প্রশ্ন : বৈষম্যহীন সমাজের জন্য সংরক্ষণ নীতি সম্পর্কে আলোচনা করুন । অথবা , ভারতীয় সংবিধানে দুর্বল শ্রেণির সংরক্ষণের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা উল্লেখ করুন ।
অথবা , তপশিলি জাতি , উপজাতি ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় , সংখ্যালঘু এবং নারীদের জন্য ভারতীয় সংবিধানে যে সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তা লিখুন ।
উত্তর : ভারতীয় সমাজব্যবস্থার মধ্যে একটি দুষ্টক্ষত হল জাতি , ধর্ম , বর্ণ , লিঙ্গের ভিত্তিতে জনসাধারণের মধ্যে বিভেদ । সমাজে উচ্চবর্ণের জনগণ নিম্নবর্ণ , সংখ্যালঘু এবং নারীদের যুগ যুগ ধরে শিক্ষাসহ অন্যান্য সাধারণ সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে । এই বঙনা ক্রমশ পুঞ্জীভূত হয়েছে যার ফলে জনগণের একটা বড়ো অংশ এই বঞ্চিত ভারতবাসীর মধ্যে নিরক্ষরতা , অনাবশ্যক ধর্মভীরুতা এবং নানা কুসংস্কারের জন্ম দিয়েছে ।
স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনাকালে সংবিধান প্রণেতাগণ সমাজের এই দুষ্টক্ষতকে সারিয়ে তোলার জন্য এবং সংবিধানের সম অধিকারের নীতিকে কার্যকরী করার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেন । সমাজের বঞ্চিত জনগণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল তপশিলি জাতি , উপজাতি , পশ্চাৎপদ কমিউনিটি , সংখ্যালঘু এবং নারীকুল । এদের জন্যই প্রয়োজন হল সংরক্ষণ । এই সংরক্ষণের ব্যবস্থা সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় ব্যক্ত হয়েছে যা নিম্নে উল্লেখ করা হল ।
তপশিলি জাতি , উপজাতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়:
(1) মৌলিক অধিকারের 15 নং ধারায় বলা হয়েছে ধর্ম , জাতি , বর্ণ , জন্মস্থান , নারী পুরুষের মধ্যে কোনো সুযোগসুবিধা সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যতিক্রম করা হবে না । সামাজিক কিংবা শিক্ষা জীবনে পশ্চাৎপদদের জন্য বিশেষত তপশিলি বর্ণ এবং উপজাতিদের জন্য প্রয়োজনবোধে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যসরকার আইন পাস করতে পারবেন ।
(2) 16 (4) নং ধারায় বলা হয়েছে যে , সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে তপশিলি জাতি , উপজাতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জন্য পদ সংরক্ষণের অধিকার দেওয়া হল ।
(3) 17 নং ধারায় সমস্ত ধরনের অস্পৃশ্যতাকে বাতিল করা হল এবং যে – কোনো ধরনের অস্পৃশ্যতাকে কার্যকর করার ব্যবস্থা আইনের দ্বারা দণ্ডনীয় হবে ।
(4) 46 নং ধারায় বলা হয়েছে যে , রাষ্ট্র ভারতের দুর্বলতর শ্রেণির বিশেষত তপশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণির শিক্ষা ও আর্থিক স্বার্থে যাবতীয় উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করবে ও তাদের সকল প্রকার সামাজিক অবিচার ও শোষণ থেকে রক্ষা করবে ।
(5) 275 (1) নং ধারায় বলা হয়েছে SC , ST- দের কল্যাণের জন্য এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির উন্নয়নের জন্য আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা JEST করতে হবে ।
(6) 330 নং ধারায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে SC , ST এবং OBC- দের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে আসন সংরক্ষিত থাকবে ।
(7) 340 নং ধারায় বলা হয়েছে রাষ্ট্র সামাজিক এবং শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়া জনগণের অবস্থা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারবে ।
সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ : মৌলিক অধিকার প্রসঙ্গে সংবিধানের 30 নং ধারায় সংখ্যালঘুদের পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অধিকার স্বীকৃত বলে উল্লেখ করা হয়েছে । 30 (1) নং ধারায় বলা হয়েছে , সমস্ত ধর্মগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের নিজেদের ইচ্ছামতো বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার অধিকার থাকবে । 30 রং
(2) নং অংশে বলা হয়েছে , ধর্ম ও ভাষার দিক দিয়ে সংখ্যালঘু এই অজুহাতে সাহায্যদানে রাষ্ট্র কোনো বৈষম্য করবে না ।
সংবিধানের 29(1) নং ধারায় বলা হয়েছে , ভারতের যে – কোনো স্থানে বসবাসকারী নাগরিকদের কোনো অংশের যদি পৃথক ভাষা বা নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে তাহলে তাদের ওই সংস্কৃতি – সংরক্ষণের অধিকার থাকবে ।
29(2) নং ধারায় বলা হয়েছে যে , সরকার পরিচালিত বা সাহায্যপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভরতির ক্ষেত্রে জাতি , ধর্ম সম্প্রদায় , ভাষা বা যে – কোনো একটি বিষয়ের অজুহাতে কোনো ভারতীয় নাগরিককে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না ।
350(খ) নং ধারায় বলা হয়েছে যে , ভাষাগত সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন বিষয়ের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারটি অনুসন্ধান করার জন্য বিশেষ অফিসার নিয়োগ করতে হবে ।
নারীদের শিক্ষা : নারীদের শিক্ষার সংরক্ষণের প্রশ্নে সংবিধানে তেমন কোনো ধারা এখনও পর্যন্ত নেই । তবে সংবিধানের 15(3) নং ধারায় বলা হয়েছে নারী এবং শিশুদের শিক্ষার জন্য সরকার বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে ।
সমীক্ষায় দেখা গেছে তপশিলিভুক্ত এমন অনেক পরিবার যারা বংশানুক্রমে এই সুবিধা গ্রহণ করে বিত্তশালী হয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে তাদের কোনোরকম সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই । অন্যদিকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেখানে অধিকাংশই তপশিলিভুক্ত পরিবার , তাদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংরক্ষণের যে সুযোগ আছে সে সম্পর্কে তারা একেবারেই অচেতন । ফলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা যে তিমিরে ছিল সেখানেই আছে । এই ধরনের পরিস্থিতির ফলে তপশিলিভুক্ত পরিবারগুলির মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করছে যা আদৌ বাঞ্ছিত নয় ।