প্রশ্ন 31) : শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান উপাদান কী এবং কেন প্রধান ?
উত্তর :- আধুনিক বা ব্যাপক অর্থে শিক্ষার প্রয়াস হল শিক্ষার্থীর মধ্যে সহজাত গুণাবলির বিকাশসাধন । শিশুর গুণাবলি নির্দিষ্ট করে সঠিক পথে সেগুলির বিকাশ ঘটিয়ে প্রত্যাশিত আচরণের উন্মেষ ঘটানো বা আচরণ পরিবর্তন করাই শিক্ষার উদ্দেশ্য । অর্থাৎ শিক্ষার্থীই হল শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান উপাদান । শিক্ষার্থী জৈব – মানসিক এক সত্তা । বৃদ্ধি , প্রবণতা , আগ্রহ , প্রেষণার অধিকারী সে । শিক্ষা অর্জনের জন্য যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন শিশু তার অধিকারী । এ ছাড়া নমনীয়তা থাকার ফলে শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত নানাবিধ আচরণ আয়ত্ত করতে সমর্থ হয় । শিক্ষার্থী তার সক্রিয়তা এবং অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রতিনিয়ত পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন করার চেষ্টা করে যার ফল হল শিক্ষা । এককথায় বলা যায় শিক্ষার্থী ছাড়া শিক্ষা অর্থহীন ।
প্রশ্ন 32) : পাঠক্রম কী ?
উত্তর :- শিক্ষাকার্যক্রমে কাকে শিক্ষা দেওয়া হবে , কে শিক্ষা দেবেন , এর পরের প্রশ্ন হল কী শিক্ষা দেওয়া হবে । এই প্রশ্নের উত্তরটি শিক্ষার যে উপাদানটি দেয় তাকেই বলা হয় পাঠক্রম । প্রাচীনকালে অর্থাৎ শিক্ষা যখন সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হত তখন শিক্ষক – নির্দেশিত শিক্ষার্থীর করণীয় কাজকেই পাঠক্রম বলা হত । শিক্ষক যা বলতেন শিক্ষার্থী তাই করত । শিক্ষক মনে করতেন কিছু কিছু জ্ঞান শিক্ষার্থীদের জীবনে খুবই প্রয়োজন । সেই জ্ঞানের সমষ্টিকেই পাঠক্রম বলা হত । উক্ত জ্ঞান অর্জনে শিক্ষার্থীর সামর্থ্য এবং আগ্রহ আছে কি না তা বিচার করা হত না । এই জ্ঞান পরিবর্তনশীল কি না তাও বিচার করা হত না । পাঠক্রম তখন খুবই সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হত । তবে পাঠক্রমের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন ছিল অর্থাৎ পাঠক্রম যে শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সে সম্পর্কে কোনো সংশয় ছিল না।
প্রশ্ন 33) : শিক্ষণে শিক্ষকের ভূমিকা কী ?
উত্তর :- শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । পূর্বে শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে দ্বিমুখী প্রক্রিয়া ( শিক্ষক শিক্ষার্থী ) বলে বিবেচনা করা হত । আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানে শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে বহুমুখী বলে উল্লেখ করা হয় । শিক্ষক , শিক্ষার্থী , পাঠক্রম , শিক্ষণ কৌশল ইত্যাদি সবই শিক্ষণ প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত । দ্বিমুখী বা বহুমুখী যাই হোক না কেন শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের ভূমিকা সর্বক্ষেত্রেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । শিক্ষক শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন । শিক্ষকের দক্ষতার উপরেই শিখন প্রক্রিয়ার সফলতা নির্ভর করে । শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের ভূমিকা প্রধানত তিনটি — শিখন সহায়ক ( Facilitator ) , সংযোগকারী ( Communicator ) এবং মাধ্যম ( Mediator ) ।
প্রশ্ন 34 :ফিডব্যাক বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর:- উত্তম সংযোগরক্ষার জন্য শিক্ষক পাঠদান কৌশল ব্যবহারে নমনীয়তা অবলম্বন করেন । কখনও বক্তব্য রাখেন , কখনও আলোচনা করেন , কখনও বা উপকরণ প্রদর্শন করেন । সংযোগরক্ষার ক্ষেত্রে তথ্য প্রেরণাকারী এবং তথ্য গ্রহণকারী উভয়েই সক্রিয় হলে সংযোগ একদিকে যেমন শক্তিশালী হয় অন্যদিকে তেমনি স্থায়ী হয় । শিক্ষক ( প্রেরণকারী ) তাই শিক্ষার্থীদের ( গ্রহণকারী ) সক্রিয় করে তুলতে প্রশ্ন করেন । এ ছাড়া গ্রহণকারী যখন জানতে পারে , সে কতটুকু গ্রহণে সক্ষম হয়েছে তাহলে সে তথ্য গ্রহণে আরও সক্রিয় হয় এবং সংযোগরক্ষার কাজটি আরও সার্থক হয় । এজন্য শিক্ষক মাঝে মাঝেই শিক্ষার্থীদের অবহিত করেন তারা কী পরিমাণ তথ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে । একেই আমরা ফিডব্যাক ( Feedback ) বলি ।
প্রশ্ন 35) : শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা কাকে বলে ?
উত্তর :- যে শিক্ষাব্যবস্থায়—
( ক ) শিক্ষার কেন্দ্রে শিশু অবস্থান করে ;
( খ ) শিক্ষার্থী শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলি স্বাধীনভাবে গ্রহণ করতে পারে
( গ ) বহুমুখী পরিবেশে অভিযোজনের ক্ষমতা লাভ করতে পারে ;
( ঘ ) শারীরিক , মানসিক , সামাজিক , প্রাক্ষোভিক , নৈতিক ও নান্দনিক গুণাবলি অর্জন করতে পারে ; —তাকে বলা হয় শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা ।
প্রশ্ন 36) : আচরণবাদীদের মত অনুযায়ী শিখনের ধারণাটি কী ?
উত্তর :- আচরণবাদীরা ব্যক্তির আচরণকেই মনস্তত্ত্বের মূল ভিত্তি বলে মনে করেন । তাই তাদের মতে , শিখন হল অভিজ্ঞতার ফলে আচরণের অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিবর্তন ( Relatively permanent change is behaviour ) । শিখন সম্পর্কে তাদের ধারণাকে একটি মডেলে ব্যক্ত করা যায় ।
S – NM – R
যেখানে , S = ইন্দ্রিয়জাত অভিজ্ঞতা ( Sensory Experience )
NM = স্নায়ুর কার্যকলাপ ( Neuro Mechanism )
R = আচরণের পরিবর্তন ( Change in Behaviour ) ।
প্রশ্ন 37) : নির্মাণবাদীদের মতে শিখনের ধারণাটি লিখুন ।
উত্তর:- নির্মাণবাদী মনোবিদ পিয়াজেঁ মনে করেন শিশু তার পূর্ব অভিজ্ঞতার সাহায্যে জ্ঞান নির্মাণ করে । তাঁর মতে শিখন হল জ্ঞান নির্মাণের প্রক্রিয়া ( Learning is a process of Knowledge Construction Process ) । সমাজ – নির্মাণবাদী ভাইগটস্কি ( Vygotsky ) শিখনে সামাজিক দিকের উপর গুরুত্ব না দেওয়ায় পিয়াজেঁকে সমালোচনা করেন । তাঁর মতে শিশুর শিখনের ভিত্তি হল তার সমাজ – সংস্কৃতি , যেখানে সে একা থাকে না । সাংস্কৃতিক পরিবেশ শিশুর চিন্তাকে প্রভাবিত করে । তাই সমাজ নির্মাণবাদী ভাইগটস্কির শিখনের ধারণা হল — শিখন হল । জ্ঞান নির্মাণের সামাজিক প্রক্রিয়া ( Learning is a Social Process of Knowledge Construction ) ।
প্রশ্ন 38 : শিখন বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর:- ও শিখন হল এমন এক ধরনের বিকাশের প্রক্রিয়া যা —
( i ) ব্যক্তির আত্মসক্রিয়তা বাড়িয়ে তোলে ;
( ii ) আচরণের পরিবর্তন ঘটায় ;
( iii ) উদ্বোধক ও পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল ;
( iv ) প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার প্রভাবে সৃষ্টি হয় ;
( v ) অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় আচরণ করতে শেখায় ।
প্রশ্ন 39) : পরিণমন কাকে বলে ?
উত্তর : শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিকেই পরিণমন বলে । পরিণমন হল প্রাণীর মধ্যে সেইসব গুণগত আচরণের পরিবর্তন যার জন্য শিখনের প্রয়োজন হয় না । যেমন— বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুর পাকস্থলী বৃদ্ধি পায় এবং অনেক বেশি খাদ্য হজম করতে পারে । Baldwin বলেন , “ Maturation is an increase of competency and adaptibility ” অর্থাৎ উৎকর্ষতা এবং অভিযোজন ক্ষমতার বৃদ্ধিকেই পরিণমন বলে । মনোবিদ Kolesnick- এর মতে , জন্মগত সম্ভাবনাগুলি স্বাভাবিকভাবে প্রস্ফুটিত হওয়ার ফলে শিশুর আচরণের গুণগত এবং পরিমাণপত পরিবর্তনের প্রক্রিয়াই হল পরিণমন ।
প্রশ্ন 40) : স্কিমা কাকে বলে ?
উত্তর :- প্রজ্ঞামূলক শিখনের প্রথম একক স্কিমাটার ( যার বহুবচন হল স্কিমা ) সম্পর্কে পিয়াজেঁর ( 1975 ) বহু গবেষণা আছে । Ault ( 1977 ) -এর মতে , শিশুর অভিজ্ঞতাগুলি স্কিমা হিসেবে শিশুর মধ্যে সঞ্চিত থাকে , এইগুলি চিত্রাকারে বা ভাষার বাঁধনে একত্রীভূত থাকে না । স্কিমা হল কোনো কিছুর ধারণার একক ।
প্রশ্ন 41) : দক্ষতামূলক শিখন কাকে বলে ?
উত্তর :- ব্লুমের বক্তব্য অনুযায়ী ব্যক্তির তৃতীয় ধরনের শিখন হল দক্ষতা শিখন । এই ধরনের শিখনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল চলন এবং পেশিসংক্রান্ত কার্যাবলি । জ্ঞানমূলক এবং অনুভূতিমূলক শিখনের মতো দক্ষতা শিখনও অপর দুটি শিখনের সঙ্গে যুক্তভাবে কাজ করে । এই ধরনের শিখনের উদাহরণ হল সাইকেল চড়া , মোটর গাড়ি চালানো , তবলা বাজানো , বলে লাথি মারা , ব্যাট দিয়ে বলে আঘাত করা , টাইপ করা , কম্পিউটারে কাজ করা , স্কেচ অঙ্কন করা ইত্যাদি ।