তো কেউই ছিলো না। রাতে কয়েকবার আমি চ্যাক করেছি দেখেছি আপনি একা একা কথা বলছেন আমি ভাবলাম আপনি বুঝি ফোনে কথা বলছেন। আমি তো থ….. আমার ফোনতো সেই শ্রুতি উঠার পরই বন্ধ হয়ে গেছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে অন করলাম এখনো অর্ধেক চার্জ। ভেবে পেলামনা এসব কি হল আমার সাথে??? আমি কি তবে এসব স্বপ্নে দেখেছি??? স্বপ্ন যদি হয় তবে ওর জ্বালানো মোমবাতির শেষ অংশাবশেষ যে এখনো আমার হাতে। এটা কিভাবে সম্ভব? এগুলো ভাবতে ভাবতেই ট্রেন থেকে নেমে বাড়ির পথ ধরলাম। বাড়িতে পৌছেই খাওয়া দাওয়া করে এক ঘুম দিলাম। ঘুমের মাঝেই স্বপ্নে দেখলাম শ্রুতিকে। ও হাসছে আর ওর মায়াভরা মুখ আমায় যেনো অপার্থিব এক আনন্দে ভরিয়ে দিচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে সারাদিন ওর কথাই ভাবলাম। আমি কি ওর প্রেমে পড়েছি??? প্রশ্নটা বারবার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। আর বাস্তবে কি ওর কোন অস্তিত্ব আছে??? যাহোক বাড়িতে যে কাজে আসা আমার জন্য মেয়ে দেখতে যাবে বাবা আর বোন সাথে আমাকেও নিবে। যাহোক কেন যেনো আমার মন সায় দিচ্ছিলোনা। কারন আমার মাথায় ঘুরেফিরে শ্রুতির চিন্তাই আসছে। যাহোক সবার জোরাজুরিতে মেয়ে দেখতে চললাম। বাবা আর বোনের মেয়ে পছন্দ হয়েছে এবার আমার দেখার পালা। মেয়ের দিকে তাকিয়েই আমার চোখ কপালে উঠার অবস্থা। এ যে শ্রুতি …….. আমার সারা শরীলে এক আনন্দবন্যা বয়ে গেলো। কিন্তু মেয়েটিযে নির্ভীকারভাবে বসে আছে, যেনো আমাকে আগে কখনোই দেখেনি। যাক বোনকে বলে কয়ে মেয়েটির সাথে একা কথা বলার ব্যাবস্থা করলাম। ওর নাম বলল স্মৃতি। ওকে বললাম আমাকে আগে কখনো দেখেছে কিনা। সে মাথা নেড়ে বলল না। আমি কথাটাকে একটু ঘুরিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম আমি বোধহয় তোমাকে ট্রেনে দেখেছি। ও বললো আমিতো কখনো ট্রেনেই উঠিনি। আরও কিছু ওকে বলতে গিয়েও থেমে গেলাম কারন আবার যদি অন্যকিছু মনে করে? আমি আর কিছুই বললামনা। আমি যদি ওকে কল্পনাই করবো তাহলেতো আগে ওকে দেখলে হত। আমিতো আজকের আগে কখনোই দেখিনি। তাহলে ট্রেনে কে আসলো আমার সাথে। আমার কল্পনাশক্তি কি এতই প্রবল যে আমি ওকে আগেই কল্পনার চোখ দিয়ে দেখে পেলেছি। নাকি এটা অলৌকিক???
কোন উত্তরই আমার জানা নেই।
তারপর স্মৃতির সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো। এখন অনেক রাত জানালা দিয়ে বাতাস হুঁহুঁ বাতাস বইছে স্মৃতি ঘুমিয়ে আছে। যেনো আমার কল্পনার শ্রুতির আরেকটা কপি।এটা অলৌকিক নয় কি??? আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুমাতে যাই……… আমার কল্পনার শ্রুতিরুপি বাস্তব স্মৃতির পাশে।