“⏹ বয়ঃসন্ধিক্ষণের চাহিদা :
⏺ যৌন চাহিদা : বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর/কিশোরীদের মধ্যে যৌন কৌতুহল দেখা যায়। এটা প্রাকৃতিগত ঘটনা। অসুবিধা হল – নিজেরাও যেমন এ সম্পর্কে সঠিকভাবে সচেতন নয়, তেমনি পিতামাতাও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। যৌন শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের দেশের বিদ্যালয় গুলিতেও এই বয়সের কিশোর/কিশোরীদের বোঝাবার কোনো ব্যবস্থা নেই । যার ফলে তারা অস্বাভাবিকভাবে প্রকৃতিগত পাওয়া যৌন চাহিদাকে পরিতৃপ্ত করার চেষ্টা করে। দেখা দেয় যৌন সমস্যা। এর একমাত্র সমাধান হল —পিতামাতা এবং বিদ্যালয়ের কর্তব্য বিভিন্ন কৌশল এবং যৌন শিক্ষার মাধ্যমে সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের যৌন সচেতন করে তোলা।
⏺ নিরাপত্তার চাহিদা :
যৌন চাহিদা প্রকৃতিগত হলেও যেমন বিশেষ বয়সে দেখা যায়, নিরাপত্তার চাহিদা কিন্তু জন্মাবার পর থেকে দেখা যায়। শৈশব থেকে আমৃত্যু আমাদের এই চাহিদা থাকে। তবে বিকাশের কোনো কোনো স্তরে এটা অধিক দেখা যায়। বয়ঃসন্ধিক্ষন হল সেইরকম একটা স্তর। দৈহিক, মানসিক, সামাজিক সব দিকেই কিশোর/কিশোরীদের মধ্যে এমন এক পরিবর্তন আসে যার সঙ্গে তারা সহসা অভিযোজন করে উঠতে পারে না, ফলে দেখা যায় সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে পিতামাতা থেকে শুরু করে শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সব ধরনের নিরাপত্তার (অর্থাৎ দৈহিক, মানসিক, সামাজিক) ব্যবস্থা করবেন।
⏺ আত্মসক্রিয়তার চাহিদা :
সমস্ত বয়সেই সক্রিয়তার চাহিদা থাকে। অনেকের মধ্যে সক্রিয়তার প্রকাশ যে দেখা যায় না, তার কারণ হল তাকে সক্রিয় হতে উৎসাহ দেওয়া হয় না বা সে রকম সুযোগ বা পরিবেশ তার নেই। বয়ঃসন্ধিক্ষণে বিভিন্ন দিকে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে সক্রিয়তার চাহিদা বৃদ্ধি ঘটে। এর সঙ্গে সে নিজেকে দেখাতে চাই যে, অনেক কিছু করার ক্ষমতা তার আছে। বলতে চাই আমাকে কাজ দাও আমি কাজ করে তোমাদের দেখে দেব। আমাকে আগের মত অবহেলা করো না। তার এই বক্তব্য (অনেক সময় ব্যক্ত, অনেক সময় অব্যক্ত) কিন্তু বড়রা অধিকাংশ সময় গুরুত্ব দেয় না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে পিতা-মাতাগণ শিক্ষার্থীর পক্ষে যা সম্ভব সেই রকম কাজ তাদের দেবেন। তার উপর নির্ভর করতে হবে। তাকে স্বাধীনতা দেবেন। প্রয়োজনমতো তাকে সাহায্য করতে হবে। একইভাবে শিক্ষকও – শিক্ষার্থীর ক্ষমতা, আগ্রহ, রুচি অনুযায়ী তাকে কাজে নিযুক্ত করবেন, যাতে তার সাফল্যের সম্ভাবনা থাকে। একইভাবে কাজে সফলতা অর্জনে তাকে সাহায্য করতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে।
⏺ আত্মপ্রতিষ্ঠার চাহিদা :
আত্মসক্রিয়তার চাহিদা ভালোভাবে পড়তে হবে।
⏺ নৈতিক চাহিদা :
কিশোর/কিশোরীদের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় বোধ, ভালো-মন্দ বিচার বোধ তীব্র ভাবে দেখা দেয়। ওপরের বক্তব্যের ভালো-মন্দ তারা নিজেদের বিচারবুদ্ধির মাপকাঠিতে বিচার করে গ্রহণ করে। সাধারণত কোন অন্যায় দেখলে তারা প্রতিবাদ করে। অনেক ক্ষেত্রে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তাদের ক্ষতির কারণ হলেও তারা পালিয়ে আসে না। এই আচরণ তাদের অনেক সমস্যায় ফেলে দেয়। বাস্তবে তারা দেখে যারা অন্যায় করছে তারা দিব্যি আছে। অন্যায় কারীদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু প্রতিবাদ করছে না। শুধু তাই নয় ওই অন্যায়কারীদের করুণা পাওয়ার জন্য সকলেই ছুটোছুটি করছে। সমাজের এই আচরণ তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে যা সমস্যার রূপ নেয়।
⏺ সামাজিক চাহিদা :
আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, বয়ঃসন্ধিক্ষণের দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক চাহিদার মতো সামাজিক চাহিদারও ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। সমাজজীবনের প্রতিটি দিকেই সে প্রবেশ করতে চায়, বুঝতে চায়, এবং তার মতো সে সক্রিয় হতে চায়। কিন্তু বয়স্কদের আচরণ তার নিকট অদ্ভুত বলে মনে হয়। কোনো সময় তাকে হয়তো শুনতে হয়, “”তোকে পাকামি করতে হবে না, বড়দের ব্যাপারে তোকে নাক গলাতে হবে না।”” আবার অন্য সময় একই ব্যক্তির মুখে হয়তো সে শোনে, “”ও বড় হয়েছে ওকে তো এবার সামাজিক বিভিন্ন ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিতে হবে।”” এই অদ্ভুত অবস্থা তার মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে, ফলে দেখা দেয় সমস্যা। এর সমাধান হল একদিকে যেমন ক্লাব, সভা, সমিতি ইত্যাদিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া, অন্যদিকে পারিবারিক বা সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে ছোটখাটো সমস্যা সম্পর্কে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা, সমাধানের বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রস্তাব রাখা ইত্যাদি।
উপরিউক্ত চাহিদাগুলি ছাড়াও কিশোর-কিশোরীদের আরও অনেক চাহিদার উল্লেখ করা যায়। যেমন স্বাধীনতার চাহিদা, আত্মস্বীকৃতির চাহিদা, আত্মনির্ভরতার চাহিদা ইত্যাদি। এবং এই সমস্যা সমাধানে খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অভিভাবক, শিক্ষক প্রমুখ সকলকেই নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে হবে।