ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার

📚 ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার :

📑1757 সালের পলাশির যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলায় ইংরেজ আধিপত্য শুরু হয় । 1764 সালে বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজদের জয় সেই আধিপত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে । শুধু তাই নয় মেজর হেক্টর মুনরাের নেতৃত্বাধীন অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে বাংলা , অবধ ও মুঘল সম্রাটের সম্মিলিত বাহিনীর পরাজয় ইংরেজদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণ করে ।

📑 1761 সালে তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে মারাঠা কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে । তার জায়গায় ক্ষমতার পাঁচটি কেন্দ্র তৈরি হয় — পুনেতে পেশােয়া , গােয়ালিয়রে সিন্ধিয়া , নাগপুরে ভােঁসলে এবং ইন্দোরে হােলকার । পেশােয়া পদে উত্তরাধিকারী নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ বিবাদের সুবিধা নিয়ে ইংরেজরা 1775 – 1782 সাল পর্যন্ত যুদ্ধ চালায় । এই যুদ্ধ অমীমাংসিত থাকে এবং 1782 সালে সলবাইয়ের সন্ধির মাধ্যমে ব্রিটিশরা সামান্যই লাভবান হয় ।

📑 মহীশূরে প্রথমে হায়দর আলি এবং হায়দারের মৃত্যুর পর টিপু সুলতানের সঙ্গে ইংরেজদের ক্রমাগত যুদ্ধ চলতে থাকে । প্রথমে হায়দর ও পরে ইংরেজরা জয়ী হয় ।1784 সালে টিপুর সঙ্গে ইংরেজদের চুক্তিও হয় । কিন্তু কর্নওয়ালিস মারাঠা ও নিজামকে পৃথক রেখে টিপুকে পরাজিত করতে সক্ষম হন — শ্রীরঙ্গপত্তনমের চুক্তিতে টিপু প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিতে এবং নিজের সাম্রাজ্যের অর্ধেক ছেড়ে দিতে বাধ্য হন । 1799 সালে টিপু পরাজিত ও নিহত হন । ওয়েলেসলি মহীশূর সেখানকার পূর্বতন ওয়াদেয়ার বংশের হাতে তুলে দেন এবং অধীনতামূলক মিত্রতার আওতায় আনেন ।

📑 এর আগেই ওয়েলেসলি ‘ অধীনতামূলক মিত্রতা ’ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন এবং নিজাম ও অবধের নবাবকে এই ব্যবস্থা মানতে বাধ্য করেছিলেন । ওয়েলেসলি কৰ্ণাটক , তাঞ্জোর ও সুরাটও অধিগ্রহণ করেন । মারাঠাদের যুদ্ধে পরাজিত করে শাহ আলমকে সিন্ধিয়ার ছত্রচ্ছায়ার বদলে ব্রিটিশ ছত্রচ্ছায়ায় নিয়ে আসা হয় । হােলকার ছাড়া অন্য মারাঠা নেতারা নিজেদের রাজ্যের উল্লেখযােগ্য অংশ বিসর্জন দিয়ে শান্তি স্থাপনে বাধ্য হন । পরে 1818 খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় অ্যাংলাে – মারাঠা যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে মারাঠা শক্তির পতন ঘটে , পেশােয়া ব্রিটিশ পেনশনভােগীতে পরিণত হন । 1818 সালেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে , মুঘলদের স্থানে মারাঠারা নয় , ব্রিটিশরাই ভারতব্যাপী সাম্রাজ্য গড়বে । এরপরে বৃহৎ ভারতীয় শক্তিগুলির মধ্যে একমাত্র শিখরাই অবশিষ্ট থাকে ।

📑 এরপরে রাজপুত রাজ্যগুলি ‘ অধীনতামূলক মিত্রতা ‘ স্বীকার করে । ব্রিটিশ কর্তৃত্ব আসাম , বার্মা ও সিন্ধে বিস্তৃত হয় , যদিও আফগানিস্তানে ব্রিটিশদের চূড়ান্ত পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয় ।

📑 পাঞ্জাবে শিখদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন সুকারচেরিয়া মিস্‌লের নেতা রণজিৎ সিং । মারাঠাদের পরাজয়ের পর 1809 সালে রণজিৎ সিং ব্রিটিশদের সঙ্গে অমৃতসরের বন্ধুত্বমূলক চুক্তি স্বাক্ষর করেন । এতে উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে আগ্রাসী না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় । রণজিৎ সিং পাঞ্জাব ছাড়াও মুলতান , কাশ্মীর , কাংড়া ও পেশােয়ার দখল করেন । তাঁর মৃত্যুর ( 1839 খ্রিষ্টাব্দ ) পর পাঞ্জাবে অনৈক্য দেখা দেয় , প্রথম অ্যাংলাে – শিখ যুদ্ধে ( 1845 সাল ) পরাজয়ের ফলে পাঞ্জাবের সঙ্গে লাহাের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় ( 1846 সালে ) । রণজিৎ সিং – এর নাবালক পুত্র দলীপ সিং ইংরেজ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও শিখ সৈন্যবাহিনী বিদ্রোহ করে । দ্বিতীয় শিখ যুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ের পর শিখরা পরাজিত হয় ( 1848-49 সাল ) ।

লর্ড ডালহৌসি পাঞ্জাব ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন ।

📑 এছাড়া ডালহৌসি ‘ স্বত্ববিলােপ ’ নীতি প্রয়ােগ করে ( রাজার নিজ পুত্র না থাকলে দত্তক পুত্র সিংহাসন পাবে না ) সাতারা ( 1848 সাল ) , নাগপুর ( 1854 সাল ) ও ঝাঁসি ( 1854 সাল ) দখল করেন । অপশাসনের অজুহাতে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহকে পদচ্যুত করে অবধ দখল করা হয় 1856 সালে ।