প্রথাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে বিদ্যালয়ের ভূমিকা লিখুন ।
উত্তর :– শিক্ষাবিদ ক্যাটার গুড ( Cater Good ) বিদ্যালয়ের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন , বিদ্যালয় হল নির্দিষ্ট স্তরের একদল সংগঠিত ছাত্রসমবায় , যারা নির্দিষ্ট একটি বা একগুচ্ছ গৃহে নির্বাচিত কয়েকটি বিষয় অধ্যয়ন করে এবং এক বা একাধিক শিক্ষক , অধ্যক্ষ , তত্ত্বাবধায়ক ও অন্যান্য শিক্ষাকর্মীদের দ্বারা নির্দেশনা গ্রহণ করে থাকে ।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক দায়িত্ব : বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক দায়িত্বগুলির মধ্যে
( 1 ) বৌদ্ধিক বিকাশ : বিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা দায়িত্ব হল শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়তা করা । বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নানা ধরনের নিত্যনতুন আবিষ্কারের ফলে জ্ঞানের জগতে অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে । শিক্ষার্থী সবসময় তার পরিবার থেকে এইসব বিষয়ে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে না । এই দায়িত্ব পালন করতে এগিয়ে আসে বিদ্যালয় । বিদ্যালয় একদিকে যেমন শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান অর্জনে সহায়তার মাধ্যমে তার বৌদ্ধিক বিকাশে সাহায্য করে , সাহায্য করে । অন্যদিকে সে যাতে নিজের মধ্যে চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটাতে পারে , সে বিষয়েও তাকে ।
( 2 ) ব্যক্তিসত্তার বিকাশ : মানবশিশু যেসব সম্ভাবনা নিয়ে পৃথিবীতে আসে , সেইসব সম্ভাবনা বিকাশের মধ্যে দিয়ে শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে সাহায্য করা বিদ্যালয়ের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ । প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন পরিবার থেকে ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা , সামর্থ্য , রুচি ও আগ্রহ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসে । বিদ্যালয়ের পরিবেশ শিক্ষার্থীর বিভিন্ন চাহিদার পরিতৃপ্তি করে । এই বিকাশগুলি ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়তা করে । ঘটিয়ে তাদের শারীরিক , মানসিক , সামাজিক , প্রাক্ষোভিক ও নৈতিক বিকাশে সহায়তা
( 3 ) বৃত্তিমূলক নির্দেশনা : বিদ্যালয়ের একটি প্রধান কাজ হল শিক্ষার্থীকে বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দান করা । শিক্ষার্থীকে বৃত্তির জগতের সঙ্গে পরিচিত করা বৃত্তি নির্বাচনে সাহায্য করা এবং তার প্রবণতা ও আগ্রহ অনুযায়ী বৃত্তিপরিকল্পনা করা হল বিদ্যালয়ের বিশেষ দায়িত্ব ।
( 4 ) শিক্ষামূলক নির্দেশনা : শিক্ষামূলক নির্দেশনা দান হল বিদ্যালয়ের আর একটি গুরুত্বপুর্ণ কাজ । শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য শিক্ষার্থীকে জানানো , তার মেধা , আগ্রহ ও প্রবণতার বিদ্যালয়কেই করতে হয় । ভিত্তিতে শিক্ষাপরিকল্পনা করা , শিক্ষাসংক্রান্ত সমস্যাসমাধানে সাহায্য করা প্রভৃতি
( 5 ) মূল্যায়ন বিদ্যালয়ের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল শিক্ষার্থীর সামগ্রিক মূল্যায়ন বিদ্যালয়ের কাজ । করা । শিক্ষার্থী পড়াশোনার ক্ষেত্রে কতখানি অগ্রসর হয়েছে এবং পাশাপাশি তার চারিত্রিক গুণাবলি ও নৈতিক মূল্যবোধ কতখানি উন্নত হয়েছে তার মূল্যায়ন করাও বিদ্যালয়ের দায়িত্ব বা কার্যাবলি
বিদ্যালয়ের সমাজকেন্দ্রিক দায়িত্ব : বিদ্যালয়ের সমাজকেন্দ্রিক দায়িত্বগুলির মধ্যে —
( 1 ) সামাজিকীকরণ : সমাজে বসবাসকারী মানুষকে সমাজের রীতিনীতি ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হয় । বিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ওইসব সামাজিক রীতিনীতি , আচার আচরণ , বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত প্রথা ও মূল্যবোধ সম্পর্কে অবহিত করে ।
( 2 ) ঐতিহ্যের সংরক্ষণ : শিক্ষার সাহায্যে পূর্বার্জিত ঐতিহ্যকে আমরা সংরক্ষণ করি । পাঠক্রম , পাঠ্যসূচি ও নির্দিষ্ট আচার – আচরণের মধ্যে দিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঐতিহ্য সংরক্ষিত হয় ।
( 3 ) ঐতিহ্যের সঞ্চালন : বিদ্যালয় কেবলমাত্র ঐতিহ্যকে সংরক্ষণই করে না । ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে তা সঞ্চালনের ব্যবস্থাও করে । পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির মধ্যে দিয়েই ঐতিহ্য সঞ্চালিত হয় ।
( 4 ) ঐতিহ্যের উন্নয়ন : বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন ঘটায় । অতীতের মূল্যহীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বর্তমান সময়োপযোগী করতে তার উন্নয়ন করা প্রয়োজন । এই উন্নয়ন আমাদের সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায় । বিদ্যালয় সামাজিক ঐতিহ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(5 ) গণতান্ত্রিক বোধের বিকাশ : ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ । বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা এবং তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে তোলা বিদ্যালয়ের অন্যতম সমাজকেন্দ্রিক দায়িত্ব । )
(6) পরিবার , বিদ্যালয় ও কমিউনিটির সম্পর্ক : পরিবার , বিদ্যালয় ও কমিউনিটির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে এই সম্পর্ককে উন্নত করতে শিক্ষার্থীদের যথাযথ ভূমিকা পালনে বিদ্যালয়কে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে ।