পাঠক্রমে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে লিখুন

প্রশ্ন : পাঠক্রমে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে লিখুন ।

উত্তর : আমরা জানি যে বিদ্যালয় হল সমাজজীবনের ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি । আবার শিক্ষাব্যবস্থা অনেকাংশেই সমাজব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত । ফলে দেখা যাচ্ছে পাঠক্রম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আদর্শসম্পৃক্ত সেই কারণে পাঠক্রমের শিক্ষাতাত্ত্বিকতার সামাজিক ও সংস্কৃতির দিক সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন ।

পাঠক্রমে সামাজিক , সাংস্কৃতিক দর্শানুপাত – এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল শিক্ষার মাধ্যমে মূল্যবোধের বিকাশ । যথাযথ শিক্ষাই মূল্যবোধের বিকাশ ঘটায় এবং পাঠক্রমের ধারণাগুলি এর দ্বারাই পরিচালিত হয় । মূল্যবোধের যথার্থ বিকাশের মধ্য দিয়েই পাঠক্রম প্রণেতারা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব পালনে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তোলেন । যে – কোনো পাঠক্রমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল শিক্ষক শিক্ষার্থীকে কীভাবে শিখন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারেন এবং তা সম্ভব তখনই যখন উপলব্ধি করতে পারবেন যে শিশুটি তার চারপাশের পরিবেশকে কী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখে । শিশুর বিশ্বদর্শন নির্ভর করে । তার অভিজ্ঞতা এবং তার পারস্পরিক সামাজিক – সাংস্কৃতিক পরিবেশের উপর । এই বিষয়টি শিশুর সামাজিক প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভরশীল থাকায় শিশুর সামাজিক – সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তার মানসিক মেলবন্ধনও হয় শিক্ষার মাধ্যমে । তাই শিশুর পাঠ্যক্রমে তার সামাজিক – সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন ।

পাঠক্রমের সামাজিক – সাংস্কৃতিক দৃষ্টরূপের আলোচনার জন্য শিক্ষার লক্ষ্যগুলি সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন । ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল জাতিগঠন , যার কারণে ভারতবর্ষ দীর্ঘ দুইশত বছর ব্রিটিশ সরকারের অধীনে থেকেছে এবং তার ফলে তার নিজস্ব সমাজ – সংস্কৃতি অনেকটাই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে । ভারতের ঐতিহ্য , সংস্কার , সংস্কৃতি কেবলমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব ।

যে সামাজিক – সাংস্কৃতিক দর্শন আমাদের সামগ্রিক কর্মপ্রক্রিয়া তথা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে সেটি হল আমাদের সংবিধান । ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ভারত হল একটি সার্বভৌম , গণতান্ত্রিক , প্রজাতন্ত্র । এই সংবিধান নিম্নলিখিত সামাজিক – সাংস্কৃতিক ধারণাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকদের সামাজিক , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা করবে , তাদের চিন্তা , ভাবপ্রকাশ , বিশ্বাসে গুরুত্ব দান , মর্যাদা ও সুযোগের সমতা বজায় রাখবে । এর জন্য প্রয়োজন সৌভ্রাতৃত্ববোধ , যার মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্র তৈরি হবে । বিদ্যালয়ে সমস্ত কিছু ক্রিয়াকলাপই সামাজিক – সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ঘটে থাকে । ঠিক সেইরকম স্বাধীনতা । ন্যায় , সমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ এইগুলি আমাদের সংবিধানের বীজমন্ত্র । বিভিন্ন কমিটি ও কমিশনের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে সামাজিক – সাংস্কৃতিক অবস্থাগুলি বাদ দিয়ে কখনোই শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে না । ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় একটি অন্যতম দিক হল একটি ধর্মনিরপেক্ষ , গণতান্ত্রিক , প্রজাতন্ত্র স্থাপনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুরূপভাবে সংগঠিত করতে হবে । এই ধরনের শিক্ষা শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন সুঅভ্যাস , দৃষ্টিভঙ্গি , গুণাবলি ইত্যাদি সৃষ্টি করে ।

মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন পাঠক্রমের শিক্ষাতাত্ত্বিকতার সমাজ – সাংস্কৃতিক দিকটিকে গুরুত্ব প্রদান করেছে । কমিশন বলেছেন , শিক্ষা উপযুক্ত অভ্যাস , দৃষ্টিভঙ্গি , মনোভাব ও চারিত্রিক গুণাবলির জন্ম দেবে যার দ্বারা নাগরিকদের গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের উপযোগী করে তোলা যাবে । শিক্ষা সামাজিক – সাংস্কৃতিক প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে একটি বিস্তৃত জাতীয় ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলবে ।

পাঠক্রমের শিক্ষাতাত্ত্বিক দিকের সমাজ – সাংস্কৃতিক দিকটি সমাজে সকলের আশা আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরে এবং সকল সময়ই ওই সমাজে সামাজিক জীবনযাত্রা কাঙ্ক্ষিত সেই সম্পর্কে উল্লেখ করে থাকে । শিক্ষা সকল সময় দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দান করে । প্রথমটি হল : সাংবিধানিক মূল্যবোধগুলিকে গুরুত্ব প্রদান এবং তার সঙ্গে সঙ্গে সেই মূল্যবোধগুলিকে সূক্ষ্ম তার প্রেক্ষিতে বিচারের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য করে তোলা । আবার সামাজিক মূল্যবোধ বলতে শিক্ষা যে কেবল একটি সমাজের মূল্যবোধগুলিকে তুলে ধরে তা নয় সে সামগ্রিক সামাজিক কল্যাণের প্রেক্ষিতে যে মূল্যবোধ বর্তমান তাদের গুরুত্বকেও তুলে ধরে । যেমন — মানবাধিকার ও শিশু – অধিকার সংক্রান্ত দলিলগুলি কখনোই কোনো নির্দিষ্ট সমাজ ব্যবস্থার আঙ্গিকে নয় , বিশ্বজনীনতার প্রেক্ষিতে প্রযুক্ত হয় ।

যে সমস্ত সামাজিক – সাংস্কৃতিক বিষয়গুলির উপর শিক্ষাভাবনা গুরুত্ব পেয়েছে সেগুলি হল—

1. সাম্য – মর্যাদার সাম্য এবং সকলের সমান সুযোগ দান ।

2. স্বাধীনতা — চিন্তা , ভাবপ্রকাশ , বিশ্বাস এবং অন্যান্য মূল্যবোধকে গুরুত্বদান ।

3. মানবিক স্বাতন্ত্র্য — এক্ষেত্রে বিভিন্ন যুক্তির উপর ভিত্তি করে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা ও মতপ্রকাশের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ।

4. কর্মের স্বাতন্ত্র্য এক্ষেত্রে যে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হল—

( i ) পছন্দের স্বাধীনতা ।

( ii ) কোনো সিদ্ধান্তগ্রহণে স্বাধীনতা ।

( iii ) কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা । শিক্ষার মাধ্যমে এই দিকগুলি গুরুত্ব পেয়েছে ।

5. অন্যান্যদের প্রতি সহমর্মিতা ও সম্মান প্রদর্শন কেবল নিজের সুখ ও স্বাতন্ত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে চলে না সকলের যাতে সামাজিক সুখ লাভ হয় সেদিকেও গুরুত্ব দেয় ।

6. ন্যায়বিচার – সামাজিক , সামাজিক , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ।

Related posts:

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবন কথা
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী : 2024
চন্দ্রযান-3 : চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ ভারত
GENERAL STUDIES : TEST-2
GENERAL STUDIES : 1
কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স: 8ই সেপ্টেম্বর
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
তপনের জীবনে তার ছোটো মাসির অবদান আলোচনা করো।
সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝ ?
আলোকরশ্মিগুচ্ছ বলতে কী বোঝায় ? এটি কয়প্রকার ও কী কী ?
একটি সাদা কাগজকে কীভাবে তুমি অস্বচ্ছ অথবা ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যমে পরিণত করবে ?
ঈষৎ স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অস্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বচ্ছ মাধ্যম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
অপ্রভ বস্তুও কি আলোর উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে?
বিন্দু আলোক - উৎস কীভাবে পাওয়া যেতে পারে ?
বিন্দু আলোক - উৎস ও বিস্তৃত আলোক - উৎস কী ?
অপ্রভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
স্বপ্নভ বস্তু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
দিনেরবেলা আমরা ঘরের ভিতর সবকিছু দেখতে পাই , কিন্তু রাত্রিবেলা আলোর অনুপস্থিতিতে কোনো জিনিসই দেখতে পা...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page